ছিলেন না থ্রি মাস্কেটিয়ার্স। তোপসে আর জটায়ুকে রিল লাইফে রেখে রিয়েল লাইফে ফেলুদা টোটা রায়চৌধুরী-র সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী শর্মিলি রায়চৌধুরী। সাজগোজ থেকে ফিটনেস— কথা হল সব কিছু নিয়ে। লিখেছেন অন্বেষা দত্ত।
বাস্তব জীবনের ফেলুদা পোশাক বা সাজগোজ নিয়ে কতটা মাথা ঘামান? আড্ডার শুরুতেই প্রশ্নটা রেখেছিলাম পর্দার ফেলুদা অর্থাৎ টোটা রায়চৌধুরীর স্ত্রী শর্মিলির কাছে। দাম্পত্যের প্রায় দু’দশকের বেশি সময় পেরিয়ে টোটার সাজ নিয়ে যথেষ্টই ওয়াকিবহাল তাঁর ‘হোম মিনিস্টার।’ শর্মিলির কথায়, ‘ও ভীষণ ফ্যাশন-সচেতন মানুষ। নিজে কী পরবে না পরবে, খুব ভালো বোঝে। ড্রেস জুতো হেয়ারস্টাইল সব কিছু নিয়েই ও ভীষণ টিপটপ। কখনও ওর জন্য শপিং-এ গেলে অনেক কিছু মাথায় রাখতে হয়। নিজের সাজের ব্যাপারে ও এতটাই খুঁতখুঁতে। আজকাল যখন বুঝতে পারি না কোনটা কিনব, তখন ভিডিও কল করে দেখিয়ে নিই!’ পোশাক পছন্দের ক্ষেত্রে আর একটা জিনিসও মাথায় রাখেন টোটা। শর্মিলির কাছে জানা গেল, ‘যেমন এখন ফেলুদা করছে বলে সব কিছু ফেলুদার মতোই। অর্থাৎ এখন বেশি রংচঙে পোশাক পরবে না। আজকের শ্যুটেই দেখুন না সব আর্দি হালকা রং ও বেছে নিয়েছে।’
এবার প্রশ্ন সরাসরি টোটা রায়চৌধুরীর কাছে। ফেলুদা হয়ে তাহলে এখন কতদিন থাকবেন? ‘হা হা হা! (দরাজ হাসি)। খুব উজ্জ্বল রং বা আমার বয়সোচিত যেটা নয়, তেমনটা কিন্তু আমি এমনিতেও পরি না। ফ্যাশনেবল হতে চাই বলেই কিছু একটা পরতে হবে, সেটা একেবারেই নয়। আজকাল পোশাকের ক্ষেত্রে প্রথম দেখি সেটা আরামদায়ক কি না। তারপর দেখি যে ফ্যাব্রিকটা পরছি, তা আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই কি না এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বয়সের সঙ্গে সেটা যাচ্ছে কি না। এই তিনটে জিনিস মাথায় রেখে চলি। আর ফেলুদা হয়ে থাকার প্রসঙ্গটা আলাদা। আমরা এখানে সব কিছু এত কম্পার্টমেন্টালাইজ করতে পারি না। একজন অভিনেতা যাঁর সাম্প্রতিক কোনও কাজ মুক্তি পেয়েছে, তাঁকে দর্শক ওই সাজেই সবসময় দেখতে চান। আইকনিক চরিত্র করার ক্ষেত্রে এই ঝক্কি থাকবেই। আমাকে মানুষের আবেগটা বুঝতেই হবে, অন্তত প্রথম সাত-দশ দিন! তাই ফেলুদার প্রচারে বা মুক্তির সাত-দশদিনের মধ্যে সতর্ক থাকি— যে এমন কিছু পরে জনসমক্ষে যাব না যাতে মানুষের ভাবাবেগে আঘাত লাগে।’
পার্টি বা বিয়েবাড়ি যাওয়ার সময় দু’জনের কী ধরনের প্ল্যানিং থাকে সাজগোজ করার? টোটার কথায়, ‘প্ল্যান কিছু করি না। বয়স যখন কম ছিল, ২০-৩০-এর কোঠায়, তখন মনে হতো, এমন কিছু পরব যাতে সবার থেকে আলাদা দেখতে লাগে। এখন মনে হয়, আমাকে যেন আলাদা না লাগে! যেন আলাদা করে না দেখে। শুধু এক কোণায় দাঁড়িয়ে থাকব! হা হা হা। তবে যে অনুষ্ঠানে যাচ্ছি তার গুরুত্ব এবং মুড বুঝে অবশ্যই পোশাক পরি। বাঙালি বিয়েবাড়িতে পাঞ্জাবি পাজামা, রিসেপশনে ফর্মালস। শীতকালে স্যুট বা শাল। গরমকালে হলে সেমি ফর্মালস। ফর্মালসও ভালো লাগে আমার। একটু নিচু তারে বাঁধা আভিজাত্য পছন্দ আমার।’
শর্মিলির কথায়, ‘একসঙ্গে যাচ্ছি বলে যে খুব প্ল্যান করে সাজি তা নয়। তবে কোঅর্ডিনেটেড হয়ে যায় কখনও। আমি নানারকম শাড়ি পরতে ভালোবাসি। বিয়েবাড়িতেও ভালো শাড়ি পরি। আর ওর সঙ্গে গেলে তো লোকে একটু নোটিসও করে! তাই ট্র্যাডিশনাল সাজব না ওয়েস্টার্ন সাজব, তার একটা প্ল্যানিং থাকে।’
যখন আলাদা আলাদা অনুষ্ঠানে যেতে হয়, তখন সাজগোজ নিয়ে দু’জনে দু’জনকে কী টিপস দেন? শর্মিলির বক্তব্য, ‘ও যখন কোথাও যায়, তখন আমায় অবশ্যই শেষে একবার জিজ্ঞেস করে নেয়, ‘দেখো ঠিকঠাক আছে তো সব?’ তখন একটা দুটো টিপস দিলাম হয়তো। যেমন চুলটা ঠিক করো, বা স্যুটের সঙ্গে হ্যাঙ্কি, টাই, জুতোটা যাচ্ছে কি না, এইরকম আর কি। আমি যখন সেজে কোথাও যাই, ও সাধারণত বই বা মোবাইল হাতে হয়তো কিছু পড়ছে। তখন আমাকেই জিজ্ঞেস করতে হয়, ‘হ্যাঁ গো, ঠিক লাগছে আমায়?’ তাতে বলে, ‘ইউ অলওয়েজ লুক গুড!’ তাই সেভাবে আলাদা করে টিপস হয়তো দেয় না। কখনও বলে দেয়, ‘এটার সঙ্গে অন্য একটা কিছু পরলে কি ভালো লাগত? তুমি দেখে নাও! ওই পর্যন্তই!’
পোশাকের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় কী? শর্মিলির কাছে শাড়িই প্রিয়। বললেন, ‘সবসময় পরতে পারি না ঠিকই। কিন্তু শাড়ি নিয়ে আমি খুবই প্যাশনেট। আমাদের একটা শাড়িভক্তদের গ্রুপও আছে।’ টোটাকে কোন পোশাকে দেখতে তাঁর ভালো লাগে? ‘টি শার্ট জিনস বা শার্টের সঙ্গে জিনস। ভীষণ ক্যাজুয়াল কিন্তু স্মার্ট। আর অনুষ্ঠানে ফর্মালস বা বন্ধগলা জ্যাকেট। ও যা পরে, সবই ওকে মানায়।’ টোটার নিজের কাছে প্রিয় পোশাক কী? ‘চিনোস খুব ভালো লাগছে আজকাল। সঙ্গে কটন শার্ট। আর এই গরমকালে কটন বেসড পাঞ্জাবিও পরি, সঙ্গে জিনস। তবে পাঞ্জাবির ফিটিং খুব ভালো হতে হবে। ফিট নিয়ে আমার খুঁতখুঁতানি আছে।’ স্ত্রীকে কোন পোশাকে দেখতে পছন্দ করেন? ‘ওকে সব ধরনের পোশাকেই মানায়। তবে শাড়ির প্রতি ওর যে ভালোবাসা দেখেছি, শাড়ির ব্যাপারে খোঁজখবর পড়াশোনা, খুবই নিষ্ঠা সহকারে ও এগুলো করে। শাড়িতেই ওকে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে।’
ফেলুদার শাণিত দৃষ্টি এবং ক্ষুরধার বুদ্ধির ছাপ থাকবে তাঁর পোশাকেও। সে পোশাক কখনওই উচ্চকিত নয়। তাই সাঁঝরূপ বুটিক থেকে চতুষ্পর্ণীর ফ্যাশন শ্যুটে টোটা বেছে নিয়েছিলেন হালকা আর্দি কালার । তাঁর সঙ্গে মানিয়ে সফট কালারে সেজেছিলেন শর্মিলিও।
টোটা রায়চৌধুরীর সঙ্গে আড্ডা, সেখানে শরীরচর্চা নিয়ে কথা হবে না, তা তো হয় না। সদ্য ছিল বিশ্ব যোগ দিবস। সেই সূত্রে অবধারিতভাবেই প্রশ্ন রেখেছিলাম, শ্যুটিং-প্রোমোশনসের এত ব্যস্ততা সত্ত্বেও শরীরচর্চা কখনও মিস হয় না। কীভাবে এটা সম্ভব? টোটা বললেন, ‘আমার কাছে এটা দু’বেলা স্নান করার মতো। ওটা যেমন আমাকে করতেই হবে, তেমনই শরীরচর্চা অন্তত ২০-২৫ মিনিট করে হলেও রোজ আমাকে করতেই হবে। এর কোনও অন্যথা হবে না। অনেকেই বলেন, করে উঠতে পারি না। আমি তাঁদের বলব, নিজের শরীরের থেকে আর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ নেই। শরীরই যদি না রইল, তাহলে পরিশ্রম করছি কীসের জন্য? একটা সময়ে পৌঁছে যদি ডাক্তারের চেম্বারে বা হাসপাতালের বেডে আমায় শুয়ে থাকতে হয়, তাহলে দৌড়ঝাঁপ করছি কেন?’
শর্মিলি নিজেকে মেনটেন করতে কী করেন? ‘আমাদের বাড়িতে খাওয়াদাওয়া ভীষণ নিয়ম মেনে হয়। বাঙালি খাবারই খাই। স্যুপ বা সেদ্ধ নয়! আমার মা অসাধারণ রান্না করেন। টোটা সেগুলো খেতে খুব ভালোবাসে। কম তেলে রান্না হয়। তবে ঘি খাই আমরা। কারণ ঘি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ঠিক সময়ের ব্যবধানে খাওয়াদাওয়া করি। আমার মেয়েও শিখে গিয়েছে। বাড়িতে রান্না করা খাবারের পাশাপাশি ফল, শাকসবজি ইত্যাদি বেশি খাওয়া হয়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নন-ভেজ খাওয়া কমিয়ে দিচ্ছি। ভেজ খাবারের দিকে ঝোঁক বাড়ছে। আর বাড়িতে এক্সারসাইজ মাস্ট। রোজ না হলেও অন্তত পাঁচ দিন অবশ্যই করি। ট্রেডমিলে বা বিকেলে বাইরে হাঁটা এবং যোগাসন। টোটার রেজিমটা অবশ্য একদম আলাদা। আমরা আমাদের মতো করি। মেয়েও খুব ফিটনেস ফ্রিক। এক্সারসাইজ না করে ও ব্রেকফাস্ট করবেই না।’ স্কিনের যত্নে আলাদা করে সময় দেন কি শর্মিলি? ‘একেবারেই নয়। আমাদের খাওয়াদাওয়া এত সাধারণ, তাতেই সব হয়ে যায়। সঙ্গে জাঙ্ক ফুড একদম বাদ। স্কিনের জন্য আলাদা করে কিছু করার সময়ও পাই না। শুধু রাতে ক্লেনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করি। এছাড়া কিচ্ছু নয়।’