বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
চারুপমা
 

বোহো   বিপ্লব

ফ্যাশনে বোহো লুক কতটা আম আদমির? আদৌ কি তা বদলে দিতে পারে আপনার আত্মবিশ্বাস? লিখেছেন স্বরলিপি ভট্টাচার্য। 

দম মারো দম...। লালচে গগলস। কপালে লম্বাটে তিলক। খোলা চুল। গলায় ফুলের মালা সঙ্গে রুদ্রাক্ষও। হাতে গাঁজার কলকে নিয়ে পর্দা জুড়ে জিনাত আমন লিপ মেলালেন আশা ভোঁসলের গানে। ১৯৭১-এ মুক্তি পাওয়া বলিউডি ছবি ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’-এর এই গান সিনেমার পড়ুয়াদের সিলেবাসে থাকবেই। শুধু সিনেপ্রেমী নন, যাঁরা ফ্যাশন নিয়ে চর্চা করেন তাঁদেরও পাঠক্রমে থাকবে জিনাতের ভিন্ন ঘরানার ওই লুক। বোহেমিয়ান লুকে জিনাতকে দেখে সে সময় প্রেমে পড়েননি, এমন তরুণ কমই ছিলেন। আজও অন্য আবেদন তৈরি করে জিনাতের ওই স্টাইলিং। 
বোহো ফ্যাশনে গা ভাসিয়েছেন বহু সেলেব। কখনও রেড কার্পেটে, কখনও অ্যাওয়ার্ড মঞ্চে, কখনও বা ফটোশ্যুটে তাঁদের বোহো লুকে সাজিয়েছেন ডিজাইনাররা। কিন্তু এই লুক কতটা আমআদমির? বোহো ফ্যাশনের সংজ্ঞা কতটা ব্যক্তিসত্তায় প্রভাব ফেলে? কতটা বদলে দিতে পারে আপনার আত্মবিশ্বাস?

ফিরে দেখা
বোহেমিয়ান শব্দটি ছোট করে বোহো-র উৎপত্তি। ঠিক যেন আদরের ডাকনাম। ১৯৬০-’৭০ দশকে হিপিদের পোশাক, লাইফস্টাইলের ধরনই বোহেমিয়ান আখ্যা পেয়েছিল। তাঁদের নিয়ে সে সময় সমাজে অনেক কৌতূহল ছিল। প্রতিটি ক্ষণে যেন জীবন বেঁচে নেওয়ার, অধিকার বুঝে নেওয়ার, ইচ্ছেপূরণের গল্প ছিল তাঁদের দৈনন্দিনে। খুব যে চিন্তাভাবনা করে তাঁরা পোশাক নির্বাচন করতেন তা হয়তো নয়। কিন্তু খোলা খাতার মতো জীবনের পাঠ ছিল বলেই হয়তো তাঁদের বেশভূষাতেই ধরা পড়ত স্বাধীন হওয়ার ডাক। বোহেমিয়ান আসলে একটা অ্যাটিটিউড। কোনও ফ্যাশনেবল মুভমেন্ট নয়। 
ইতিহাস বলে, প্যারিসের হিপি মুভমেন্ট থেকে বোহেমিয়ান ফ্যাশনের উৎপত্তি। আবার আজকের চেক প্রজাতন্ত্র অর্থাৎ অতীতের বোহেমিয়া থেকে আসা বোহেমিয়ানদের থেকেও অনুপ্রাণিত এই স্টাইলিং। সেজে ওঠার অলিন্দে এই দুই ধারা মিলেমিশে গিয়েছে। ছয়ের দশকে হঠাৎ করেই ঝোড়ো হাওয়ার মতো হাজির হয়েছিল বোহো ফ্যাশন। বদলে দিয়েছিল স্টাইলিংয়ের চেনা সংজ্ঞা। কোনও অন্ধকার, কোনও দুঃখ, হতাশা নেই এই সাজে। আছে শুধুই আনন্দের উদ্‌যাপন। 

স্বাধীন হওয়ার ডাক
বোহো ফ্যাশন একাধারে বহু সংস্কৃতির মিশ্রণ। যে কোনও আউটফিট দিয়েই বোহেমিয়ান লুক তৈরি করা সম্ভব যদি ঠিক মতো স্টাইলিং করা যায়। সাজের মধ্যে যেন থাকতে হবে ছক ভাঙার নেশা। একেই স্বাধীনতা বলে ব্যাখ্যা করলেন ডিজাইনার অভিষেক রায়। তাঁর কথায়, ‘বোহো ফ্যাশন বলতে বুঝি ফ্রি ফ্লোয়িং। যে ফ্যাশনের মধ্যে স্বাধীনতা আছে। মিক্সচার অব কালচার, লাইভলিহুড। মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ মিলে একটা বোহো ফ্যাশন তৈরি হয়। ব্যক্তিগতভাবে যখন স্টাইলিং করি তখন বোহো লুক তৈরি করতে ভালোই লাগে। আমি বহু রিসাইকেলড জিনিসও ব্যবহার করে বোহো লুক তৈরি করেছি। ধরুন, মডেলকে পুরনো জামদানি শাড়ি ড্রেপ করে হারেম প্যান্ট দিয়ে পরিয়েছিলাম। সঙ্গে ক্রপ ব্লাউজ আর রুপোর গয়না— সব মিলিয়ে গোটা সাজ। এর মধ্যে মিক্সচার আছে।’ 
বোহো লুক আসলে ফ্যাশনের নিজস্ব সংজ্ঞার খুব একটা ধার ধারে না, মনে করেন ডিজাইনার অনুশ্রী মালহোত্রা। তিনি বললেন, ‘বোহো লুক হল ফ্ল্যামব্লয়েন্ট, ক্যাজুয়াল ফ্যাশন। সবসময় যে এই লুক ফ্যাশনের নিয়ম মেনে চলে, তা নয়। বোহো লুক তৈরি করতে গিয়ে যেটা দেখতে ভালো লাগবে সেটাই ফলো করি। গো ইজি কাইন্ড অব আ ফ্যাশন— যা খুব স্টাইলিশ। এই লুক ক্রিয়েশনে বয়সেরও বাধা থাকে না। একজন ৬০ বছরের মহিলাও বোহো ফ্যাশন করতে পারেন যদি তিনি লেয়ারিং পছন্দ করেন। স্কার্টের সঙ্গে টিউনিং করতে পারেন। ক্রপ টপের সঙ্গে প্যারালাল প্যান্ট অথবা নীচে একটা হারেম প্যান্ট পরে উপরে একটা শ্রাগ দিয়ে ডবল লেয়ার করলেই আপনি তৈরি।’ 

রং রঙিন
বোহেমিয়ান ফ্যাশন মানেই কিন্তু ওয়েস্টার্ন আউটফিট নয়। বারো হাতের আদরেও ধরা দিতে পারে বোহো লুক। অনুশ্রী বললেন, ‘শাড়ি এখন লেয়ার করে বিভিন্ন স্টাইলে পরা হয়। লং জ্যাকেট দিয়ে পরুন।’ একমত অভিষেকও। ‘শাড়ি ড্রেপ করে টপ দিয়ে পরুন। ধোতি প্যান্টের উপর শাড়ি পরুন। সেটাও বোহো ফ্যাশন হতে পারে’, বললেন তিনি। বোহো লুকে আপনাকে দেখলে ভিতরের আমিটার কনফিডেন্সের খবর পাবেন সকলে। তাই পোশাক পছন্দ করার সময় রঙের দিকে মনোযোগ দিতেই হবে। প্যাস্টেল শেড, ঐতিহ্যবাহী রং ব্যবহার করুন। লাল, নীল, সবুজ, সাদার মতো ট্র্যাডিশনাল রঙে সাজান নিজেকে। অনুশ্রীর মতে, বোহো লুকে রং খুব গুরুত্বপূর্ণ। পোশাকে উজ্জ্বল রং থাকবেই। প্যাস্টেল শেডস এক্ষেত্রে দূরে রাখলেই ভালো। বিভিন্ন ধরনের অ্যাকসেসরিজ ব্যবহার করুন। বড় রঙিন সানগ্লাস, এমব্রয়ডারি করা স্লিং ব্যাগ, ব্যান্ডানা, বেল্ট হবে আপনার সাজের সঙ্গী। অবশ্যই প্রাকৃতিক টেক্সটাইল ব্যবহার করুন। সুতি, মসলিন, সিল্ক দিয়ে তৈরি পোশাক বোহেমিয়ান ফ্যাশনের গোড়ার কথা। চেক প্রজাতন্ত্রের ঐতিহ্যবাহী ফ্লোরাল এবং এথনিক প্যাটার্ন এমব্রয়ডারি করা থাকত বোহেমিয়ানদের পোশাকে। তাঁদের এই স্টাইলিংয়ে প্রকৃতিই প্রতীক। 

প্লাস সাইজ ম্যাটারস
ফ্যাশনের সঙ্গে আরামের সমানুপাতিক সম্পর্ক। বোহেমিয়ান লুক চাইলে আরাম মিলবে কি না, সেটাও জেনে নেওয়া জরুরি। অভিষেক মনে করেন, যাঁরা বোহেমিয়ান, যাঁরা ঘুরে ঘুরে বেড়ান, তাঁদের তো আরামদায়ক পোশাক পরতেই হবে। আমাদের গরমের দেশে তাই এই ধরনের লুক সবসময় আদর্শ। যাঁরা চেহারায় ওজনদার, চাইলেই যে কোনও ফ্যাশন তাঁদের আয়ত্তে থাকে না। কারণ তা দেখতে ভালো লাগে না। এই স্টাইলিংও কি শুধুই স্লিম ট্রিমদের জন্য? অভিষেকের উত্তর, ‘বোহো লুক সকলের জন্য। আমি তো বলব, বোহো ফ্যাশনে যে লেয়ারিং হয় সেটা প্লাস সাইজদের কার্ভস কভার করতে সাহায্য করে। ফলে নিশ্চিন্তে টিম আপ করুন।’
তবে যে কোনও জায়গায় যে কোনও পোশাক চলে না। এ তো ফ্যাশনের অ আ ক খ। এক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয় না। অনুশ্রীর মতে, ‘ফর্মাল পোশাকে বোহেমিয়ান ফ্যাশন চলে না। অফিশিয়াল কাজে খাপ খায় না। কোথাও বেড়াতে গেলেন বা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, রাতভর পার্টির জন্য এই লুক বেছে নিতে পারেন।’ আর অভিষেকের উপলব্ধি, ‘বোহো ফ্যাশন রেড কার্পেটেও দেখেছি। কিন্তু ঠিকঠাক টিমিং জরুরি। এই নির্দিষ্ট লুক কোন অনুষ্ঠানে পরছেন, সেই অনুষ্ঠানের মেজাজের সঙ্গে মানানসই কি না সেটা দেখে সাজতে হবে।’
ইতিহাস সাক্ষী, অভিজ্ঞরাও বলছেন, এই ধরনের ফ্যাশন কখনও পুরনো হয় না।  স্কার্ট, ড্রেসের সঙ্গে এথনিক টাচ আর ফ্ল্যাট স্যান্ডেল অথবা অ্যাঙ্কেল বুট দিয়ে স্টাইলিং করতে পারেন নিজেই। ফ্লোরাল অথবা এথনিক প্রিন্টের ফ্যাব্রিকের লং ড্রেস, ফ্লোয়িং ব্লাউজ থাকলেই কেল্লা ফতে! কিন্তু এই ধরনের সাজের জন্য সংগ্রহে কী কী রাখা প্রয়োজন দেখে নিন।  

ওয়ার্ড্রোব চেক লিস্ট
• এহেন ফ্যাশনের পিলার হল বোহো ড্রেস আর স্কার্ট। বিভিন্ন শেপ আর লেন্থ সংগ্রহে রাখুন। মনে রাখবেন, অ্যাসিমেট্রিকাল কাট হতে হবে। টাইট ফিটিং একেবারেই চলবে না। 
• ড্রেস তো সকলের পছন্দ নয়। সেক্ষেত্রে ফ্লেয়ারি প্যান্ট রাখতে পারেন। কটন, ডেনিম, মসলিন প্যান্ট পরুন ব্লাউজ এবং টিউনিক দিয়ে। কোনওটাই স্কিন ফিট হবে না।
• গরমের দিনে এথনিক প্যাটার্নের ঢেউ খেলানো শর্টস পরন। সঙ্গে লুজ ফিটিং টপ। কানে বড় দুল বা স্টেটমেন্ট রিং বদলে দেবে সাজ।  
• বোহো লুক পছন্দ করলে অবশ্যই আলমারিতে রাখুন বিভিন্ন ধরনের ডেনিম জ্যাকেট। রকমারি ব্যান্ডানা, হেড ব্যান্ড মুহূর্তে সাজে টুইস্ট আনবে। কখনও ঘাড়ে কখনও বা কবজিতে জড়িয়ে রাখুন ট্রেন্ডি স্কার্ফ। এলিগ্যান্স বাড়াতে ব্রোচ ব্যবহার করুন চুলে। ফলে এ সব উপকরণ আপনার মজুত থাকা চাই।
• প্ল্যাটফর্ম স্যান্ডেল পরলে সেটাই হোক আলঙ্কারিক। জুতোয় থাকুক ফুলের সাজ বা ঝুটো মুক্তোর গয়না। অথবা সহজ সমাধান ওয়েস্টার্ন বুট। এই লুকে যে কোনও ধরনের অ্যাকসেসেরিজ গুরুত্বপূর্ণ। গয়নার বাক্সে থাকুক রুপোর স্টেটমেন্ট রিং, টারকোয়েজ স্টোনের লম্বা দুল, পাখির পালক দিয়ে তৈরি ট্রেন্ডি গয়না।

11th     June,   2022
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ