বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
চারুপমা
 

মডেল: কৌশাম্বী চক্রবর্তী, দিয়া মুখোপাধ্যায় ও ইন্দ্রাণী পাল, ছবি: অরিজিৎ দত্ত, শুভাশিস পাচাল, পোশাক: রাহুল সর্দার, আয়োজক: মধুরিসা শীল, ব্যবস্থাপনা: রাজ বন্ধন, মেকআপ: মল্লিকা দাস, সুপ্রভা দাস, পম্পা, গ্রাফিক্স : সোমনাথ পাল

নখদর্পণ

এতটুকু নখের মধ্যে এতকিছু! হালফ্যাশনের নেল আর্ট নিয়ে লিখেছেন অন্বেষা দত্ত।

পূর্বকথা
মাঝেমধ্যেই দেখি এদিক ওদিক, ভারি সুন্দর জোড়া হাতের নখে কারুকাজের বাহার। যেমন নজরকাড়া নখ, তেমনই তাতে সূক্ষ্ম নকশার আঁকিবুকি। নেল আর্ট নাকি ভীষণ ট্রেন্ডি এ জমানার তরুণীদের কাছে। কিন্তু জানেন কি নখের এ নকশা হুট করে আজ জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে, এমন কিন্তু একেবারেই নয়। শোনা যায় মিশরে খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০-৩০০০-এ রমণীরা নখ রাঙাতেন হেনা দিয়ে। সেটা ছিল সামাজিক অবস্থানের সূচক, আবার কখনও মদির আহ্বানেরও। নিচুতলার রমণীরা দিতেন হালকা রং, উচ্চ শ্রেণির মহিলাদের নখে গাঢ় উজ্জ্বল রঙের ছোঁয়া। ব্যাবিলনিয়ায় আবার পুরুষরা নখে রং পরতেন কালো আর সবুজ কাজল দিয়ে। প্রায় একই সময়ে চীনে শুরু হয় নেলপলিশের প্রচলন। মৌচাকের মোম, ডিমের সাদা, জিলেটিন, ভেজিটেবল ডাই এবং আরবি আঠা দিয়ে তৈরি হতো এই নেলপলিশ। চীনারা নাকি এই মিশ্রণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নখ ডুবিয়ে বসে থাকত, তারপর সেগুলো শুকাত। গোলাপি থেকে লাল— নানা রং পাওয়া যেত উপকরণের উপরে নির্ভর করে। চীনের ঝৌ রাজারা এই নেলপলিশের উপরে সোনা বা রুপোর গুঁড়ো লাগাতেন আভিজাত্য বোঝাতে। মিং রাজাদের আমলে আবার বেশ লম্বা নখ রাখার চল ছিল। সেই নখ সোনা বা মণিমুক্তোখচিত নেল গার্ড দিয়ে সাজানো হতো! ভৃত্যরা সে নখের পরিচর্যা করত। জানা গিয়েছে, সে অর্থে নেল আর্ট-এর খোঁজ প্রথম মেলে ইনকা সভ্যতায়। দক্ষিণ আমেরিকায় ইনকারা তাদের নখ সাজাতে তার উপরে ঈগল আঁকত।
নখ নিয়ে ক্রমশ কৌতূহল বাড়তে বাড়তে মোটামুটি ১৭৭০ সাল নাগাদ তৈরি হল সোনা ও রুপোর ম্যানিকিওর সেট। ১৮০০-র দিকে পশ্চিমে এল এখনকার মতো ম্যানিকিওর করার চল। নখ নিয়ে নানা ভাবনা এগিয়েছে এভাবেই। নখ সাজানোর ফ্যাশন তাই এখনও রূপ বদলে চলছে। 
এযুগের নেল টেল
মেকআপ আর্টিস্ট আত্রেয়ী নন্দীর সঙ্গে কথায় কথায় জানা গেল নেল আর্টের হালহকিকত। মেকআপের পাশাপাশি নখে এই সূক্ষ্ম কাজ করার দক্ষতা তিনি অর্জন করেছেন নিজ আগ্রহে। নেল আর্ট কীভাবে হঠাৎ এত জনপ্রিয় হল? আত্রেয়ী বললেন, ‘হঠাৎ করে ২০২২-এ এসে নেল আর্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে এমনটা নয়। কলকাতায় একটা সময় ছিল, যখন শুধু বড় বড় সালঁয় নেল আর্টের শৌখিন ব্যবহার ছিল। সেটা ২০১৫-১৬ সাল। তখন নেল আর্ট করাতে খরচও লাগত অনেক।’ তাহলে নখের উপরের কারুকাজের চল বাড়ল কীভাবে? ‘২০১৫-১৬-য় সোশ্যাল মিডিয়ার প্রকোপ ততটা ছিল না। তাই লোকে ততটা জানতে পারত না। বছর গড়াতে গড়াতে এগুলো নজরে আসে। এখন আলাদা করে নেল পার্লার হচ্ছে,’ বললেন তিনি। আত্রেয়ীর মতো অনেকে ক্লায়েন্টের পছন্দমতো নেল আর্ট করে দিচ্ছেন বাড়িতে গিয়ে। তাঁর মতে, এত মানুষের কাছে একসঙ্গে যখন কোনও কিছু পৌঁছতে শুরু করে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার দরদাম কিছুটা কমে। ফলে অল্পবয়সি হোন বা মাঝবয়সি, সবারই নেল আর্টে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। কারণ এটা তাঁদের সাধ্যের মধ্যে।
‘মেয়েরা তো এমনিতেই সাজতে ভালোবাসেন। তাই নতুন কিছু করলে পরিচিতদের মধ্যেও তা নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়। তখন সেটা আরও জনপ্রিয়তা পায়। নেল আর্টেও তাই হয়েছে,’ বললেন তিনি।
কীভাবে নখনকশা
‘কখনও একটা এক্সটেন্ডেড পার্ট নখের সঙ্গে যোগ করে করা হয়, কখনও আবার জেল ওভারলে দিয়েও করা হয়। অনেকে আছেন যাঁদের খুব সুন্দর নখ এবং তাঁরা সেটা মেনটেন করেন, তাঁদের নিজের নখেই নেল আর্ট করা যায়। সেটাকেই জেল ওভারলে বলা হয়। সেটা একমাস মতো থাকে। তবে নখ তো স্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। যখন একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত বাড়ে, তখন আবার সেটার উপরে রিফিল করান অনেকে। কারণ ডিজাইনটা তাঁদের পছন্দের হয়ে যায়। অনেকে আবার অন্য নকশাও খোঁজেন। তবে সেই দলে কম তরুণীই আছেন বলা যায়,’ বলছিলেন আত্রেয়ী।
এই ধরনের নেল আর্ট এখন মহিলাদের কাছে একটা স্টাইল স্টেটমেন্ট। তাঁর কথায়, ‘এখন গ্রুমিং শুধু বিশেষ দিনের কথা ভেবে কেউ করে না। প্রত্যেকে চান, তাঁকে দেখতে ভালো লাগুক। তাই মুখ হাত পায়ের চর্চার সঙ্গে নেল আর্টেও নজর পড়ছে সবার। আর এটা করায় মনে একটা আনন্দও হয়। নিজেকে সুন্দর রাখা এবং সুন্দর দেখানোর মধ্যে যে ভালোলাগা তৈরি হয়, সেটাই খোঁজেন সবাই।’
নেল আর্টের জন্য এখন খরচ কীরকম? ‘দু’হাতের দশ আঙুলেই যদি করাতে চান, সালঁ-র তুলনায় এমনিতে কোনও এক্সপার্ট কিছুটা কমে করাতে পারবেন। দু’হাতের জন্য অন্তত ১ হাজার টাকা মতো খরচ পড়ে। নেল আর্টের পুরোটাই দাঁড়িয়ে আছে ডিজাইন বা নকশার উপরে। একটা ছোট জায়গায় ভীষণ সূক্ষ্ম কাজ। যত সূক্ষ্ম, তার উপর নির্ভর করে খরচ। দেড়-দু’ঘণ্টা সময় লাগে দশ আঙুলে কাজ করতে,’ বললেন আত্রেয়ী। কী ধরনের আর্ট জনপ্রিয়? ‘দু’টি এক্সটেনশন খুব জনপ্রিয়। একটা হল অ্যাক্রিলিক এক্সটেনশন। বেশিদিন রাখতে এটা অনেকেই চান। ৩০ দিন বা তার কিছু বেশি সময় পর্যন্ত থাকে এটা। যার নখের যেমন গ্রোথ, তার উপর নির্ভর করে কতদিন থাকবে। তারপর কেউ রিফিলিং করান, কেউ রিমুভ করে অন্য ডিজাইনে যান। এছাড়া জেল ওভারলেও জনপ্রিয়। ব্রাইডালে অনেকে জেল ওভারলে চান।’
ঝুঁকি কী কী
‘কিছু খারাপ দিক আছে,’ বললেন আত্রেয়ী। তাঁর দাবি, ‘বাইরে থেকে কোনও কৃত্রিম জিনিস যখন শরীরে প্রয়োগ করা হচ্ছে, তার ভালো দিক খারাপ দিক দুই-ই থাকে। নেল আর্টেও তা খাটে। কোন ব্র্যান্ডের জিনিস ব্যবহার করা হচ্ছে, তার উপর অনেকটাই নির্ভর করবে নেল বেড কতটা সুস্থ থাকবে।’ আত্রেয়ী জানালেন, তিনি সবসময় নজর রাখেন কার্সিনোজেনিক ফ্রি পণ্য ব্যবহারের দিকে। নেল বেড ঠিক রাখতে কিছু তথ্য দিয়ে রাখলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘এক মাস অন্তর পরপর তিনবার কেউ যদি রিফিলিং করান, তারপর আবার দু’মাস একটা গ্যাপ দেওয়া খুব দরকার। কারণ প্রাকৃতিকভাবে নেল বেড-কে হাঁফ ছাড়তে দিতে হয়। নেল আর্টে নখ ঘষতে হয়। এইভাবে বার দুই তিন ঘষা হয়ে গেলে নেল বেড পাতলা হয়ে যায়। তাই তারপরে অন্তত দু’মাস বিরতি দেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে নখ নষ্ট হতে পারে। তাছাড়া কোনও সাইড এফেক্ট নেই। তাই এটা ওভারডু করা একদমই উচিত নয়।’ 
তিনবার রিফিলিং করার পরেও গ্যাপ না দিয়েই কেউ করাতে চাইলে? আত্রেয়ী বললেন, ‘নেল বেড দেখে তাঁকে জানিয়ে দিই তখন করা যাবে না। অনেকের ক্যালশিয়ামের অভাব থাকে। নখ তাড়াতাড়ি ভাঙে, বা নখ পাতলা, বা কারও ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা ব্রোকেন এন্ডস থাকে। সেক্ষেত্রে সমস্যা, তাঁদের জন্য মোটেই উপযোগী নয় নেল আর্ট।’ 

4th     June,   2022
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ