বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
চারুপমা
 

ছাতার মাথা

কখনও তুলির কাজে রঙিন প্রজাপতি, কখনও কাঁথা সেলাইয়ে ক্রিসমাস ট্রি। ছাতার উপর এহেন বাহারি নকশা ফ্যাশন সরণির আলোচিত সদস্য। সংগ্রহে রাখার আগে জেনে নিন হাল হকিকত।  

বাবা মাথার উপর ছিলেন ছাতার মতো। তিনি চলে যাওয়ার পর অভাব বুঝতে পারছে গোটা পরিবার। বাবা বা অন্য কোনও বয়ঃজ্যেষ্ঠ প্রিয়জন সম্পর্কে এহেন রূপক ব্যবহারে অভ্যস্ত বাঙালি। যে কোনও বিপদে ছাতার মতো আগলে রাখতেন তাঁরা। আক্ষরিক অর্থেও ছাতা তো আগলেই রাখে। ধরুন, তাপমাত্রা  ঘোরাফেরা করছে ৩৬ থেকে ৪০ ডিগ্রির মধ্যে। দিনের বেলা বাইরে বেরলে ছাতা সুরক্ষাকবচ। আবার ঘনঘোর বাদলা দিনেও মাথা বাঁচায় এই ছাতাই। 
এক সময় জনপ্রিয় ছিল ‘দাদুর ছাতা’। কালো, লম্বা। এরপর একরঙা বা প্রিন্টের চাহিদা সামলেছে বাজার। আবার থ্রি ফোল্ড শৌখিন সাজেও ছাতা ধরে গিয়েছে ভারী ব্যাগের   অন্দরে। কখনও আবার লেস বা নকশা পাড়ের ফ্রিল লাগানো ছাতার চাহিদা তৈরি হয়েছে। ইদানীং ডিজাইনার পোশাকের ছোঁয়া লেগেছে ছাতাতেও। হ্যান্ডপেন্ট বা নানা সুতোর কাজের নকশা ছাতার উপরে এখন দেখা যাচ্ছে যা মন কেড়েছে বিভিন্ন বয়সি ক্রেতার। ডিজাইনার এসব ছাতাই এখন হয়ে উঠেছে স্টাইল স্টেটমেন্ট।
কখনও ছাতার উপর কাঁথাস্টিচে সাজানো গ্রামবাংলা, কখনও ভরাট গুজরাতি কাজ, কখনও ডিজিটাল প্রিন্ট, কখনও বা সরু তুলিতে ফুটে ওঠা গাছের ডালে পাখি দম্পতি। কড়া রোদ্দুর হোক বা প্রবল বর্ষা, তুমুল ব্যবহারেও তা নাকি নষ্ট হবে না। অন্তত এমনটাই দাবি করছেন এই ধরনের ছাতার কারবারিরা। চলতি দোকানে সাবেকি ছাতার জোগানই বেশি। তবে ডিজাইনাররা এই ধরনের নকশাদার ছাতা তৈরি করে অনলাইনে ব্যবসা করছেন।
নকশাদার ছাতা তৈরি হয় কীভাবে?
চেতলার পামেলা চৌধুরী কর্পোরেট সংস্থায় কর্মরতা। তাঁর মা রুনা চৌধুরী সাত, আট বছর আগে এই ধরনের ডিজাইনার ছাতা তৈরি শুরু করেন। ইদানীং মায়ের ব্যবসা পামেলাই সামলাচ্ছেন। বুটিকের নাম ‘হার মাদার’স ক্রিয়েশন’। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে লাইভে প্রোডাক্ট দেখিয়ে ব্যবসা করেন তিনি। ছাতার উপর এমব্রয়ডারি তাঁদের বিশেষত্ব। কাঁথা স্টিচ, হেরিংবোন, কাশ্মীরি, গুজরাতি তো বটেই কোনও কোনও সময় আর্টিফিশিয়াল মিরর ওয়ার্কের কাজও হয়। কীভাবে এই কাজের শুরু? পামেলা বললেন, ‘মা খুব স্ট্রাগল করেছেন। অনেক ধরনের ব্যবসা করেছেন। মায়ের হাতের কাজ, সেলাই খুব ভালো বরাবরই। রুমালে সেলাই করত, শাড়িতে এমব্রয়ডারি করত। এসব করতে করতে হঠাৎ মনে হয়েছিল, ছাতার উপর সেলাই করলে কেমন হয়? সেখান থেকেই শুরু। প্রথমে সাধারণ ছাতায় কাজ শুরু করে। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ ছাতার কাপড়ে সেলাই করলে সমস্যা হচ্ছে। পারফেক্ট হচ্ছে না। তারপর থেকে ব্র্যান্ডেড ছাতার উপর আমরা কাজ করি। ছাতা আমাদের নিজস্ব প্রোডাকশন নয়, ব্র্যান্ডেড। কোয়ালিটি মেনটেন করার জন্য আমরা নিজেরা প্রোডাকশন করি না।’ নকশাদার ছাতা তৈরি কীভাবে হয়? ‘ছাতা কিনে প্রথমে শিক থেকে কাপড়টা খুলে ফেলা হয়। এরপর কাপড়ের উপর স্কেচ হয়। তারপর সেলাই করে রিবাইন্ডিং হয়। কখনও মধুবনী প্রিন্ট কিছুটা থাকে। তার উপর সেলাই হয়। অনেকের পরিশ্রম আছে এর মধ্যে।’ অনলাইনে ডিজাইনার ছাতা নিয়ে বাঁকুড়া থেকে ব্যবসা করছে ‘নেসেসিটি ই-স্টোর’ও। সংস্থার তরফে শেখ সারজু বললেন,‘আমরা চার বন্ধু মিলে একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছি। যেখানে গ্রাম বাংলার বিভিন্ন শিল্পীর কাজ আমরা তুলে ধরি। ডোকরা, টেরাকোটা, পটচিত্র থাকে। ডিজাইনার ছাতাও রয়েছে। আমাদের শিল্পীর নাম মেঘনা। পড়াশোনা করছেন। বাঁকুড়াতেই থাকেন। আমরা প্রত্যেকেই কলেজ পড়ুয়া। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি। ফোর্থ ইয়ার চলছে।’ তিনি জানালেন, সব বয়সের ক্রেতার মধ্যেই এই ছাতার চাহিদা রয়েছে। ওয়েদার কোটিং রং ব্যবহার করে আঁকা হয়। সে কারণে তাড়াতাড়ি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। 
ডিজাইনের রকমারি
‘নেসেসিটি ই-স্টোর’ এই ধরনের ছাতা ক্রেতার পছন্দমতোও তৈরি করে দেয়। সারজুর কথায়, ‘আমরা কাস্টমাইজ করে দিই। অনেকে চান, ছাতার উপর দু’জনের নাম লেখা হবে। বা কোনও একটা আঁকা, সঙ্গে কারও নাম। সেটা আমরা করে দিই।’ আবার পামেলার কাছে কাস্টমাইজ প্রোডাক্ট পাওয়া যাবে না ঠিকই। কিন্তু বিভিন্ন উৎসব, অনুষ্ঠানের কথা মাথায় রেখে থিম নিয়ে কাজ করেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘দুর্গাপুজোর সময় কুলো, শাঁখ, চাঁদমালা। পয়লা বৈশাখের সময় পুজো সংক্রান্ত কিছু। শীতে সান্তাক্লজ, ক্রিসমাস ট্রি নিয়ে কাজ করেছি। এরপর কলকাতা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে।’
দরদাম
স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ ছাতার চেয়ে ডিজাইনার ছাতার দাম কিছুটা বেশি। কিন্তু পকেট ফ্রেন্ডলি নয়, তাও সবসময় বলা যায় না। পামেলা জানালেন, তাঁর কাছে এই ধরনের ছাতা ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ১২৫০ টাকা পর্যন্ত দামের পাওয়া যাবে। আবার ‘নেসেসিটি ই-স্টোর’-এ ডিজাইনার ছাতা পাওয়া যায় ৪০০ থেকে শুরু ১০০০ টাকার মধ্যে।
রক্ষণাবেক্ষণের উপায়
এত সুন্দর ছাতা কিনলেন, এবার যদি তা ব্যবহার করতে গিয়ে খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে কি আর ভালো লাগবে? তাহলে এর যত্ন করবেন কীভাবে? পামেলা বললেন, ‘রোদ্দুরে কাপড়ের রং জ্বলে যাওয়া বা বৃষ্টির জলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। সেলাই সেভাবেই করা হয়, যাতে ব্যবহার করলে কোনও সমস্যা হয় না। আমরা শুধু একটা জিনিসই বলি, ভিজে যাওয়ার পরে আমরা সাধারণ ছাতাও মেলে দিয়ে শুকিয়ে নিই। এগুলো যেহেতু একটু অন্যরকম ছাতা, ভিজে অবস্থায় বেশিক্ষণ ভাঁজ করে মুড়ে রাখবেন না। এটা মেনটেন করলেই অনেক দিন চলে।’
কিডস কর্নার
ডিজাইনার ছাতা কি শুধুই বড়দের ফ্যাশন কোশেন্ট বাড়াবে? বাড়ির ছোট সদস্যটির সাজগোজে নতুন মাত্রা যোগ করতে যদি এহেন ছাতা খোঁজেন, তাহলে পাবেন কি? পামেলা বললেন, ‘আমাদের কাছে বাচ্চাদের একটা সেকশনও আছে। সেখানে কিছু কার্টুন মোটিফের ডিজিটাল প্রিন্টিং রেখেছি। ওই সেকশনে এখনও সেলাই করা ছাতা রাখছি না। কারণ বাচ্চার ছাতায় বাবা, মা এই টাকাটা ইনভেস্ট করবেন কি না, সেটা এখনও বুঝতে পারছি না।’ 
বিয়ের তত্ত্বে হোক বা জন্মদিন, বাজেট থাকলে উপহারের তালিকায় বিবেচনায় রাখতে পারেন এ হেন ডিজাইনার ছাতা। আবার পোশাকের রঙের সঙ্গে কনট্রাস্ট করে নিজেও ব্যবহার করতে পারেন। আগলে তো রাখবেই, বাড়তি পাওনা নান্দনিক ছোঁয়া। 

9th     April,   2022
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ