লাখ কথা খরচ করলে নাকি একটা বিয়ে সম্পন্ন হয়। আর বিয়ের সাজ? তার জন্য কী কী জরুরি? পরামর্শ দিলেন বিশিষ্ট মেকআপ আর্টিস্ট ও বিউটিশিয়ানরা। তাঁদের সঙ্গে কথা বললেন কমলিনী চক্রবর্তী।
বিয়ে মানেই নতুন পোশাক, ত্বকের যত্ন, চুলের সাজ। বিয়ে মানেই দুধের সর, চন্দনের পেস্ট, মধুর প্রলেপ। বিয়ে মানেই বেনারসি, তসর, গরদ, ধাক্কাপেড়ে ধুতি। এক কথায় বিয়ে মানেই হইহই ব্যাপার রইরই কাণ্ড। বিশিষ্ট বিউটিশিয়ান বন্দনা লুথরা বললেন, বিয়ের সাজের কনসেপ্ট দিনকে দিন বদলে যাচ্ছে। আধুনিক হচ্ছে চিন্তা ভাবনা। আর সেই আধুনিকতার ভরসায় কনের পাশাপাশি বরও এখন রীতিমতো ব্রাইডাল গ্রুমিংয়ে ব্যস্ত রাখেন নিজেকে। অন্তত বিয়ের পাঁচ মাস আগে থেকেই কনেকে নিজের ত্বকের যত্ন নেওয়া শুরু করতে হবে। আর বরের জন্য বরাদ্দ মোটামুটি মাস দেড়-দুই।
যত্নের শুরুর কথা
বিয়ের আগের দিন পনেরো ত্বককে সম্পূর্ণ বিশ্রাম দিতে হবে। তখন সব ঘষা মাজা বন্ধ। তারপর শুধুই ঘরোয়া যত্নের মধ্যে রাখুন ত্বককে। সেই সময় ডায়েটের মধ্যেও ফল, ফলের রস, জল, স্যালাড ইত্যাদি বেশি পরিমাণে রাখবেন। তাতে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বেড়ে যাবে। বিয়ের মাস পাঁচেক আগে থেকে স্কিন সিরাম ব্যবহার করা দরকার। বর ও কনে দু’জনেই স্কিন সিরাম ব্যবহার করতে পারেন।
তবে যে কোনও সিরাম নয়, হাইড্রেটেড সিরাম ব্যবহার করা উচিত। রোজ বেরনোর সময় মুখে প্রসাধনী ব্যবহার করার ঠিক আগে হাইড্রেটেড সিরাম লাগিয়ে নিতে হবে। এতে ত্বক নরম হবে। ছেলেরাও রোদে বেরনোর আগে যদি নিয়ম করে কোনও সিরাম লাগান তাহলে বিয়ের দিন ত্বক উজ্জ্বল দেখাবে। এছাড়াও রোজ পিল অব মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। আর আছে ফেসিয়াল। নিজের ত্বকের পক্ষে মানানসই ফেসিয়াল প্রতি মাসে একবার করে অবশ্যই করাবেন। সেক্ষেত্রে ফ্রুট ফেসিয়াল সবচেয়ে নিরাপদ। বিয়ের আগের এক মাস অবশ্য প্রতি সপ্তাহে ফেসিয়াল করার পরামর্শ দিলেন বন্দনা লুথরা। তাতে স্কিন টোনিংও হয়। ত্বক অতিরিক্ত পুষ্টি পায় এবং তরতাজা হয়ে ওঠে।
এই বিষয়ে মেকআপ আর্টিস্ট অনিতা সাধুখাঁ-র বক্তব্য, ‘যত দিন যাচ্ছে ততই আমরা সাজগোজ বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠছি। ফলে এখন বিয়ের আগে সাজের সাতসতেরো জেনে সেই অনুযায়ী নিজের ত্বক ও চুল তৈরি করা দরকার। এই যে গ্রুমিং সেটা বিয়ের দিনের সাজের উপর অনেকটাই নির্ভর করে। ফলে যিনি সাজাবেন তাঁর সঙ্গে কনের নিয়মিত যোগাযোগটাও খুব দরকার।’ এখন কনের মতামত খুব জরুরি। কনের উচ্চতা, রোগা বা মোটা সেটা জেনে নিয়ে সাজের পরামর্শ দেন অনিতা।
শুষ্ক ত্বকের যত্ন
কনের যদি শুষ্ক ত্বক হয় তাহলে ত্বকে বাড়তি টকভাব দিয়ে কোনও প্যাক দেওয়া যাবে না, বললেন অনিতা সাধুখাঁ। বরং নামী কোম্পানির ক্রিম মাসাজেরই তিনি পরামর্শ দিলেন। আর ঘরোয়া প্যাকের ক্ষেত্রেও মধু বেস করে প্যাক লাগানোই ভালো। তবে মধু ব্যবহার করার আগে অল্প ব্যবহার করে দেখে নিতে হবে ত্বকে তা স্যুট করছে কি না। লেবুর রস বা দই শুষ্ক ত্বকে চলবে না। ড্রাই স্কিনের ক্ষেত্রে মুখে তেলের মাসাজ খুবই ভালো। ঘরোয়া মাসাজ নারকেল তেল আর অলিভ অয়েল যে কোনও কিছু দিয়েই করা যায়। প্রতিবার মুখ ধোয়ার পর বা স্নানের পর মুখে একটু ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে রাখতে হবে। শোওয়ার সময় যদি তেল মাসাজ করা যায় তাহলে তা ড্রাই স্কিনে সবচেয়ে ভালো ফল দেবে। ড্রাই স্কিনের পক্ষে দুধের সর সপ্তাহে একদিন অন্তত মাখা ভালো। কাঁচা হলুদ বাটাও লাগানো যেতে পারে। তা মুখ এবং গলায় লাগাতে হবে।
এছাড়াও মুখটা পরিষ্কার করা খুবই দরকার। যেমন তুলো ভিজিয়ে তাতে অল্প তেল বা ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে মুখ পরিষ্কার করা যেতে পারে। অনেকে আবার ওয়েট টিস্যু দিয়েও মুখ মুছে নেন। তারপর ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়া উচিত, বললেন অনিতা। মুখ ধোয়ার পর আবারও ময়েশ্চারাইজার এবং অলিভ অয়েল মিশিয়ে তা লাগানো যেতে পারে। এতে ত্বক নরম থাকবে। একটু টোনারও লাগানো যেতে পারে। গোলাপ জল, তুলসী ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে টোনার হিসেবে।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য
এক্ষেত্রে টক দই, লেবু, মধু, বেসন ইত্যাদি দিয়ে প্যাক তৈরি করা যেতে পারে, বললেন অনিতা। টক দইয়ের সঙ্গে মধু মিশিয়ে লাগালেও কাজ দেবে। এই ধরনের ঘরোয়া প্যাক কিন্তু সব সময়ই অল্প করে মেখে দেখতে হবে। ত্বকে সামান্যতম চুলকানি বা জ্বালাভাব হলে সঙ্গে সঙ্গে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। তবে তৈলাক্ত ত্বকে কখনওই ক্রিম বা অয়েল মাসাজ করা যাবে না। ডাল বাটা মাখা যেতেই পারে। তবে ডালে অ্যালার্জি আছে কি না সেটা দেখে নিতে হবে। ঘরোয়া ব্লিচের উপায় হিসেবে টম্যাটোর রস খুবই উপকারী। এতে মুখ খুব পরিষ্কার হয়। মাসে একবার টম্যাটোর রস দিয়ে মুখ পরিষ্কার করাই যথেষ্ট।
সান ব্লক
যাঁরা গরমে বিয়ে করেন তাঁদের ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে সানব্লক ক্রিম লাগানো খুবই জরুরি। রোজ বেরলে রোদে পুরে ত্বকে ট্যান হয়। সেক্ষেত্রে সানব্লক ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে অনেকটাই বাঁচিয়ে রাখে। বেরনোর ঠিক আগে এই ক্রিম না লাগিয়ে কিছুক্ষণ আগে লাগালে তা বেশি কাজ করবে, বললেন বন্দনা। আর সান ব্লকের সঙ্গে যদি হালকা কোনও ময়েশ্চারাইজার মিশিয়ে লাগানো যায় তাহলে তা ত্বককে ভিতর থেকে রক্ষা করবে। অতিরিক্ত ট্যানের জন্য মুখে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে লাগানো যেতেই পারে।
ঠোঁটের যত্ন নিন
মেকআপের মূল দুটো ফোকাল পয়েন্ট হল চোখ এবং ঠোঁট, জানালেন বন্দনা লুথরা। তার মধ্যে চোখের প্রতি আমরা অনেকেই বেশি যত্নশীল থাকি। কিন্তু ঠোঁটের প্রতি ঠিক ততটা যত্ন নিই না। এটা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়। রোজ দু’বেলা ঠোঁটে লিপ বাম লাগাতে ভুলবেন না। বিয়ের অন্তত তিন মাস আগে থেকেই এই রুটিন মেনে চলতে হবে। এছাড়া রোজ অন্তত একবার নরম কাপড় ভিজিয়ে তা গোলাকার ভাবে ঠোঁটের উপর বোলাতে থাকুন। এতে ঠোঁটের বাড়তি চামড়া উঠে যাবে এবং ঠোঁট নরম থাকবে। এমন ঠোঁটে লিপস্টিক বা ক্রিম যা-ই লাগান না কেন, তা বেশি খুলবে। বিয়ের দিন বর এবং কনে দু’জনের একটু গ্লসি লিপ ভালো লাগে। সেক্ষেত্রে কনের জন্য নানা ধরনের গ্লস লিপস্টিক তো রয়েইছে। কিন্তু বরের ক্ষেত্রেও সাধারণ লিপ ক্রিমের বদলে যদি লিপ জেল বা গ্লস ব্যবহার করা যায় তাহলে দেখতে ভালো লাগবে। একটু ম্যাটি ন্যাচারাল গ্লস ব্যবহার করলে বরের ঠোঁট সবচেয়ে বেশি খুলবে।
ভ্রূ যেন শেপে থাকে
আইব্রাও প্লাকিং বা থ্রেডিং তো বিয়ের আগে নিয়মমাফিক করতে হবে। অর্থাৎ প্রতি পনেরো দিনে একবার আইব্রাও থ্রেডিং করানো জরুরি। এবং এই রুটিন বিয়ের ঠিক পনেরো দিন আগে পর্যন্ত কনেকে নিয়ম করে মেনে চলতে হবে। তারপর আর মুখে থ্রেডিং চলবে না। বন্দনা লুথরা বললেন বিভিন্ন সেমি পার্মানেন্ট মেকআপ কিট পাওয়া যায় যা আইব্রাওয়ের জন্য উপযোগী। সেই ধরনের একটা কিট কিনে রাখলে বিয়ের আগে নিজে নিজেই আইব্রাও শেপ করে নেওয়া যায়। মেকআপের সময় আইব্রাও পেনসিল বা কালার দিয়ে আইব্রাও হাইলাইট করা খুবই জরুরি। কোন কালার আপনার মুখের সঙ্গে বেশি মানাবে তার একটা ধারণা করার জন্য আইব্রাও হাইলাইট কালার কিনে বাড়িতে এক আধবার ব্যবহার করে দেখতে পারেন। মেকআপ অনুযায়ীও আইব্রাও হাইলাইট করা যায়। অনেকে শাড়ির রং অনুযায়ীও তা হাইলাইট করেন। যেমন খুব ফর্সা রং হলে যদি লাল বেনারসি পরেন বিয়ের দিন তাহলে তামাটে হাইলাইট করতে পারেন আইব্রাওতে। তবে আপনার চোখের মেকআপের ওপর আইব্রাও হাইলাইট অনেকটাই নির্ভর করবে।
ভ্রূতে থ্রেডিং করার পাশাপাশি অবশ্যই জেল ও ক্রিম লাগাবেন। নাহলে চোখের উপরের চামড়া এবং কপালের চামড়া খসখসে হয়ে যায়। আইব্রাও লাইনের এক ইঞ্চি উপর থেকে ও নীচ পর্যন্ত মোটা করে জেল লাগাবেন। হালকা হাতে জেল মাসাজ করে নেবেন। তাতে তা ত্বকের সঙ্গে মিশে যাবে এবং ত্বক কোমল দেখাবে।
কনুই-কপাল-গোড়ালি
মুখের তো বটেই, হাত পায়েরও কিছু অংশ থাকে যা বড্ড অবহেলিত। কিন্তু বিয়ের আগে গ্রুমিংয়ের সময় সব কিছুরই সমান যত্ন নেওয়া দরকার জানালেন বন্দনা লুথরা। তাঁর কথায় কনুইয়ের কালো ছোপ অধিকাংশের কাছে এক বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়ায়। বিয়ের আগে ছ’মাস যদি কনুইয়ের একটু ট্রিটমেন্ট করা যায় তাহলে অনায়াসেই সেই বিড়ম্বনার হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তার জন্য ভালো কোনও ক্রিম এবং জেল একসঙ্গে মিশিয়ে দু’বেলা কনুই মাসাজ করতে পারেন। মধুর সঙ্গে অল্প বেসন মিশিয়ে একটা পেস্ট করে তা লাগাতে পারেন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলবেন। এছাড়া অ্যালোভেরা জেল রোজ লাগাবেন স্নানের পর এবং রাতে শুতে যাওয়ার আগে। দুধের সর ফেটিয়ে তার সঙ্গে মসুর ডাল বাটা মিশিয়ে কনুইয়ে লাগান। শুকিয়ে নিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তারপর কোনও ক্রিম অল্প করে মাসাজ করে নিন। কাঁচা হলুদ বেটে তার সঙ্গে মধু মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করুন। সেই পেস্ট কনুইতে দু’বেলা লাগান। এইভাবে কনুইয়ের যত্ন নিতে পারেন। দেখবেন কালো ছোপ উঠে যাবে। তবে যেমনই প্যাক লাগান না কেন প্রতিদিন নিয়ম করে জেল আর ক্রিমের মিশ্রণ দিয়ে কনুই অবশ্যই মাসাজ করবেন। তাতে ত্বক নরম হবে।
কপালের ক্ষেত্রে অনেকেই অতিরিক্ত থ্রেডিং করেন বলে চামড়া খসখসে হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ফোরহেড জেল লাগাতে পারেন। অথবা অ্যালোভেরা জেলও কপালে লাগিয়ে রেখে দিতে পারেন। রোজ ময়েশ্চারাইজারের পাশাপাশি সানব্লক ক্রিম অবশ্যই মাখবেন। আর বেসনের পেস্ট, মধু, লেবু ও মুগডাল বাটা ইত্যাদি লাগাবেন। কপালে যদি কোনও দাগ থাকে তাহলে পিল অব মাস্ট লাগাবেন। শীতকালে কমলালেবুর রস একটু মধুর সঙ্গে মিশিয়ে কপালে লাগান। মুখে অনেকে তেল মাখতে চান না। কিন্তু অলিভ অয়েল এবং নারকেল তেল মুখের পক্ষে উপযুক্ত। বিশেষত কপালে এই তেল মাসাজ করা খুবই ভালো। অনেকে টি ট্রি অয়েল দিয়ে কপালে মাসাজ নেন। সেক্ষেত্রে আগে একটু স্টিম নিয়ে তারপর টি ট্রি অয়েল মাসাজ করলে বেশি উপকার পাবেন।
গোড়ালিতে লাগানোর জন্য বিভিন্ন নামী কোম্পানির ক্রিম পাওয়া যায়। সেগুলো শীত গ্রীষ্ম বর্ষা নিয়ম করে লাগাতে পারেন। তবে সবচেয়ে উপকার হয় নিয়মমাফিক গরম জলে পায়ের পাতা ভিজিয়ে রাখলে। এটা রোজ রাতে করবেন। তারপর পায়ে নারকেল তেল লাগিয়ে শুয়ে পড়বেন। গরম জলে ফুট বাথ নেওয়ার পর কিন্তু আর হাঁটাহাঁটি করা চলবে না। ফলে সব কাজ শেষ হয়ে গেলে তবেই ফুট বাথ নেবেন। এছাড়া স্নানের পর পায়ের গোড়ালিতে নিয়ম করে মায়েশ্চারাইজার মাসাজ করুন। শীতে অল্প গ্লিসারিনের সঙ্গে ময়েশ্চারাইজার মিশিয়ে নিন। তারপর তা ব্রাশের সাহায্যে সমানভাবে গোড়ালিতে লাগিয়ে নিন। ক্রিম ও ময়েশ্চারাইজারের মিশ্রণ চামড়া টেনে নিলে তবেই বেরবেন। পায়ের আঙুলের ফাঁকে ফাঁকেও এই মিশ্রণ দিয়ে মাসাজ করতে পারেন। নারকেল তেলের মালিশ গোড়ালির পক্ষে খুবই ভালো। রোজ দু’বেলা স্নানের ঠিক আগে আধ ঘণ্টা এই তেল মালিশ করে রেখে দিন। গোড়ালির চামড়ায় তেল বসে গেলে তারপর স্নান করবেন।
চুলের দেখভাল
বিয়ের দিন কনের ক্ষেত্রে চুলের সজ্জা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এক্ষেত্রে পাত্রের চেয়ে কন্যার চুলের দেখভাল বেশি জরুরি। তার মধ্যে আবার বিভিন্ন ধরনের যত্ন রয়েছে। যেমন কোঁকড়ানো চুলের যতটা অয়েল মাসাজ ও ময়েশ্চারাইজিং দরকার, স্ট্রেট চুলের ততটা লাগে না। সেক্ষেত্রে প্রথমে কোঁকড়া চুলের কথা বলি। বিয়ের আগে অন্তত পাঁচ মাস প্রতি সপ্তাহে হট অয়েল মাসাজ নিতে হবে। এবং এই মাসাজ নিজে না করে কোনও প্রফেশনাল দিয়ে করানোই ভালো। যদি খুশকির সমস্যা থাকে তাহলে হট অয়েলের সঙ্গে কর্পূর মিশিয়ে নেবেন। হট অয়েল মাসাজ করার পর মাথায় অন্তত তেলটা আধ ঘণ্টা যেন বসে সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি, জানালেন বন্দনা। চুল ধোয়ার সময় কন্ডিশনার অবশ্যই ব্যবহার করবেন এবং তার সঙ্গে পনেরো দিনে একবার অ্যাভোক্যাডো চটকে মিশিয়ে মাথায় মাখবেন। এই মিশ্রণ দিয়ে গোটা স্ক্যাল্প মাসাজ করার পর তা বেশ কিছুক্ষণ রেখে তবেই ধোবেন। এই মিশ্রণ চুলকে সিল্কি স্মুথ করে রাখবে। এছাড়া মাথায় অলিভ অয়েল মাসাজ করুন বিয়ের দু’মাস আগে থাকতে প্রতি সপ্তাহে একবার। তাতে চুলে বাড়তি শাইন আসবে। স্ট্রেট চুলের ক্ষেত্রে অলিভ অয়েল মাসাজ পনেরো দিনে একবারই যথেষ্ট। মাথায় যাঁরা রিঠা লাগান তাঁদের বলব, বিয়ের দু’মাস আগে থাকতে রিঠার ব্যবহার বন্ধ করে দিন। তার বদলে হেয়ার স্মুদনিং শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। যে কোনও ভালো ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার মাসে দু’বার অবশ্যই লাগাবেন। তবে তৈলাক্ত স্ক্যাল্পের ক্ষেত্রে বিয়ের সাত দিন আগে থাকতে কন্ডিশনার লাগানো বন্ধ করে দিতে হবে।
সাজের সাত সতেরো অনেক কিছুই জানালাম। নিয়ম মেনে ত্বক ও চুলের যত্ন নিন আর বিয়ের সন্ধ্যায় হয়ে উঠুন অনন্যা। এই বিশেষ দিনটি আপনারই অপেক্ষায়।
ডিজাইনারের ছোঁয়া
বিয়ের বেশভূষা নিয়ে একটু বেশিই মাথা ঘামাতে হয়, তাই না? আজকাল হবু বর-কনে বা বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য বেনারসি আর ধুতি পাঞ্জাবির বাইরে বিভিন্ন পরীক্ষামূলক লুক তৈরি করার চেষ্টা করছেন অনেক ডিজাইনার। রাজ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের একজন। চারূপমার পাঠকদের জন্য তিনি চারটি লুক উপহার দিয়েছেন। তাতে আছে দু’টি শাড়ি আর দু’টি লেহেঙ্গা। পুরুষদেরও কুর্তা আর শেরওয়ানি মিলিয়েমিশিয়ে মনকাড়া লুক। জেনে নিন বিশদে।
বিয়ের রিসেপশন বা বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য রাজ তৈরি করেছেন রোজ পিঙ্ক আর গোল্ডেন হ্যান্ড এমব্রয়ডারি করা বর্ডারের বেনারসিটি। তার সঙ্গে ম্যাচ করে গাঢ় ম্যাজেন্টা রঙের পাঞ্জাবিতে গোল্ডেন হ্যান্ড এমব্রয়ডারি করা নকশা পুরুষ সঙ্গীর জন্য। পাঞ্জাবির সঙ্গে রয়েছে তসর রঙের চুড়ি-পা পাজামা।
বিয়ের অনুষ্ঠানে পরার জন্য রাজ রেখেছেন অল ওভার ব্রোকেডের সূক্ষ্ম কাজে ভরা পিচ রঙের একটি শাড়ি। তাতে সরু হ্যান্ড এমব্রয়ডারি করা পেটা কাজের বর্ডার। শাড়িটির সঙ্গে ফুল স্লিভ সিকুইন দেওয়া ব্লাউজ। এই শাড়ির সঙ্গে ম্যাচ করে পুরুষের জন্য মেরুন রঙের ব্রোকেডের শেরওয়ানি যাতে হ্যান্ড এমব্রয়ডারি করা আর সঙ্গে অভিজাত তসর রঙের চুড়িদার পাজামা।
শাড়ি ছাড়া রাজ তৈরি করেছেন দারুণ দেখতে দু’টি লেহঙ্গাও। ‘লাজে রাঙা’ কনের রয়েছে লাল রঙের ব্রোকেডের লেহেঙ্গা, যাতে ছোট ছোট মুক্তোর মোটিফ। লেহেঙ্গায় আছে চওড়া পাড়। সঙ্গে সামনে গাঢ় লালে ভেলভেটের ওড়না। বর্ডারে হ্যান্ড এমব্রয়ডারির কাজ। মাথার ওড়নাটি পিওর অরগ্যাঞ্জা দিয়ে তৈরি। এতে গোল্ডেন ঝালর দিয়ে লুকটা কমপ্লিট করা হয়েছে। এর সঙ্গে একটু ভিন্ন রঙে সাজানো হয়েছে পুরুষের পোশাকটি। সবুজ রঙের কুর্তার সামনে গোল্ডেন হ্যান্ড এমব্রয়ডারি। তার উপরে রাজ পরিয়েছেন বেনারসি দিয়ে তৈরি শেরওয়ানি, সঙ্গে চোস্ত চুড়িদারেও গোল্ডেন টাচ। এই পোশাকটিকেও বিয়ের যে কোনও দিন পরার মতো রাজকীয় বলে দাবি করছেন তিনি।
পেস্তা রঙের অন্য লেহঙ্গায় রয়েছে চওড়া সবুজ ভেলভেটের বর্ডারের মধ্যে হ্যান্ড এমব্রয়ডারির কাজ। সঙ্গে জড়ানোর ভেলভেটের ওড়নাটি গাঢ় অলিভ রঙের, তাতেও গোল্ডেন বর্ডারে হ্যান্ড এমব্রয়ডারি করা কাজ। আর মাথায় দেওয়ার নেটের ওড়নাটিতে বর্ডার ও সারা গায়ে সিকুইনের কাজ। পুরুষের জন্য তিনটি লেয়ারে পোশাকটি ভেবেছেন রাজ। প্রথমে পেস্তা রঙের কুর্তা, তার উপরে পেস্তা রঙেরই এমব্রয়ডারি করা জহরকোট, আর তার উপরে শেরওয়ানি। শেরওয়ানির নীচের দিকে বেনারসির আঁচলের কাজ। সঙ্গে চুড়ি পা-তেও পেস্তা রং। এই রাজকীয় বেশ রিসেপশন অথবা বিয়ে— যে কোনও দিনের জন্যই সাজেস্ট করছেন রাজ। তাহলে আর দেরি কেন? এমন একটা ব্যতিক্রমী সজ্জা আপন করে হয়ে উঠুন বিবাহসন্ধ্যার মধ্যমণি!