বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
চারুপমা
 

আবার   আপন ঘর

করোনা তৃতীয় ঢেউয়ের দাপটে আমরা ফের ঘরবন্দি। মন ভালো নেই। কীভাবে একটু রঙিন ছোঁয়ায় মন ভালো করবে চেনা ঘর? হদিশ দিচ্ছেন অন্বেষা দত্ত।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলতেন, ‘সব ঠাঁই মোর ঘর আছে, আমি/সেই ঘর মরি খুঁজিয়া।’ কিন্তু এখন সব ঠাঁইকে নিজের করার জো যে নেই। বাহির যতই ডাকুক, ঘরই এখন একমাত্র আশ্রয়। তবে দীর্ঘ সময় ঘরবন্দি থাকতে কারই বা ভালো লাগে? সেই চেনা একঘেয়ে চার দেওয়াল। মনে হয় গিলতে আসছে। শূন্য দেওয়াল যেন মনের শূন্যতা আরও বাড়ায়। তাই নিজের সাজ নিয়ে যেমন ভাবি, ঘরকে নিয়েও ভাবতে হয় বইকি। ঘরের রূপবদলে এক নিমেষে মনও রঙিন। কীভাবে? কথা হচ্ছিল সোহিনী হালদারের সঙ্গে। অন্দরসজ্জার জন্য যাঁর হাতে আছে হরেক রকম জাদুকাঠি। ছোঁয়ালেই কেল্লাফতে! 

গোড়ার কথা
সোহিনীর হাতে তৈরি ঘর সাজানোর হরেক জিনিসের মধ্যে প্রথমেই যেটা চোখ টানে তা হল নানা ছবি আঁকা ওয়াল হ্যাঙ্গিং। ভাবছেন এ আবার নতুন কী? আছে আছে, অনেক কিছুই অন্যরকম আছে। সোহিনী তাঁর ব্র্যান্ড ‘রেনেসাঁ’-র তরফে যে উপাদানই তৈরি করুন না কেন, তার সবটাই হাতের পরশে গড়ে তোলা। হাল আমলে হ্যান্ডমেড কথাটি খুবই চালু। হাতে তৈরি সব জিনিসের মধ্যে পরিবেশ রক্ষার গুরুদায়িত্বটাও মাথায় থাকে। এক্ষেত্রেও জিনিস তৈরি থেকে প্যাকেজিং, সব কিছুতেই তার স্পষ্ট ছাপ পাবেন। ছবিতে যে গোলাকৃতি ওয়াল হ্যাঙ্গিং দেখছেন, তা মেহগনি কাঠের তৈরি। এটি বানানোর সময় কাঠের টুকরো গোল করে কাটার কাজটিও রেনেসাঁর কর্মীদের হাতেই হয়। সোহিনীর সঙ্গে আছেন আর এক শিল্পী, সুমন্ত মান্না। তিনি আর্ট কলেজের ছাত্র ছিলেন। দু’জনে মিলেই ছবি আঁকেন। সোহিনী নিজে ব্যারাকপুরের মেয়ে। ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা প্রেসিডেন্সিতে। ছবি আঁকার প্রথাগত শিক্ষা নেই। ওয়াটার কালারে শিখেছেন শুধু। কিন্তু পড়াশোনার বাইরে আঁকিবুকির জগতেই মন, প্যাশন। প্রচুর ওয়ার্কশপ, ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেছেন আগে।   
তারপর ২০১৫ সাল থেকে নিজের কাজ শুরু। এখন অ্যাক্রিলিকে তাঁরা ফুটিয়ে তোলেন ছবি। সোহিনী নিজে নিজেই অ্যাক্রিলিকে তুলির টান দেওয়া শিখেছেন। সঙ্গে পেয়েছেন শিল্পী বন্ধুদের মতামত। এভাবে শুরু করার পরে তিনি ওয়াল ডেকরের জন্য অ্যাক্রিলিকে সড়গড় হয়েছেন। সোহিনীর কথায়, ‘গোলাকৃতি হ্যাঙ্গিংয়ে হাতে এঁকে উড বার্নিশ করা হয় ছবিতে যাতে সেটা সাফসুতরো করে যত্নে রাখা যায়। এভাবে জিনিসটা অনেকদিন ভালো থাকবে। সবরকম আর্ট ফর্ম নিয়েই কাজটা করি। আমরা দু’জনেই রিয়্যালিস্টিক পেন্টার। পোর্ট্রেটও করতাম। শুরু করেছিলাম ফ্রিডা কাহলোর মুখ দিয়ে। তারপর ভ্যান গঘের ‘স্টারি নাইট’ করেছি। এছাড়া লোকশিল্পও উঠে আসে আমাদের ছবিতে। কখনও কোনও পটচিত্রের সঙ্গে নিজেদের কিছু ছোঁয়া থাকে। রাজস্থানের পিচওয়াই কাজ করি। আবার কিছু সমসাময়িক ছবি বা সেমি অ্যাবস্ট্রাক্ট কাজও করি।’    

এরপরে কী?
২০১৯-এ কলেবর পায় তাঁর নিজের ব্র্যান্ড রেনেসাঁ। তাকে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান সোহিনী। ‘পোশাকের ক্ষেত্রে যতটা দ্রুত প্রচার হয়, ঘরের সজ্জার এধরনের জিনিস জনপ্রিয়তা পেতে তার চেয়ে বেশি সময় লাগে,’ বললেন তিনি। তাঁর আক্ষেপ, এখনও কলকাতার তুলনায় অন্য শহরে এ জিনিসের কদর অনেক বেশি। ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র হ্যান্ড পেন্টেড আর্ট ডেকর সংগ্রহের কথা এখনও এ শহরের অনেকেই ভাবতে পারেন না। তবে শহরের বাইরে ভালোই চাহিদা রেনেসাঁ-র সামগ্রীর। আশাতীত সাড়া পেয়েছেন বললে ভুল হবে না। মূলত দক্ষিণ ভারত থেকে খুব চাহিদা। আর দেশের বাইরে মালয়েশিয়া বা আমেরিকার প্রবাসী বাঙালিরা অবশ্য কেনেন। ‘কলকাতায় লোকেরা উপহার দিতে গিয়ে হয়তো কিছু কেনেন, কিন্তু পুরোপুরি ঘর বদলে ফেলার জন্য এসবের কথা ভাবেন, এমনটা নয়,’ বললেন সোহিনী। 

কালেকশনে কী কী
ওয়াল হ্যাঙ্গিংয়ের পাশাপাশি তাঁর সংগ্রহে রয়েছে ডিজাইনড কেটল, পেন্টেড উডেন কোস্টার বা ক্রুশের কোস্টার, হাতে আঁকা কাঠের ট্রে এবং গ্লাস ইত্যাদিও। এগুলো শুধু সাজানো নয়, চাইলে ব্যবহারও করতে পারেন। মজার কথা, এই কেটল বা কেটলি এবং পুরনো ওয়াইন বটলে ডিজাইন করেই হাত পাকানো শুরু করেছিলেন সোহিনী। বাড়ির পড়ে থাকা পুরনো কেটলির ফ্ল্যাট সারফেসে কিছু এঁকে সেটা বন্ধু বা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে উপহার দেওয়ার পরে একটু একটু করে অনেকে তাঁর জিনিসের প্রতি আগ্রহ দেখান। তখন কেবল রিসাইকেল ওয়ার্ক করার ভাবনা নিয়ে কাজটা করেছিলেন। পরে তা এতটাই জনপ্রিয় হল, যে কেউ কেউ নতুন কেটল কিনে দিয়েও বলেছিলেন ছবিতে সাজিয়ে দাও। তখন থেকেই কাজটা আরও গুরুত্ব দিয়ে করার কথা ভেবেছিলেন তিনি। ঘরের টেবলওয়্যারের জন্য বেশ মন ভালো করা একটা উপাদান হতে পারে এই রঙিন কেটল। এধরনের জিনিস অবশ্য এখন প্রচুর দেখা যায়। তবে সোহিনীর বিশেষত্ব তাঁর আঁকা ছবির মধ্যে। কেটল ভালো চলতে চলতেই তাঁর মাথায় আসে কাঠের সার্কুলার ওয়াল হ্যাঙ্গিং করে তাতে অন্য ছবি ফুটিয়ে তোলার কথা। এখন কাঠের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা গোলাকৃতি রঙিন ক্যানভাসেও কাজ করছেন। কেউ কাস্টমাইজড চাইলে তা-ও করে দিতে পারেন। মূলত অনলাইনে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে চলছে তাঁদের বিক্রিবাটা। ভবিষ্যতে নিজস্ব ওয়েবসাইট আনতে চান তিনি।

লকডাউনে লাভ  
গৃহবন্দি থাকলেই তো নিজের ঘর নিজের চোখে পড়ে বেশি। তাই ঘরকে সাজানোর তাগিদটাও বাড়ে। করোনার দাপটে সব বন্ধ হয়ে গেলে অন্যদের ব্যবসা যখন মার খায়, সোহিনীদের ক্ষেত্রে বিষয়টা উল্টে যায়। তাঁর দাবি, এইরকম সময়গুলোতে আরও বেশি করে অর্ডার আসে তাঁদের কাছে। বাড়ি থেকে কাজ সেরে অবসরে ঘরের অন্তরঙ্গ কোণটি সাজানোর ইচ্ছা জাগে। তখনই ঘরের রূপবদলে আসে ওয়ালহ্যাঙ্গিং বা রঙিন আরও নানা উপাদান। শুধু ঘর সাজানোর কথা ভেবেই যে লোকে অর্ডার করেন, তা নয়। সোহিনী বললেন, ‘মহামারী মানুষের মনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। তাই অনেকেই কাছের মানুষকে উপহার দেওয়ার জন্য এমন কিছু খোঁজেন, যা ব্যতিক্রমী অথচ পলকে মন ভালো করে দিতে পারে। তার জন্য হাতে তৈরি জিনিস কোনও উপলক্ষ্য ছাড়াই কিনেছেন মানুষ। তার সঙ্গে নিজেরা জুড়ে দিতে চেয়েছেন শুভেচ্ছা বার্তা বা ভালো হয়ে ওঠার জন্য একটা দুটো কথা। আমরা উপহারের সঙ্গে সে লেখাও সাজিয়ে দিয়েছি সযত্নে।’ শুধুমাত্র ইনস্টাগ্রামের @renaisa.official পেজ থেকেই তাঁর পসার বেড়েছে।   
ভবিষ্যতে জাপানি ছবির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে একটা কালেকশনও করতে চান তিনি। প্রাচ্যের ছবি তাঁকে খুব টানে। আঁকার পাশাপাশি সোহিনী এখন কোরীয় ভাষা শিখছেন। তাঁর মা পেশায় চীনা ভাষার বিশ্লেষক। তাই বিদেশি ভাষা, বিশেষ করে প্রাচ্যের কোনও একটা ভাষার শেখার ইচ্ছে তাঁর বরাবরই ছিল। চীনা কিংবা জাপানি তাঁর কাছে কঠিন মনে হয় বলে কোরীয় ভাষায় ঝোঁক! কোরীয় ছবিও ভালোবাসেন। আপাতত ভাষা শিখে পড়াশুনোর পরিধি বাড়িয়ে শিল্পের গন্ডিটা আরও দূরে প্রসারিত করতে চান তিনি। 

15th     January,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ