বাড়িতে থেকে কাজ করার দিন এসেছে ফিরিয়া। কী ধরনের পোশাকে নিজেকে রাখবেন ফ্যাশনবেল? মনই বা ভালো থাকবে কীভাবে? রইল টিপস।
ঘরে থাকার বর্ষপূর্তির তিনে পা দিলাম এবার আমরা! প্রতি বছরের দু’তিনটে মাস বাড়ি থেকে কাজ এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়াচ্ছে যে। সৌজন্যে শ্রী করোনা। যাঁদের অফিসে ড্রেস কোড নেই, বাড়ি থেকে কাজের সময় তাঁদের পছন্দের পোশাক তালিকায় বেশ কিছু দিন ধরেই উপরের দিকে চলে এসেছে কাফতান টপ, কটন ড্রেস, জগার্স বা চির পরিচিত জিনস টি শার্ট। ঘরে বসে কাজের ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হয় একটাই বিষয়। সেটা হচ্ছে ভরপুর আরাম। সারাদিনের বিভিন্ন সময় কখনও সোফায় কখনও বিছানায় কখনও টেবিল চেয়ারে ঘুরে ঘুরে কাজ করা, কখনও আবার স্ক্রিনে মুখ দেখানো, এসবের জন্য পরনের পোশাকটি আরাম না দিলে মেজাজ চরমে ওঠে। এমনিতেই বাইরে যাওয়া নেই, সাজগোজ নেই, আড্ডা নেই। অথচ নাক মুখ গুঁজে কাজ করে যাওয়া আছে। তাই একঘেয়েমি আসতে বাধ্য। কিন্তু উপায় কী? তাই যত দিন বাড়িতে থাকা, একঘেয়েমি না বাড়িয়ে পোশাকের স্বাচ্ছন্দ্যে মন ভালো করা যাক। কে কেমন পোশাকে আরাম পান, তা জানতে আমরা কথা বলেছিলাম বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে। রইল ডিজাইনারের পরামর্শও।
পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ বাড়ির পাশেই ক্লিনিকে বসে নিজের কাজটা করেন। সেখানে অভিভাবক বা বাচ্চাদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য ভিডিও কলে কথা বলতে হয় তাঁকে অনবরত। পোশাকের ক্ষেত্রে তাই তিনি বেছে নেন সেমি ফর্মাল কোনও কিছু। গরমে হালকা কালারফুল কুর্তি যেটা পরলে মন থাকে ফুরফুরে, তেমন পোশাকই পরেন তিনি। তাছাড়া আরামের জন্য বেছে নেন পালাজোও। শীতকালে জিনসের সঙ্গে লং টপ। সঙ্গে গলায় একটা উজ্জ্বলরঙা মাফলার। আর লং কোট বা সোয়েটার। খুব গরম না থাকলে উজ্জ্বল রংই বেশি পছন্দ তাঁর। এছাড়া থাকে প্যাস্টেল শেডস, চোখ মন দুইয়েরই আরাম।
সাজগোজের ক্ষেত্রে পায়েল মাথায় রাখেন, যিনি তাঁকে স্ক্রিনে দেখবেন, তাঁরও যেন মনে একটা প্রশান্তি কাজ করে। ‘চুল বেঁধে একটু হালকা প্রসাধন। তারপর কথায় কথায় আশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করি। তাতে উল্টো দিকের পর্দায় যিনি আছেন, তারও একটা রিল্যাক্সড ভাব থাকবে,’ বললেন তিনি। বাবা-মায়েদের পরামর্শ দেওয়ার সময় তিনি বলেন, তাঁরাও যদি সেমি ফর্মাল পোশাক পরে কথাবার্তা বলেন, তাহলে কথোপকথনেও তার ছাপ পড়ে। একটু আত্মবিশ্বাসী হওয়া যায়। কারণ বাড়ির পোশাকে বাধো বাধো ভাবটা থেকেই যায়।
এখন অনলাইনে জামাকাপড় কেনারও অনেক বেশি চল হয়েছে, বাড়ি থেকে বেরোতে না পারলেও অন্তত পোশাক মন ভালো করার টোটকা নিয়ে আসুক। তাই বাড়ি বসে অর্ডার দিয়ে সে পোশাক বাড়িতে পরেই স্বস্তি। সেক্ষেত্রে কী ধরনের পোশাক বেছে নিচ্ছেন মানুষ? পায়েল বলছেন, ‘বেরনোর প্রয়োজনীয়তা কমে গিয়েছে বলে গর্জিয়াস পোশাক কেনার প্রবণতা একটু কমেছে। বরং বাড়িতে কীভাবে পোশাকের মাধ্যমে আরামে থাকার উপায় খোঁজা যায়, সেটাই দেখছেন মানুষ। তাই লং কুর্তি, শর্ট কুর্তি বা স্কার্ট, স্টাইলিশ সোয়েটার, নানা কায়দার মাফলার আর গরমের সময় স্টোল, যেটা গলায় জড়িয়ে স্ক্রিনের সামনে বসলে এক নিমেষে একটা স্মার্ট লুক চলে আসে, সেটা দেখছেন অনেকে।’
ডিজাইনার গৌরী সাহা বলছেন, বাড়িতে টানা থাকলে এবং সাধারণ জামাকাপড় পরতে হলে এমনিই একটা বিরক্তি আসে। ছাদ বা বারান্দা ছাড়া তো যাওয়ার কোথাও নেই। তবু জীবনের বিশেষ দিনগুলো তো থেমে থাকে না। জন্মদিন বা বিবাহবার্ষিকী নিয়ম মেনেই চলে আসে। তখন কি ইচ্ছে করে না দিনটার জন্য একটু নিজেকে সাজাই? না হয় হল না বাইরে যাওয়া, তা বলে কি একটু আনন্দ করা যায় না? এসব ক্ষেত্রে গৌরীর পরামর্শ, আরামদায়ক অথচ কম যত্ন করতে হয় এমন শাড়ি খুঁজে বের করুন। সারাদিন পরাও যাবে, বাড়িতে পরিষ্কার করাও যাবে। মনটা ভালো রাখার জন্য এবং পরিবারের সকলের সঙ্গে সেই মুহূর্ত যখন ফ্রেমবন্দি করার ইচ্ছে হয়, তখন এধরনের শাড়ি মহিলাদের জন্য খুবই উপযোগী। ছিমছাম সাজই নজর কাড়বে সকলের। দিনের অনুষ্ঠান হলে হলুদ, কমলা, সাদা এধরনের রং বাছতে পারেন। রাতের অনুষ্ঠানে বাড়িতেই পরুন নীল, কালো বা লাল রঙের শাড়ি, আপনার উজ্জ্বলতা বাড়বে সন্দেহ নেই।
আইটি প্রফেশনাল বিধান রায় ভিডিও কলে বসলে পোশাকের জন্য কী মাথায় রাখেন? ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে অফিস অ্যাটায়ার পরতে বাধ্য হই। কারণ প্রোটোকল মেনে সেটা চলে। তার সঙ্গে একটা পরিষ্কার ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে।’ অনেকে আবার স্ক্রিনে যতটুকু দেখা যাচ্ছে সেটুকুর জন্যই সেজেগুজে নেন। অর্থাৎ কোমর অবধি অফিসওয়্যার। তারপর শর্টস পাজামা যা হোক। সেভাবেই আরাম পাওয়া।
কেউ কেউ আবার বলছেন, মজার কথা হল রোজ কী পরে বেরবো— এই ভাবনা থেকে মুক্তিও তো পাওয়া যায় কিছু দিনের জন্য। কারণ রোজকার অফিস ওয়্যারে পুনরাবৃত্তি না ঘটিয়ে নিয়ম মেনে পোশাক পরার সেই চাপটা আর থাকে না। এটা একটা ইতিবাচক দিক তাঁদের কাছে। বেরলেও এখন সেই পোশাক জীবাণুমুক্ত করে সাফ করার হ্যাপাটাও মাথায় চেপে বসে। তাই কয়েক দিনের বাড়ি থাকায় মন খারাপ না করে আরামদায়ক জামাকাপড়েই ভালো রাখুন নিজেকে।