সেলেবদের স্টাইল থেকে অনুকরণ না অনুসরণ? ‘আবার বছর কুড়ি পরে’ ছবির চার অভিনেতার ভিন্ন লুক থেকে দেখে নিন কোনটা আপনার জন্য আদর্শ। এই ছবির পরিচালক, স্টাইলিস্ট, কস্টিউম ডিজাইনারের সঙ্গে আলোচনায় স্বরলিপি ভট্টাচার্য।
কোঁকড়া চুলের এক মেয়ে। রোদেলা দিনের মতো ঝলমলে। স্মার্ট ছেলেটা এই মেয়ের সামনে এলেই থমকে থাকে সময়। আর এক মেয়ের আটপৌরে সাজে লুকিয়ে বন্ধুতার রোজনামচা। হইহুল্লোড়ে আর এক ছেলে যত্ন নিয়ে জড়ো করে বন্ধুদের। ‘আবার বছর কুড়ি পরে’ ওদের দেখা হয়ে যায় ফেলে আসা খেলার মাঠে, ধুলো জমা বইয়ের ভাঁজে, প্রতিশ্রুতির শান্ত বিকেলে, হারিয়ে যাওয়া মনকেমনের ভিড়ে। পরিচালক শ্রীমন্ত সেনগুপ্ত তাঁর আসন্ন ছবিতে এ ভাবেই সাজিয়েছেন ‘বনি’, ‘অরুণ’, ‘নীলা’ এবং ‘দত্ত’-কে। এই চার চরিত্রে অভিনয় করেছেন অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, আবির চট্টোপাধ্যায়, তনুশ্রী চক্রবর্তী এবং রুদ্রনীল ঘোষ।
লুক কেন গুরুত্বপূর্ণ?
সাদামাটা বন্ধুত্বের গল্পে লুক তৈরি করা নেহাত সহজ ছিল না। শ্রীমন্ত বললেন, ‘চার-পাঁচ জন বন্ধুর গল্প। কুড়ি বছরের একটা ফারাক রয়েছে। সে জন্য একই অভিনেতাদের নিতে পারতাম না। সেক্ষেত্রে লুকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। আমাকে স্টাইলিং, ডিজাইনিং, চশমা, কস্টিউম, হেয়ার, মেকআপের উপর নির্ভর করতে হয়েছে। সকলের ক্ষেত্রে তা নয়। যেমন তনুশ্রী বা আবিরের ক্ষেত্রে এটা করতে হয়নি। সচেতন ভাবেই অর্পিতার লুকটা বদলাতে চেয়েছিলাম।’ এই ছবিতে অর্পিতার চরিত্রের নাম বনি। পরিচালকের কথায়, ‘বনি আত্মবিশ্বাসী, ভাইব্র্যান্ট, স্কুলজীবনের টপার। স্কুলের সবচেয়ে সুন্দর দেখতে মেয়ে, যাকে দেখে ছেলেরা হাঁ হয়ে যাবে। সে যখন বড় হবে, তার সেই একই গ্ল্যামার পার্সোনা থাকতে হবে। কোঁকড়া চুল যে প্রথম থেকেই ভেবেছিলাম, তা নয়। বেশ কয়েকটা হেয়ার ট্রাই করতে করতে হঠাৎ একদিন মনে হয়েছে, কোঁকড়া চুলটা ট্রাই করে দেখি।’ এ ছবির স্টাইলিং করেছেন অনিরুদ্ধ চাকলাদার। তিনি বললেন, ‘অর্পিতার যে ধরনের লুক তৈরি হয়েছে সেটা শ্রীমন্তর পছন্দের জায়গা ছিল। ও বলেছিল, এরকম হলে কেমন লাগবে? আমি বলেছিলাম, খুবই ভালো লাগবে। ট্রাই করে দেখি। তারপর সব মিলিয়ে খুবই ভালো লাগল।’
অর্পিতাকে বেশ অন্য রকমের চশমাও পরানো হয়েছে এই ছবিতে। সে প্রসঙ্গে শ্রীমন্ত বললেন, ‘চশমা দিলে ছোটবেলা আর বড়বেলার মুখ মেলাতে সুবিধে হয়। একটা সামঞ্জস্য থাকে। চশমা অনেক খুঁজেছি। সূক্ষ্ম ব্যাপার তো। তবে এমন ফ্রেম চাইনি যেটায় দিদিমণির মতো দেখতে লাগে। বেশি স্টুডিয়াস বা বেশি ফাঙ্কি না হয়ে যায়, সেটাও মাথায় রেখেছিলাম।’
‘চরিত্রায়ন মানেই প্রস্থেটিক নয়’
চার বন্ধুর মধ্যে অর্পিতা এবং রুদ্রনীলের লুক বেশ আলাদা। কিন্তু আবির এবং তনুশ্রীর লুক খুব আলাদা নয়। সেটাই আরও কঠিন, মনে করেন অনিরুদ্ধ। তাঁর মত, ‘সিনেমার চরিত্রায়ন কিন্তু সবসময় প্রস্থেটিক মেকআপ নয়। এটাও খুব কঠিন কাজ। যেখানে একদম কিছু না পাল্টে বা অল্প পাল্টে একটা চরিত্রকে তৈরি করতে হয়। সাধারণ চরিত্রগুলোকে বের করে আনা এবং সাধারণ চরিত্রকে আর একটা চরিত্র থেকে আলাদা করা খুব কঠিন। শিল্পীদের খুব সাহায্য লাগে। ম্যানারিজম পুট করেন শিল্পী, আর আমরা স্টাইলিং টিম একটু এনহ্যান্স করি, তখন একটা আলাদা চরিত্র তৈরি হয়ে ওঠে।’
রিসার্চ ওয়ার্ক
এই ছবির ক্ষেত্রে গবেষণার সুযোগ পেয়েছেন বলে জানালেন কস্টিউমের দায়িত্বে থাকা পৌলমী গুপ্ত। তিনি বললেন, ‘চরিত্রগুলোর বেশ কয়েকটা টাইম ফ্রেম ছিল। আমার রিসার্চের অনেক জায়গা ছিল। চরিত্রগুলোর ছোটবেলাটা যে সময় দেখানো হয়েছে, সেই সময় কী ধরনের জামা কাপড় পরা হতো, তার ছবি বের করেছিলাম। সেগুলো রেফারেন্স পয়েন্ট ছিল। সেটা দেখে প্রেজেন্টেশন তৈরি করেছিলাম। কালার প্যালেট কী হবে, সকলের সঙ্গে বসে ঠিক করেছিলাম। তারপর পরিচালকের যা যা ক্রিয়েটিভ ইনপুট, সেটার ফিডব্যাক দিয়েছিলেন। সেইভাবে লুকগুলো হয়েছে। প্রত্যেকটি চরিত্র স্বাভাবিকভাবেই আলাদা।’
বনির চরিত্রের ক্ষেত্রে আগে যেমন অর্পিতার লুক সেট করে তারপর তাঁর ছোট বয়সের চরিত্রের অভিনেত্রী দিব্যাশা দাসের লুক সেট হয়েছে। রুদ্রনীলের ক্ষেত্রে নাকি আবার উল্টো। তাঁর ছোটবেলার চরিত্রের অভিনেতা পুষণ দাশগুপ্তর এমনিতেই কোঁকড়া চুল। রুদ্রনীলের ক্ষেত্রেও সেটাই রাখতে চেয়েছিলেন পরিচালক। ‘পুষণের ন্যাচারাল লুকটা রাখতে চেয়েছিলাম। এটার একটা মজার গল্প আছে। আমরা অনেকগুলো লুক ট্রাই করছিলাম। রুদ্রর জন্য একটু কার্লি হেয়ারই পছন্দ ছিল। এই হেয়ারে কখনও ওকে দেখিনি আমরা। আমাদের মেকআপ আর্টিস্ট রামদা একটা উইগ নিয়ে এসেছিলেন, একটা জায়গায় আটকা পড়েছিল বলে সেদিন সব উইগ আনতে পারেননি। আমি বললাম, কিছু কী আছে? উনি বললেন, একটাই আছে, সাঁইবাবা টাইপ কিছুর জন্য ব্যবহার হয়। আমি বললাম, দেখি না বসিয়ে। তারপর সেটা বসানোর পর সকলেরই পছন্দ হয়েছিল। লুক আর স্টাইলের উপর আমরা অনেক খেটেছি, সময় দিয়েছি। আর্টিস্টরাও সহযোগিতা করেছেন। বারবার লুক সেট করেছেন। খুব সহজ গল্প। কিন্তু এমন লুক দিতে চেয়েছি, যাতে দর্শকের তাদের দেখে মনে হয়, এই তো এদের আমরা ভিড়ের মধ্যে বাসে, ট্রামে দেখি,’ বললেন শ্রীমন্ত।
কোন লুক আপনার জন্য?
সাধারণত পর্দায় যাঁদের দেখেন দর্শক, তাঁদের ফ্যাশন, স্টাইল অনুকরণ করার চেষ্টা করেন অনেকেই। নায়ক, নায়িকারাই হয়ে ওঠেন তাঁদের ফ্যাশন আইকন। এই ছবির চার বন্ধুকে দেখে যদি ফ্যাশন স্টেটমেন্ট তৈরি করতে চান, তাহলে কীভাবে এগবেন? মুশকিল আসান করলেন পৌলমী।
• ‘আবার বছর কুড়ি পরে’-তে অর্পিতার লুক লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, প্রচুর শীত পোশাক রয়েছে। এখান থেকে দর্শক ক্লু পেতে পারেন। এই ছবিটায় তাঁকে খুব সুন্দর মিউটেড টোনে দেখা যাবে। যাঁরা প্যাস্টেল শেড পছন্দ করেন, মিউটেড লুক পছন্দ করেন, তাঁদের অর্পিতার লুকটা ভালো লাগবে। এটা খুব অভিজাত এবং মিনিমালিস্টিক। চারটি চরিত্রের ক্ষেত্রেই লুক মিনিমালিস্টিক। কোথাও কোনও বাড়াবাড়ি নেই। পৌলমী মনে করেন, স্ক্রিনে আন্ডার প্লে করলে সেটাই বাস্তবোচিত লাগে।
• তনুশ্রীকে দেখা যাবে অভিজাত ভারতীয় লুকে। দারুণ সব নকশার কুর্তি পরেছেন নায়িকা। হ্যান্ডলুম শাড়ি পরেছেন। যাঁরা এগুলো পছন্দ করেন এই লুকটা ফলো করতে পারেন। খুব মিনিমাল। কিন্তু সুন্দর।
• আবিরের চরিত্রটি স্মার্ট, কর্পোরেট, ঝকঝকে, আবার কিছুটা রক্ষণশীল। সুন্দর লিনেন ফ্যাব্রিকে তাঁকে দেখতে পাবেন দর্শক। কলকাতার মতো আবহাওয়ায় লিনেন খুব আরামদায়ক হবে, মত পৌলমীর।
• আবার রুদ্রনীলের চরিত্রের মধ্যে প্রচুর মজার উপাদান রয়েছে। কস্টিউম ডিজাইনার তাঁকে হাতে বোনা সুন্দর মাফলার পরিয়েছেন। যাঁরা রঙিন মাফলার ভালোবাসেন, তাঁরা এই লুক ট্রাই করতে পারেন।
নায়ক, নায়িকার অন্ধ অনুকরণ একেবারেই সমর্থন করেন না পৌলমী। একই সুর অনিরুদ্ধর গলাতেও, ‘যিনি স্টাইল করতে চাইছেন, তাঁর সঙ্গে যেটা মনে হয় মানানসই, সেটা নিজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারেন। যেটা মানাচ্ছে, তার একটু ভেরিয়েশন করে ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।’