প্যাচপেচে গরমে যতটা সময় চুলের যত্ন নিয়ে ভাবি আমরা, শীত এলে আর সে ভাবনা থাকে কি? অথচ ঠান্ডায় চুলের ক্ষতি হয় বিস্তর। কীভাবে রুখবেন? লিখেছেন অন্বেষা দত্ত।
ঠান্ডা হাওয়ায় শীতের আরামে উড়ে যায় উদ্দাম কেশরাশি— এতেই খুশি? একদম নয়। শীতকালে চুলের স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবার আছে বইকি। বিশেষ করে জট পড়া, চুল মাঝখান থেকে ভেঙে যাওয়া, ডগা ফেটে যাওয়া— এই সব সমস্যা কিন্তু চড়চড় করে বেড়ে যায় রুক্ষ আবহাওয়ায়। এসব সমস্যার জন্য হেয়ার সিরাম মাস্ট। এতদিন ব্যবহার করব করব ভেবেও যারা কিনে ওঠেননি, তাদের এবার ভেবে দেখার সময় এসেছে।
‘...কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা...’-র মতো ঘন সুন্দর চুল পেতে কি ইচ্ছে হয় না? একটু সময় থাকতে যত্নের মধ্যেই কিন্তু লুকিয়ে আছে মেঘবরণ কেশ রহস্য। হেয়ার সিরাম তার অন্যতম একটা উপাদান। মনে রাখতে হবে, তেল আর হেয়ার সিরাম কিন্তু এক জিনিস নয়। তাই ভাবার কোনও কারণ নেই, তেল মাখছি মানে আর সিরাম লাগানোর দরকার নেই বা তেলই সিরামের কাজ করবে! তবে সিরাম অয়েল বেসড। রুক্ষ চুল শুষ্ক আবহাওয়ায় আরও রুক্ষ হয়ে পড়ে। তার জন্যই প্রয়োজন অতিরিক্ত যত্ন। সেই কাজটাই করতে পারে সিরাম। চুলকে বশে আনতে এর জুড়ি মেলা ভার। তার সঙ্গে রুক্ষ চুলের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতেও সিরাম দারুণ কার্যকরী।
শীতে চুল থেকে স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারিয়ে যায়। তাই চুলও প্রাণহীন হয়ে পড়ে। রুক্ষ চুলের ক্ষেত্রে সে সমস্যা কয়েক গুণ বেশি। সিরাম চুলের আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে যেমন সাহায্য করে, তেমনই চুলের উপরে একটা এমন লেয়ার তৈরি করে যাতে চুল আরও ভেঙে না যায়। শ্যাম্পু করার পরে ভেজা চুলে কিছুটা সিরাম তাই মহৌষধের মতো। চুল লম্বা হলে সিরামের পরিমাণ আর একটু বাড়াতে হবে। বেশি ঘন চুল থাকলে যে ধরনের সিরাম লাগাবেন, পাতলা চুলে সে সিরাম কিন্তু চলবে না। তাই আপনার চুলের জন্য কোন সিরাম আদর্শ সেটা বুঝে নিয়ে তবেই ব্যবহার করবেন। সিরাম যেমন রুক্ষ আবহাওয়ায় উপযোগী, তেমনই প্রচণ্ড গরম, ধুলো, দূষণ, অতিবেগুনি রশ্মি ইত্যাদিতে চুলের যা ক্ষতি হয়, তা দূরে সরাতেও ম্যাজিকের মতো কাজ করে। একবার লাগানোর পরে চুলে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে সিরাম। অর্থাৎ একবার সিরাম লাগালে পরের বার শ্যাম্পু করার আগে পর্যন্ত চুলে জট কম পড়বে, উজ্জ্বলতাও বজায় থাকবে। চুলে যারা নিয়মিত স্টাইলিং করেন, হিট দেওয়ার ফলে তাদের চুল দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাঁদের জন্য সিরাম বেশ কাজে দেয়।
কিন্তু বাইরে থেকে এধরনের কোনও প্রোডাক্ট লাগাতে গেলেই আমাদের মনে উঁকি দেয় নানারকম চিন্তা। আদৌ এটা চুলের ভালো করবে তো নাকি পরে দেখা যাবে আরও চুল উঠে যাচ্ছে? তার জন্য বিশেষজ্ঞর মতামত নেওয়া অবশ্যই দরকার। কথা হচ্ছিল এ শহরের হেয়ার এক্সপার্ট জলি চন্দের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘বাজারে অনেক ধরনের সিরাম পাওয়া যায় । কিন্তু বহু হেয়ার ড্রেসার না বুঝে শুধু টার্গেট মিট করতে হবে বলে সবাইকে নানা সিরাম গছিয়ে দেন। এটা ঠিক নয়। সিরাম চুলে সফটনেস আর শাইন আনে। পাতলা চুলে হালকা সিরাম লাগানো চলে। তবে কতটা পরিমাণে কীভাবে লাগাতে হবে, ঠিকঠাক জেনে নেওয়া দরকার।’ জলির মতে, চুলের টেক্সচার না দেখে বোঝা সম্ভব নয় কী ধরনের সিরাম কার জন্য উপযোগী হবে। তিনি বুঝিয়ে দিলেন, যাঁদের চুল পাতলার দিকে এবং কিছুটা রুক্ষ, তখন সিরাম লাগাবেন খুব অল্প পরিমাণে।
ব্যস্ততার কারণে অফিসে বেরনোর তাড়া থাকলে যাঁরা সিরাম লাগাবেন, তাঁরা স্নান করে বেরনোর পরে ভেজা চুলেই সেটা লাগাবেন। ভেজা চুলে একটু বেশি লাগে সিরাম, কারণ সেটা জলে মিশে হালকা হয়ে যাচ্ছে। আর শুকনো চুলে কিছুটা কম লাগে। এছাড়া চুলের ঘনত্ব আর লেন্থ অনুযায়ী অবশ্যই সিরামের পরিমাণ বদলায়। এমনিতে সিরাম খুব বেশি লাগানোর মতো উপাদান নয়, জানালেন জলি। এটি বেশি পরিমাণে লাগালে চুল অয়েলি হয়ে যায়, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। যে কোম্পানির সিরাম ব্যবহার করছেন, তার ঘনত্ব কেমন, সেটাও দেখার বিষয়। ‘অনেক সিরাম আছে খুব পাতলা আবার অনেক সিরাম আছে খুব গাঢ় আর ঘন। ঘন সিরামে আর্গান অয়েল থাকে, সেগুলো দামিও হয়। তাই সিরাম কেমন তার উপরেও নির্ভর করবে চুলে সেটা কতটা পরিমাণ লাগাবেন,’ বললেন জলি। কিছু কিছু কোম্পানির সিরাম সিন্থেটিক উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। এগুলো সাধারণত পাতলা হয়। তবে ভালো মানের সিরাম ব্যবহার করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। সিরামের দামই বুঝিয়ে দেয় কোনটির মান কতটা ভালো।
আর একটা জরুরি কথা মাথায় রাখতে বললেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘মিডিয়াম থেকে ফাইন হেয়ারের জন্য সিরাম ভালো। কিন্তু যাঁদের ফ্রিজি, কার্লি বা থিক হেয়ার, তাঁদের জন্য সিরাম কার্যকর নয়। তাদের লাগাতে হবে ভালো কোনও হেয়ার স্মুদনিং ক্রিম বা লিভ ইন কন্ডিশনার।’ অর্থাৎ ঝাঁকরা-মোটা চুল বা কোঁকড়া চুল বাগ মানাতে সিরাম নৈব নৈব চ। সিরাম চুলকে নরম করে বা উজ্জ্বলতা দেয় ঠিকই, কিন্তু ফ্রিজ কন্ট্রোলের জন্য জলি চন্দের মতো হেয়ার এক্সপার্ট পরামর্শ দিচ্ছেন স্মুদনিং ক্রিমের।
মডেল: মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
ছবি: সুদীপ্ত চন্দ