বিয়ের মরশুম তো এসেই গেল। কোনটা চাই, স্বতন্ত্র সাবেকি সাজ নাকি ট্রেন্ডে গা ভাসানো? লিখেছেন অন্বেষা দত্ত।
পত্রলেখা পাল এবং রাজকুমার রাও। দিনকয়েক আগেই চারহাত এক হয়েছে দু’জনের। বলিউড সেলিব্রিটি বিয়ে নিয়ে যেমন হইচই হয়, তা তাঁদের ক্ষেত্রেও ছিল। তবে এ বিয়েতে বাঙালির নজর একটু বেশি ছিল, কারণ কনে অর্থাৎ পত্রলেখা পাল বাঙালি। বাঙালি কনে কেমন সাজে হাজির হলেন সকলের সামনে, সেটা একটু বেশি কৌতূহলের বিষয় বইকি। হলও তাই! সাজ নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর যারা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে, তাঁদের রাজ-পত্রের বিয়ের ছবি দেখাতে এক মুহূর্ত দেরি করেনি টিভি বা অন্য প্রিন্ট মিডিয়া। হইচইয়ের ঠেলায় আসমুদ্রহিমাচলের চোখে সবচেয়ে বেশি কোনটা ধরা পড়ল জানেন? পত্রলেখার মাথার লাল ওড়নাটি। লাল চেলির দিন ভুলে এখন বাঙালি কনের মাথায় জায়গা করে নিয়েছে কারুকাজ করা বড়সড় ওড়না। সে ওড়নাতেও এবার আর একটু চমক। হবু স্বামীর উদ্দেশে বাংলা হরফে লেখা: ‘আমার পরান ভরা ভালোবাসা আমি তোমায় সমর্পণ করিলাম।’ কনের মাথার ওড়নার ধার বরাবর উজ্জ্বল অক্ষরগুলো ফুটে উঠেছে। তা দেখেই ঘুম ছুটেছে অনেকের। কেউ তর্ক করছে হঠাৎ সাধুভাষা কেন? কেউ প্রশ্ন তুলছে ভাষার প্রয়োগ নিয়েও। কেউ আবার ওড়নার নতুন ফ্যাশনে পুরো বোল্ড আউট। তাই আপাতত জোর চর্চায় কনের ঘোমটা।
খ্যাতনামা ডিজাইনার সব্যসাচীর লেখায় তৈরি হয়েছে পত্রলেখার ওড়নাটি। তাই স্বভাবতই ওড়নার ‘ওজন’ অনেকটা বেশি! এর আগে ২০১৮ সালে বলিউড তারকা দম্পতি দীপিকা পাড়ুকোন এবং রণবীর সিংয়ের বিয়ের সময় দীপিকার মাথার ওড়নাতেও হিন্দিতে লেখা ছিল ‘সদা সৌভাগ্যবতী ভবঃ’। এবার পত্রলেখার বিয়েতে উঠেছে সে প্রসঙ্গও। বাঙালি বিয়েতে কি তাহলে এবার এমন বার্তাবাহী ওড়না ভবিষ্যতে ট্রেন্ড হতে চলেছে?
কথা হচ্ছিল সেলিব্রিটি মেকআপ আর্টিস্ট অনিরুদ্ধ চাকলাদারের সঙ্গে। তিনি অবশ্য বিষয়টির সঙ্গে একমত নন। তাঁর কথায়, ‘আজকাল সব কিছু নিয়ে হইচই একটু বেশি হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার সুবাদে এটা বেড়েছে। কিছু বছর আগেও কোনও তারকার বিয়েতে এতটা প্রচার দেখা যেত না। আজকাল তো বিয়েও নাকি ‘প্রি-সোল্ড’! তাই জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য এমন অনেক কিছুই চলতে পারে।’ কিন্তু তারকা দম্পতি যা করেন, তা অনুসরণ করার একটা প্রবণতা তো থাকেই আমজনতার মধ্যে? অনিরুদ্ধ বললেন, ‘কেউ ফলো করতে চাইলে করতেই পারে। কিন্তু আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়নি এটা অনুসরণ করার মতো কিছু। বাঙালি কনের সাজে অবাঙালি ছোঁয়া আমি পছন্দ করি না। সাবেকি টিস্যু বেনারসির ওড়নার বরং অনেক বেশি আবেদন। অথবা চেলির ওড়না, অতীতে যেটা পাওয়া যেত। ওই যে পাতলা ফিনফিনে অরগ্যাঞ্জার ওড়না, ওটা আমার সবচেয়ে ফেভারিট কনে সাজানোর ক্ষেত্রে।’ সঙ্গে তার সংযোজন, ‘একসময় চৈতালিদির (দাশগুপ্ত) পদ্য-পোশাক খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। তাতে বাঙালিয়ানার ছাপ ছিল। ঐতিহ্যবাহী বলতে এরকম কিছুকেই বোঝায়।’
তবে আপাতত বাঙালি হবু কনেদের অনেকেই মজেছে ওড়নায় শব্দ খুঁজতে। বিভিন্ন বুটিকে তেমন নকশার ওড়না অর্ডার হতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। যে যার পছন্দমতো শব্দবন্ধ ডিজাইনারকে আগে জানিয়ে দিচ্ছেন। সেইমতো ওড়নায় সেজে তাক লাগিয়ে দিতে হবে যে!