বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
চারুপমা
 

অবসরে সৃষ্টিসুখ

কোভিড কেড়ে নিয়েছে জীবনের আনন্দ। দিয়েছে অখণ্ড অবসর। বাড়ির কাজ ক্লান্ত করে, মন চায় আরও কিছু যাতে অবসাদ ঘিরে না ধরে। তেমনই সৃষ্টিতে ডুব দিয়েছেন অনেকে। তাঁদের কথা লিখেছেন অন্বেষা দত্ত।

সময় হাতে অফুরান। বাড়ির কাজ সেরে বই পড়ে গান শুনেও যেন দিন কাটতে চাইছে না। তখন কী করা? নিজেদের মতো করে সেই সময়টাকে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন চন্দ্রতপা সেনগুপ্ত এবং পায়েল ভট্টাচার্য। ওঁদের সঙ্গে কথায় কথায় জানতে পারলাম একজন হ্যান্ডমেড সোপ তৈরি করছেন যাতে ক্ষতিকর কেমিক্যালের রেশমাত্র নেই, আর অন্যজন বাড়িতে থাকা বিভিন্ন সামগ্রী থেকে তৈরি করছেন ঘর সাজানোর নানা জিনিস। এই সময়ে এ ধরনের কাজে নিজেকে জড়িয়ে রেখে বাঁচার রসদ খুঁজে নিয়েছেন ওঁরা।
 প্রথমে বলি চন্দ্রতপার কথা। সাবান বানানোর ইচ্ছে কীভাবে হল, প্রশ্ন করতে তিনি জানালেন, তাঁর নিজের স্কিন খুব সেনসিটিভ ছিল। তাই দোকান থেকে আনা সাধারণ সাবান ব্যবহার করে রীতিমতো অসুবিধে হতো। তখন থেকেই কেমিক্যাল-ফ্রি সাবানের কথা ভাবছিলেন তিনি। লকডাউনের মধ্যে অবসর পেয়ে সেই ভাবনাকেই কাজে পরিণত করেছেন এই তরুণী। প্রথমে নিজের ব্যবহারের জন্য তৈরি করলেও চন্দ্রতপার বানানো সাবান এখন ব্যবহার করছেন অনেকেই। ভালো ফিডব্যাকও পাচ্ছেন তিনি। 
 চারকোল, মুলতানি মাটি, তার সঙ্গে অ্যালোভেরা এবং এসেনশিয়াল অয়েলের মতো কিছু প্রাকৃতিক উপাদান হাতের কাছে মজুত থাকলেই হল, জানালেন চন্দ্রতপা। তাঁর কথায়, ‘এ ধরনের সাবান বানানো এমনিতে খুবই সহজ। আর নানা সামগ্রী ব্যবহার করে বানাতে বানাতে যখন এক্সপার্ট হয়ে যাবেন, তখন অনেক ধরনের ভ্যারাইটি খুঁজে পাবেন নিজেই।’ নিজের জন্য সাবান বানাতে গেলে স্কিন টাইপ বুঝে নিয়ে সেই ধরনের উপাদান ব্যবহার করতে হবে, বললেন তিনি। গরমের উপযোগী সাবান বানাতে নিম, অ্যালোভেরা, মুলতানি মাটি খুব কার্যকরী উপাদান। এর সঙ্গে এসেনশিয়াল অয়েলের মধ্যে নিতে পারেন ইউক্যালিপটাস অয়েল, লেমনগ্রাস বা রোজমেরি ইত্যাদি, বললেন তিনি। আবার কেউ চাইলে স্ট্রবেরি বা অরেঞ্জের মতো সুগন্ধও যোগ করতে পারেন। এধরনের সাবান বাচ্চারা ভালোবাসে। এই সাবানে সিন্থেটিক কোনও উপাদানই তিনি ব্যবহার করেন না, তাই কোনও ভয় নেই। 
 একটি সাবান বানানোর সাধারণ পদ্ধতি বলে দিলেন তিনি। ‘এর জন্য নানারকম সোপ বেস পাওয়া যায়। সেটা কিনে নিন। সঙ্গে কিনুন বিভিন্ন ধরনের মোল্ড। সোপ বেসটা গলিয়ে নিয়ে তার মধ্যে নিমপাতার রস আর অ্যালোভেরা যোগ করুন। এর সঙ্গে একটা সুন্দর গন্ধসমৃদ্ধ কোনও এসেনশিয়াল অয়েল, এক চামচ অলিভ অয়েল এবং একটা ভিটামিন ই ক্যাপসুল কেটে তার ভেতরের জেল উপাদানটি দিয়ে দিন। এই সব উপকরণ দিয়ে একটি ১০০ গ্রাম সাবান তৈরি হয়ে যাবে। সব ক’টি উপকরণ একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে মোল্ডে ঢেলে দিন। তারপর ওটা জমাট বাধতে দিন। এমনিতে জমতে ২০-২৫ মিনিট লাগে। তবে এই গরমে সময়টা একটু বেশি লাগে। তাই চাইলে ফ্রিজে রেখেও জমাতে পারেন।’ এতটাই সহজ প্রক্রিয়ায় বানিয়ে ফেলতে পারেন প্রাকৃতিক সাবান আর মনের আনন্দে ব্যবহার করুন সেটা। চন্দ্রতপা এখন এই সাবান অনেকের জন্য বানাচ্ছেন, তাঁরা উৎসাহ দিচ্ছেন বলে লকডাউনে তাঁর সময়ও কাটছে তরতরিয়ে।
 এবার আসি পায়েলের কথায়। অবসরকে তিনিও কাজে লাগাচ্ছেন তাঁর মতো করে। কখনও বেলুন দিয়ে ফ্লাওয়ার ভাস, কখনও বা ডিজাইনার টব হোল্ডার বানিয়ে ফেলছেন এক নিমেষে। তিনি টিউশন পড়ান। তার ফাঁকেই দিব্যি সৃজনশীল কাজ খুঁজে নিয়েছেন।
 জন্মদিনে আজকাল ঘরের ঠিক মাঝখানে বড় বেলুন লাগানোর চল রয়েছে। সেই বেলুন দিয়েই ইউটিউব ঘেঁটে তিনি সাজিয়ে তুলেছেন ফুলদানি। পায়েলের কথায়, ‘বেলুনটা ফুলিয়ে বড় করে নেওয়ার পরে খবরের কাগজ থেকে অনেকগুলো ছোট স্ট্রিপ কেটে নিন। একটা বাটিতে ফেভিকল আর জল মিশিয়ে রাখুন। তারপর ওই কাগজের টুকরোগুলো দু’তিনটে লেয়ার করে বেলুনের গায়ে ফেভিকল দিয়ে আটকে দিতে হবে। তারপর সেটা ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। দেখবেন শুকিয়ে সেটা বেশ শক্ত হয়ে গিয়েছে। এবার বেলুন বেঁধে রাখার জায়গাটা কাঁচি দিয়ে কেটে দিন। ভয় পাবেন না, বেলুন মোটেই চুপসে যাবে না। কাটা অংশটা হাত দিয়ে ভালো করে চেপে দিলে ওটা বন্ধ থাকবে। ওটা হল ভাসের তলার অংশ। আর ওপরের দিকটায় একটা ভালো করে সার্কল করে সেই অংশটা কেটে দিন। কেটে ফেলার পর পুরো বেলুনের গায়ে খবরের কাগজের টুকরোর ওপরে হোয়াইট সিমেন্ট জল আর ফেভিকলের সঙ্গে মিশিয়ে ভালো করে লাগিয়ে দিন।’
 তিনি বললেন, ‘এই হোয়াইট সিমেন্ট লাগানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে বেলুনের গায়ে যতটা মসৃণ করে সিমেন্টিং করা যায়, ততই ভালো। আর ওপরের কাটা অংশে গোল শেপ করে একটু মোটা করে দিন। ওটা ভাসের মুখের দিক। ভালো করে মসৃণ করার জন্য বেলুনের ওপরে হোয়াইট সিমেন্ট শুকিয়ে গেলে তাতে স্যান্ড পেপার ঘষে দিতে পারেন। তাতে আরও স্মুদ হবে। আর কেউ যদি মনে করেন ওপরের অংশটা রাফ রাখবেন, তাহলে সেটাও করতে পারেন। ওটা অন্যরকম দেখাবে। এবার পুরো সাদা অংশে নিজের পছন্দমতো ডিজাইনে পেইন্ট করে নিন। তৈরি হয়ে গেল চোখজুড়ানো ফুলদানি।’
 এছাড়া বাড়িতে অনেক সময় রং করার যেসব বড় বাকেট অপ্রয়োজনে পড়ে থাকে, সেগুলোকেও নিজের মতো সাজিয়ে পেইন্ট করে কোনওটিকে টুল বা কোনওটিকে টব-হোল্ডারে পরিণত করেছেন পায়েল। 
অবসরকে সৃষ্টিশীলতায় ভরিয়ে এভাবেই মন খারাপকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন তিনি।
 হাতের কাছে সহজ কাজ খুঁজে মন ভালো রাখা এতটাই সহজ!

5th     June,   2021
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ