বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
চারুপমা
 

জমাটি ফ্যাশনে
বসন্ত বাহার

গত ১৭ থেকে ২১ মার্চ হয়ে গেল ‘এফডিসিআই ল্যাকমে ফ্যাশন উইক ২০২১’। সেখানে সামার-ফ্রেন্ডলি পোশাকের সম্ভার ছিল দেখার মতো। মুম্বই থেকে কয়েকজন 
ডিজাইনারের সৃষ্টির খবর দিচ্ছেন দেবারতি ভট্টাচার্য।


বসন্ত বিদায় নেয়নি তবু  উষ্ণতার দাপট তুঙ্গে। তাই গ্রীষ্মের নতুনত্বে ভরা ফ্যাশন ট্রেন্ড নিয়েই হাজির এবারের ‘ল্যাকমে ফ্যাশন উইক’। কোভিড ১৯-এর কারণে  ফ্যাশন উৎসবটির অধিকাংশই  এবার  ভার্চুয়াল। তবু কিছু শোয়েরও আয়োজন ছিল। আর ছিল নামী-অনামী ডিজাইনারদের নতুনত্বে ভরা সৃষ্টির ভিড়।   

সৃষ্টির জোয়ারে অনামিকা খান্না
এই ফ্যাশন উইকে প্রথম রাতটি  মাতিয়ে তোলেন নামকরা ডিজাইনার অনামিকা খান্না। তাঁর সৃষ্টি— ‘টাইমলেস দ্য ওয়ার্ল্ড’ এক অপরূপ আবহ তৈরি করেছিল। নারী ও পুরুষ দু’জনের জন্যই অনামিকার এই আয়োজন। একই ক্যানভাসে তিনি হালফ্যাশন আর সাবেকিয়ানার মেলবন্ধন ঘটিয়ে এক নতুন শিল্পের জন্ম দেন। তাঁর কাজে ক্রুশ, এমব্রয়ডারি আর ফেব্রিকের বাহার নজর কাড়ার মতো। জুতোর ওপর এমব্রয়ডারির কাজ অনামিকার এই প্রদর্শনের অন্যতম আকর্ষণ।

নবীনের জয়গান
পুরনো নামী ডিজাইনারদের  পাশাপাশি নতুন, অল্প নামী ডিজাইনারদেরও সুযোগ দেয় এই ফ্যাশন। এবছরও সেই নিয়মেই আইএনআইএফডি-র ‘জেন নেক্সট’ জোন থেকে উঠে এলেন বাংলা এবং কাশ্মীরের দুই ডিজাইনার। বাংলার নবাগত ডিজাইনার রাহুল দাশগুপ্ত পুরুষদের ফ্যাশনে অভিনবত্ব এনেছেন। আর কাশ্মীরি ডিজাইনার ওয়াজাহাত রাথের তাঁর ‘রফুঘর’ কালেকশনের মাধ্যমে কাশ্মীরের ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে জীবন্ত করেছেন। 

প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি
গ্রীষ্মের বিকেলে হাল্কা মেজাজের পোশাক নিয়ে ফ্যাশন র‌্যাম্পে হাজির ছিলেন ডিজানার অর্পিতা মেহতা। তাঁর এই কালেকশনের নাম ‘রিফ্লেকশনস’। ফুল, লতাপাতা সহ প্রকৃতির নানা উপাদানকে তিনি কাফতান, স্ট্র্যাপি ম্যাক্সি, সারারা, সামার প্যান্ট, স্কার্ট, গাউনে ফুটিয়ে তোলেন। অর্পিতার আয়োজনে প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি ধরা পড়ে।

রঙিন দুনিয়া
বসন্তের বাহারি রং নিয়ে খেলা করেছেন ডিজাইনার পঙ্কজ-নিধি। বসন্তের ফুল গেঁথে তাঁরা তাঁদের স্প্রিং স্পেশাল কালেকশন ‘ক্যালাইডো’ তৈরি করেছেন। পোশাকে নতুনত্ব আনতে সিকুইনের কাজ, ফ্রিল এবং ভিন্ন ধাঁচের নকশার শরণ নিয়েছেন তাঁরা। ফ্রক, মিনি স্কার্ট-টপ, জ্যাকেট, হট প্যান্ট সহ হাল্কা, ট্রেন্ডি পোশাক এই দুই ডিজাইনারের পোশাকের বৈশিষ্ট্য। শিফন, জর্জেটের উপর রেট্রো-গ্রাফিক প্যাটার্ন, আর জিওমেট্রিক মোটিফ সাজিয়েছেন তাঁরা। রঙের ক্ষেত্রে পঙ্কজ-নিধি ব্যবহার করেছেন হাল্কা লাল, হাল্কা অরেঞ্জ, ঘন গোলাপি, আল্ট্রা ভায়োলেট নীল, ফ্লুরোসেন্ট সবুজ ইত্যাদি।  এই করোনা আবহে  এক রঙিন দুনিয়ার সন্ধান দিয়েছেন এই দুই ডিজাইনার।   

যাযাবর ফ্যাশন
রীতু কুমারের শো মনে একরাশ প্রত্যাশা জাগিয়ে তোলে।  আর আশ্চর্যের কথা, প্রতিবারই সেই প্রত্যাশা পূরণ করেন  ডিজাইনার। তাঁর বোহো পার্টি কালেকশন নিয়ে তিনি এসেছিলেন এই ফ্যাশন উইকে। আদিবাসী স্টাইলে ফ্যাশনের মোড়ক— রীতু কুমারের ফ্যাশন লাইনের এটিই উপযুক্ত ক্যাপশন। সেই স্টাইলের সঙ্গে মিলিয়ে ফ্যাব্রিক, রং ও নকশায় নানা ধরনের বৈচিত্র্য আনেন তিনি।  যেমন সয় ফেব্রিকের তৈরি শাড়ি, ফ্লোরাল প্রিন্ট, প্যাচওয়ার্ক, লেস বা এমব্রয়ডারির নকশা ইত্যাদি রীতু কুমারের পোশাকের বিশেষত্ব। তাঁর কালেকশনে ছিল টিউনিক, কাফতান, ধোতি প্যান্ট, ওয়ান পিস সহ আরও নানা ট্রেন্ডি লুকের পোশাক। টেলিভিশন খ্যাত ডিজাইনার নিধি ইয়াশা এবার র‌্যাম্পে উপস্থাপন করেন  পূর্ব ইউরোপ, মধ্য এশিয়া এবং ভারতের বিভিন্ন পোশাক। তবে চেনা পোশাকেই অচেনা লুক দিয়ে তিনি তাঁর কালেকশনকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছেন। নিজের এই আল্ট্রা মডার্ন, ভিন্নধর্মী কালেকশনের নাম দেন ‘দ্য জিপসি ওয়াইফ’। পোশাকে তাঁর বোহেমিয়ান লুক স্পষ্ট।

ফ্যাশনে দিগন্ত বিস্তৃত 
এই আসরে একমুঠো তাজা বাতাস ছড়িয়ে দিয়ে গেল গৌরী-নয়নিকার সৃষ্টি। এই দুই ডিজাইনার তাঁদের ক্যানভাসে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের মধ্যে প্রকৃতির যে নানা রূপ, তারই বর্ণনা দিয়েছেন।  প্রতিটি মুহূর্ত তাঁরা নিজেদের কাজের মাধ্যমে জীবন্ত ও রঙিন করে তুলেছেন। তাঁদের সেই রংবাহারি কালেকশনে ফুলেল সুঘ্রাণ থেকে সাগরের নোনা গন্ধ— সবই উঠে এসেছে। সৃষ্টি হয়ে উঠেছে বর্ণময়।

সামার ২১
মাসাবা মানেই একটু অন্য ধরনের ঝলমলে আয়োজন। তৃতীয় রাতে মাসাবা তাঁর ‘সামার ২১’ কালেকশনের প্রদর্শন করেন। এবং তারই মাধ্যমে তিনি পোশাকে ফুটিয়ে তোলেন নানা ট্রেন্ডি লুক। ট্র্যাক প্যান্ট-টপ, জগার্স প্যান্ট, কাফতান, অফ শোল্ডার গাউন, টাই-আপ ব্লাউজ-স্কার্ট, অ্যাসিমেট্রিক স্কার্ট এবং কুর্তা, ম্যাক্সি স্কার্ট সহ বিভিন্ন প্যাটার্ন ও ডিজাইন তাঁর পোশাকে ছিল। আর সেসব নকশায় প্রস্ফুটিত প্রকৃতির নানা উপাদান। সেগুলোকেই মোটিফ হিসাবে ব্যবহার করেন মাসাবা।

পায়েলের কিসমেট কালেকশন
ফ্যাশন উইক-এর চতুর্থ দিনের বিকেলে ডিজাইনার পায়েল সিংঘলের আয়োজনেও ছিল বসন্তেরই ছোঁয়া। তাঁর কালেকশন পুরোপুরি ফিউশনধর্মী। প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের শিল্পকে একই সুতোয় গেঁথে এক নয়নাভিরাম আবহ সৃষ্টি করেন তিনি। পায়েলের এই আয়োজনের নাম ছিল ‘কিসমেট’। তাঁর ডিজাইন করা হাল্কা লেমন রঙের ফ্লোরাল প্রিন্টের ট্রেন্ডি লেহেঙ্গা-চোলি আর জ্যাকেট পরে র‌্যাম্পে ঝড়  তোলেন  বলিউড নায়িকা আথিয়া শেঠি। পোশাকের সঙ্গে ছিল ম্যাচিং ব্যাগ, স্কার্ফ আর গয়না। অ্যাক্সেসরিজে এই বৈচিত্র্য পায়েলের কালেকশনকে আরও ব্যতিক্রমী করে তোলে।

পোশাকের ঝঙ্কার
ভারতীয় সাবেকি পোশাকের নকশায় ঝঙ্কার তুলে আবার এক অনন্য রজনী উপহার দিলেন খ্যাতনামা ডিজাইনার মণীশ মালহোত্রা। তাঁর পোশাকের দ্যুতিতে উজ্জ্বল ছিল উৎসবের চতুর্থ এই রাত। গ্লিটার, শিমার, জারদৌসি, অ্যাপ্লিক, এমব্রয়ডারি কাজের লেহেঙ্গা-চোলি, গাউন, শাড়ি, শর্ট পালাজো-কুর্তি সহ নানা বাহারি পোশাক ছিল তাঁর ঝলমলে  কালেকশনে। পুরুষদের জন্য কুর্তা-পাজামা, শেরওয়ানির অভিনব স্টাইলও ছিল এই রাতে। মণীশের ডিজাইন করা লেহেঙ্গা-চোলি পরে কিয়ারা আদবানি র‌্যাম্প মাতালেন। আর ঘন নীল রঙের কুর্তা-প্যান্ট পরে কার্তিক আরিয়ান র‌্যাম্পে উষ্ণতা ছড়ান।     

মধুরেণ সমাপন 
ফ্যাশন উইকের শেষ দিনে এক নান্দনিক রাত উপহার দিলেন ডিজাইনার রুচিকা সচদেব। তাঁর কালেকশনের নাম ‘রেডি সেট প্লে’। তাঁর কালেকশনে ছিল পাশ্চাত্য পোশাকের পাঁচমেশালি। রং, প্যাটার্ন, শেপ সবকিছু নিয়েই পরীক্ষানিরীক্ষায় মেতেছিলেন রুচিকা। নানা রং তিনি তাঁর ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। স্ট্রাইপ ওয়ান পিস স্যুট, কোট ফ্রক, স্কার্ট সেট, ট্রেন্ডি শাড়ি, পালাজো, ক্রপ টপ, ক্রপ টপ-ট্র্যাক প্যান্ট স্যুট সহ আরও অনেক ডিজাইন ছিল তাঁর কালেকশনে। এই জমকালো রাতটি আরও দ্যুতিময় হয়ে ওঠে বলিউড নায়িকা অনন্যা পান্ডের উপস্থিতিতে। ফ্যাশন উইকের শেষ রাতে উজ্জ্বল রঙের প্লিটেড স্কার্ট আর ফুল স্লিভস ক্রপ টপ পরে র‌্যাম্পে ঝড় তুলেছিলেন অনন্যা।

3rd     April,   2021
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ