বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
চারুপমা
 

মডেল: কৌশাম্বী চক্রবর্তী, দিয়া মুখোপাধ্যায় ও ইন্দ্রাণী পাল, ছবি: অরিজিৎ দত্ত, শুভাশিস পাচাল, পোশাক: রাহুল সর্দার, আয়োজক: মধুরিসা শীল, ব্যবস্থাপনা: রাজ বন্ধন, মেকআপ: মল্লিকা দাস, সুপ্রভা দাস, পম্পা, গ্রাফিক্স : সোমনাথ পাল

ভালো থাকার সহজ উপায়

কোভিড নিয়ে একটা বছর কম সন্ত্রস্ত ছিলাম না আমরা। এবার সামনে তাকানোর পালা। নতুন বছর শুরুর পর কয়েকটা বিষয় মাথায় রেখে চললে সুস্থ থাকা হবে খুব সহজ। উডল্যান্ডসের ডায়েটিশিয়ান সুবর্ণা রায়চৌধুরী-র সঙ্গে আলোচনায় অন্বেষা দত্ত।

এক্সারসাইজ লাগবেই
ডায়েট, উপোস বা খাবার স্কিপ! যা-ই করুন না কেন, এক্সারসাইজের কোনও বিকল্প কোনওদিন নেই। সেই কথাটাই আরও একবার মনে করালেন ডায়েট বিশেষজ্ঞ সুবর্ণা রায়চৌধুরী। তাঁর মতে, প্রতিদিন জিমে যাওয়ার দরকার নেই। ঘরের ভিতরে নানা কাজের মধ্যে দিয়ে একটু ঘাম ঝরানোর ব্যবস্থা করে নিতে পারলেই হল। দিনের যে কোনও সময়ে আধ-এক ঘণ্টা হাঁটা খুব কাজে দেয়। সকালবেলা উঠেই মর্নিং ওয়াকে বেরিয়ে পড়তে হবে, এমন কোনও কথা নেই। কাজের ফাঁকে সময় ম্যানেজ করে হাঁটা শরীরের জন্য ভালো। তবে মনে রাখবেন, একটু জোরে হাঁটা দরকার, যাতে ঘাম ঝরে। সকালের বদলে বিকেলে হাঁটলেও কোনও অসুবিধা নেই। অফিস থেকে ফেরার পথে আপনার নির্দিষ্ট স্টপের দু’টো স্টপ আগেই নেমে যান। তারপর বাকি পথ হেঁটে ফিরে আসুন। সুবর্ণার পরামর্শ, যাঁরা বাইরে বেরন না, তাঁদের ঘরের কাজের মধ্যেই একটু ফাঁক পেলে হাত-পা চালিয়ে নিতে হবে। ঝাড়ামোছা করা বা ঘর গোছানোর নানা কাজেই খরচ হয়ে যাবে ক্যালোরি।

খাবার বাছাই
খাবার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকাটা খুবই জরুরি। কে কী খাবেন, কতটা পরিমাণে খাবেন, সেটা অনেকের কাছেই খুব স্পষ্ট নয়। সুবর্ণা জানালেন, অনেকে কিছু না বুঝেই খাদ্যাভ্যাস থেকে কার্বোহাইড্রেট বাদ দিয়ে দেন। কেউ হয়তো শুধু প্রোটিনই খেয়ে যাচ্ছেন। এগুলো কখনও করবেন না। সুবর্ণা বলছেন, একটা ব্যালান্সড ডায়েট খুব দরকার। সেই ডায়েটের মধ্যে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, মিনারেলস, ভিটামিন এবং জল সবটাই রাখতে হবে। কার্বোহাইড্রেট থেকে আমরা অনেক এনার্জি পাই। আগেকার দিনে শরীর খারাপ হলে সাবু বা বার্লি দেওয়া হত। কেন? ওগুলো হাই কার্বোহাইড্রেট ডায়েট। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, ওই খাদ্যাভ্যাসেও বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি ছিল। তা বলে তিনি সবাইকে খুব বেশি করে কার্বোহাইড্রেট খেতে বলছেন, এমনটা মোটেও নয়। বরং ভারসাম্য রেখে খাবারের পাত সাজানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই জোর দিেচ্ছন। তাঁর মতে, কার্বোহাইড্রেট সহজপাচ্যও। তাছাড়া ব্যালান্সড ডায়েটে দু’-একটা জিনিস বন্ধ করে দিলেও, খাবারের সব গুণমান বজায় রেখে সুস্থ জীবন কাটানো যায়। যেমন, বাদ দেওয়ার মধ্যে রাখতে পারেন চিনি। একইভাবে খাবারের সঙ্গে খুব বেশি নুন খাওয়ার অভ্যাস একেবারে ছেড়ে দিন। বাইরের খাবার, তেলমশলা, ভাজাভুজি যদি কমানো যায়, কাজে দিতে পারে সেটাও। সফট ড্রিঙ্ক বা যে ধরনের জিনিসে মিষ্টির পরিমাণ বেশি, সেগুলোও বাদ দিন একেবারে।
অনেকেই বাচ্চার জন্য হেলথ ড্রিঙ্ক পছন্দ করেন। একবারও ভেবে দেখেন না সেই হেলথ ড্রিঙ্ক বাচ্চার জন্য আদৌ প্রয়োজনীয় কি না। স্বাস্থ্যকর বাচ্চার কিন্তু ওই ধরনের হেলথ ড্রিঙ্ক মোটেও উপকারে লাগবে না। বরং বাড়িতে তৈরি সাধারণ খাবারদাবার (ভাত ডাল সব্জি মাছ) তার জন্য ছোট থেকেই ভালো। স্বাস্থ্যকর ও ওভারওয়েট বাচ্চাকে প্রোটিন শেক খাওয়ানো আখেরে তার ক্ষতিই ডেকে আনবে বলে জানাচ্ছেন সুবর্ণা। 
আরও একটা বিষয় মাথায় রাখতে বলছেন এই ডায়েট এক্সপার্ট। অনেকেই কোনও একবেলার খাবার স্কিপ করে ভেবে নেন, খুব ডায়েট হল। এটা কিন্তু একেবারেই ঠিক ধারণা নয়। কোনও একটা প্রধান মিল স্কিপ করা আদতে স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। একবার লাঞ্চ বা ব্রেকফাস্ট স্কিপ করে কারও খুব খিদে পাচ্ছে। তখন তিনি পেটপুরে জাঙ্ক ফুড খেয়ে ফেললেন। এতে অনেক বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। অনেকেই বলেন— বাইরে থাকি, সবসময় খাবার খাওয়া বা খাবার সঙ্গে রাখা যায় না। তাঁদের জন্য সুবর্ণার পরামর্শ, নিদেনপক্ষে ফল রাখুন কাছে। অল্প অল্প করে সেটা খান। বাইরে খাবার একান্তই খেতে হলে সেগুলোও বুদ্ধি করে বাছুন। যেমন ধোসা বা ইডলি, যাতে খুব বেশি তেল লাগে না। সঙ্গে কখনও প্লেন ব্রেড। এমন নানা কম্বিনেশনে খাওয়াদাওয়া করুন। ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার। মূল এই তিনটি মিল। আর এদের মাঝের বিরতিগুলোয় একটু হালকা খাবার। সঙ্গে দু’বেলা চা। কোনও সময়েই খাবারের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত যাতে না হয়, খেয়াল রাখুন। ভাতের বদলে রুটি খেতে পারেন। ফাইবার রাখুন খাবারের তালিকায়। তা সে মরশুমি ফল থেকে হোক বা সব্জি থেকে, ফাইবার খুবই কাজে দেবে। ডায়েট করার কথা ভেবে অনেক এটা-সেটা খেয়ে থাকি আমরা। সেটা না করে সাধারণ দালিয়ার মতো খাবার খান রোজ সকালে। অথবা খেতে পারেন ওটস বা সুজি। এই সাধারণ খাবার থাকলে আলাদা করে ফ্লেক্স সিড বা অন্য কিছু খাওয়ার দরকার হয় না। সুবর্ণা বলেন, মনে রাখুন, গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যাতে কম তেমন খাবার খান। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স  বেশি হলে শরীরের ওজন কিন্তু অনেকটাই বৃদ্ধি পায়।

নিশ্চিন্তে ঘুম
ভালো থাকতে সুষম খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে খুব প্রয়োজনীয় একটি দিক হল ঠিকমতো ঘুম। সাধারণ সব পরিশ্রমের পরে দিনে অন্তত সাত ঘণ্টা ঘুম সকলের জন্য দরকারি, জানাচ্ছেন সুবর্ণা। ঘুম ঠিকমতো হলে সারা দিনের অনেক স্ট্রেস কমে যায়।

জল নিয়ম মতে
খাওয়া, ঘুম, ব্যায়ামের মতোই আর একটা জরুরি বিষয় হল ঠিক মাপমতো জল খাওয়া। সুবর্ণা বলছেন, শুধু জল খাওয়া নয়। লিকু‌ইড ইনটেক বাড়াতে হবে। ছোট বাচ্চারা অনেক সময়েই বেশি জল একবারে খেতে পারে না। আমরাও কাজের ফাঁকে সবসময় সময় বার করে জল খেতে পারি না, তার জন্য লিকুইড ইনটেক বাড়ানো খুব জরুরি। শরীরে তরল যাতে বেশি যায়, তার জন্য জলের সঙ্গে সঙ্গে লস্যি, চা (গ্রিন টি হলে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের পক্ষে খুবই ভালো), ডাবের জল, ডালের জল, স্যুপ, ফলের রস এইরকম নানা উপায় আছে। শরীরের মধ্যে যে ক্ষতিকর টক্সিনগুলো আছে, সেগুলো এই সব তরলের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। মোটামুটি সাড়ে তিন-চার লিটার জল লাগে আমাদের শরীরে। তাই দুই থেকে আড়াই লিটার জল খেলে বাকিটা অন্য তরল দিয়ে মেকআপ করতে হবে।

ভালো থাকুক মন
ওজন কমানোর দরকারে সব খাওয়া ছেড়ে বসে থাকলে মনে বিতৃষ্ণা আসতে বাধ্য। তাই সুবর্ণার মতে চাইনিজ বা বিরিয়ানির মতো লোভনীয় খাবার ছাড়া কি চলে! কিন্তু মেপে খান। ওটাই জাদুকাঠি। তেলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকলে জীবনযাপন অনেক সহজ হয়ে যায়। প্রত্যেকের উচ্চতা, ওজন, খাদ্যাভ্যাসের উপর তাঁর সুস্থতা নির্ভর করে। 
নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় ক্যালোরি কতটা কার জন্য, সেটা সুবর্ণার মতো অনেক ডায়েটিশিয়ানই হিসেব কষে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বলে দেন। সেটা মেনে চললে আলাদা করে ডায়েট করছি ভেবে মনের ওপর কোনও চাপ পড়ে না। স্বাদ বদলাতে রোজ একই সব্জির বদলে সমগুণের অন্য সব্জি খান। একদিন একটা সব্জি নেই, তাই হয়তো আপনাকে আলু খেতে হবে। এটা নিয়ে অযথা টেনশন করবেন না। একদিন একটু আলু খেলেই আপনি মোটা হয়ে যাবেন, এমন নয়, ভরসা দিচ্ছেন সুবর্ণা। খাওয়া একটু এদিক-ওদিক হলে পরের দিন একটু বেশি হেঁটে নিন। সঙ্গে আর একটা কথা। নারী হোন বা পুরুষ, মন ভালো রাখতে নিজেকে কিছুটা সময় দিন। যিনি বই পড়তে ভালোবাসেন, তিনি পড়ুন। যিনি গান শুনতে ভালোবাসেন, তিনি গান শুনবেন। কেউ সিনেমা দেখতে ভালোবাসেন, তিনি সেটাই করুন। ছোট ছোট এইরকম কিছু বিষয় মাথায় রেখে চললে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা আপনার হাতের মুঠোয়।

2nd     January,   2021
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ