বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিশেষ নিবন্ধ
 

ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করুন
পি চিদম্বরম

বলা হয় যে ‘দুর্ভাগ্য একা আসে না।’ ৭ মে, ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া সপ্তাহটি বিজেপির জন্য ছিল নির্দয়। ১১ মে সুপ্রিম কোর্ট দুটি রায় দেয়। দুটিই পাঁচজন বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ এবং তারা উভয়েই সংবিধানের মূল বিধানগুলি ব্যাখ্যা করেছিলেন। ওই দুটিই হয়ে ওঠে সরকারের মুখে দুটি জবরদস্ত চপেটাঘাত। তারপর ১৩ মে এল কর্ণাটক নির্বাচনের ফলাফল।
বিপাকে পড়লে বিজেপি সরকার ‘নীরবতা’র আশ্রয় নেয়। সাধারণভাবে আত্মপ্রত্যয়ী মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা বাক্যবাগীশ প্রাক্তন মাননীয় আইনমন্ত্রী কেউই ওই রায় দুটি বা কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে কোনও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি।
সংবিধানের সঙ্গে অন্যায় 
দিল্লির মামলাটি ছিল খুবই সাধারণ। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের ২৩৯এএ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা দিয়েছিল। শীর্ষ আদালত বলেছিল যে, জনশৃঙ্খলা, পুলিস এবং জমি বাদে সমস্ত বিষয়ে নির্বাহী ক্ষমতা দিল্লি সরকারের মন্ত্রিপরিষদের উপর ন্যস্ত। ওইসঙ্গে দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর মন্ত্রিপরিষদের ‘সহায়তা ও পরামর্শ’ অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য। বিভিন্ন ‘সার্ভিস’ নিয়ে ছিল দীর্ঘস্থায়ী সংশয়—সিভিল সার্ভেন্টদের নিয়ন্ত্রণ করবে কে? ১১ মে ঘোষিত রায়ের মাধ্যমে সমস্যাটির অবসান হয় এবং ওই রায়ে বলা হয় যে, ‘সার্ভিসগুলির’ উপর মন্ত্রীদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। ২০১৪ সাল থেকে সরকারের গণতান্ত্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মূল সুরটির প্রতি অসম্মানের দায়ভাগ প্রত্যেক লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে নিতে হবে।
দ্বিতীয় মামলাটি ছিল জটিল, কারণ সংবিধানের দশম তফসিলের বিধানগুলি পূর্ববর্তী রায়গুলিতে প্রামাণিক এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি। ২০০৪ সালে দশম তফসিল সংশোধন করার পর একটি পরিষদীয় দলে ‘বিভাজন’-এর কোনও ধারণা নেই। দলত্যাগের বিপদ উপস্থিত হলে দশম তফসিল শর্তসাপেক্ষে শুধুমাত্র একটি ব্যতিক্রম অনুমোদন করে। সেক্ষেত্রে দুটি শর্তের মধ্যে একটি সন্তোষজনক হওয়া প্রয়োজন: (১) যদি আদি রাজনৈতিক দলটি (পেরেন্ট পলিটিক্যাল পার্টি) অন্য একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিশে যায় এবং সেক্ষেত্রে পরিষদীয় দলের অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতি থাকা প্রয়োজন। (২) যদি বিধায়ক বা বিধায়করা এরকমভাবে অন্য একটি দলের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ঘটনা মেনে না নেন এবং আইনসভায় একটি পৃথক গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করতে চান। যদি দুটি শর্তের কোনটিই পূরণ না-হয়, তবে বিদ্রোহী বিধায়করা পরিষদীয় দলের মধ্যেই থাকবেন এবং মূল রাজনৈতিক (পেরেন্ট পলিটিক্যাল পার্টি) দলের হুইপ মানতে বাধ্য থাকবেন।
অসাংবিধানিক সরকার
মহারাষ্ট্রে এরকম একটি পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। সেখানে একনাথ সিন্ধের নেতৃত্বে ১৬ জন বিধায়ক শিবসেনা পরিষদীয় দল থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের পেরেন্ট পলিটিক্যাল পার্টি সেদিন অন্যকোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একীভূত হয়নি বা মিশে যায়নি (এবং সেটা আজও হয়নি)। সেটি দশম তফসিলের অধীন কোনও ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি ছিল না। তাই বিদ্রোহীরা, ২০২২ সালের ২১ জুন শিবসেনার জারি করা হুইপ অনুসারে কাজ করতে এবং ভোট দিতে বাধ্য ছিলেন। 
দলের সেই হুইপ অমান্য করে একনাথ সিন্ধের গোষ্ঠী বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। তখন রাজ্যপাল কী করলেন? কোনও কারণ ছাড়াই (যা সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে) মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব থ্যাকারেকে বিধানসভায় তিনি আস্থা ভোট চাইতে বলেন। তেমনি উদ্ধব থ্যাকারে (দুর্ভাগ্যজনক পরামর্শে) বিধানসভার মুখোমুখি না-হয়ে পদত্যাগ করে বসেন। অমনি রাজ্যপালও তড়িঘড়ি একনাথ সিন্ধেকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়ে দিলেন এবং সিন্ধে গোষ্ঠী ও বিজেপির জোট সরকারের তরফে শপথ নিলেন একনাথ। এরপর বিদ্রোহী ১৬ জন বিধায়ককে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করার জন্য স্পিকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল শিবসেনা। কিন্তু স্পিকার বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছিলেন (এটা অনেক আইনসভায় জলভাত হয়ে গিয়েছে)।
সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে যে, ‘হুইপ’ হল রাজনৈতিক দলের (এই ক্ষেত্রে শিবসেনা) তরফে নিযুক্ত একজন ব্যক্তি। বিধানসভার অধিবেশন ডাকার এবং আস্থা ভোটগ্রহণের জন্য উদ্ধব থ্যাকারেকে নির্দেশ দেওয়ার কোনও কারণ ছিল না। অযোগ্যতার আবেদনের (ডিসকোয়ালিফিকেশন পিটিশন) বিষয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সিদ্ধান্ত নিতেও বাধ্য ছিলেন স্পিকার।
এই নিবন্ধে, আমি সাংবিধানিক কর্মকর্তাদের আচরণ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এটা স্পষ্ট যে, রাজ্যপাল তাঁর এক্তিয়ার ‘অতিক্রম করেছেন’, অন্যদিকে নিজের এক্তিয়ার ‘প্রয়োগ করেননি’ স্পিকার। দায়িত্ব পালনে অবহেলার প্রশ্নে দায়ী ছিলেন দু’জনেই। একটি অসাংবিধানিক সরকার বসানো বা ২০২২ সালের জুন থেকে সেটাকে চলতে দেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা উভয়েই জড়িত ছিলেন। 
সার্বিক লক্ষ্য
বিভিন্ন রাজ্যে কুখ্যাত অপারেশন লোটাস; উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং অসমে বুলডোজার বিচার; এক বা একাধিক অজুহাতে অবিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে সরকারি অর্থ দিতে না-চাওয়া কিংবা তা কমিয়ে দেওয়া; বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে ফৌজদারি মামলার তাণ্ডব সৃষ্টি; সাংবিধানিকভাবে সন্দেহজনক আইন—যেমন ৩৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন এবং নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত আইন; অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নের হুমকি; জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) তৈরির হুমকি; রাজ্যের আইনগুলিকে অগ্রাহ্য করার জন্য তালিকা ৩-যুগ্ম তালিকার ব্যবহার (যেমন শিক্ষা ক্ষেত্রে); জিএসটি আইনের অধীনে কর আদায়ের ক্ষমতার উপর থাবা বসানো; এবং অন্যান্য অনেক কাজের উদ্দেশ্য হল, একটি সার্বিক লক্ষ্য অর্জন করা—একটি সর্বশক্তিমান এবং সর্বব্যাপী কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে ১৪০ কোটি মানুষকে শাসনের একছাতার নীচে নিয়ে আসা। একে বলে ‘কেন্দ্রিকতা’ (সেন্ট্রালিজম)। ‘কেন্দ্রিকতা’ বিরাজমান দেশগুলির উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল চীন, রাশিয়া, তুরস্ক প্রভৃতি দেশ।
সুপ্রিম কোর্টের দুটি রায় ‘কেন্দ্রিকতার’ প্রতি ঝুঁকতে নিষেধ করেছে। কর্ণাটকের রায় মোদির সাধের ডাবল-ইঞ্জিন সরকারকে বেলাইন করে ছেড়েছে। ‘কেন্দ্রিকতা’র বিরুদ্ধে সেরা প্রতিষেধক হল আমাদের নির্বাচনী এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে বহুত্বের সুন্দরটি বজায় রাখা। সেখানে রাজ্যগুলিতে বেশ কয়েকটি জয়ী দল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় ক্ষমতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে অন্তত দুটি রাজনৈতিক দল। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে দুটি লড়াইয়ে জয় হয়েছে। এছাড়া, আরও একটি যুদ্ধে জয় হয়েছে কর্ণাটকে। কিন্তু জয়ের জন্য সামনে রয়েছে আরও অনেক লড়াই। 
 লেখক সাংসদ ও ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। মতামত ব্যক্তিগত

22nd     May,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ