বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিশেষ নিবন্ধ
 

গুজরাত, কোনও অনুসরণযোগ্য মডেল নয়
পি চিদম্বরম

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অক্টোবর থেকে বেশ কয়েকবার গুজরাত সফর করেছেন। আশা করা হচ্ছে, রাজ্যে ১ ও ৫ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে, নভেম্বরে আরও কয়েকবার সফর করবেন তিনি। বাস্তবিকই, গুজরাতের ৩৩টি জেলার প্রতিটিতেই তিনি প্রোগ্রাম করেছেন। নির্বাচন কমিশন যতক্ষণ চোখ বুজে ছিল প্রধানমন্ত্রী ততক্ষণ ছিলেন ‘উদ্বোধন’ ধামাকার মধ্যে। এগুলির খরচ-খরচার বিল ‘সরকারি’ কর্মসূচি হিসেবে মেটানো 
হয়েছে, অথচ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বিষয়বস্তুর ভিতরে ‘সরকারি’ কিছুই ছিল না। তাঁর সমস্ত 
ভাষণে (গুজরাতে, ভারতের অন্যত্র, এমনকী বিদেশেও) একটি থিমেরই পুনরাবৃত্তি ঘটেছে: আধুনিক, পুনরুত্থিত ভারতের ইতিহাসের সূচনা হয়েছে ২০১৪ সালে। একই যুক্তিতে আধুনিক, পুনরুত্থিত গুজরাতের ইতিহাস ২০০১ সালে 
শুরু হয়েছিল। এই বিবৃতির নেপথ্যে যদি কোনও 
ধাক্কা (গুজরাত, এমনকী ভারতের আগে?) 
থেকে থাকে তবে সেই রহস্য উন্মোচনের ভার আমি পাঠকের উপর ছেড়ে দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রীর মতে, গুজরাত হল ভারতের 
জন্য মডেল। ভারতকে বিশ্বের কাছে মডেল দাবি করার থেকে তিনি মাত্র এক ধাপ দূরে 
অবস্থান করছেন! প্রধানমন্ত্রীর দাবির উপর গুজরাতের জনতা ভোট দেবেন ডিসেম্বরের শুরুতে। দুর্ভাগ্য 
এই যে, অন্য দাবিটির প্রেক্ষিতে ভোট দেওয়ার 
সুযোগ পাবেন না বিশ্ববাসী। আমি মনে করি, এটা তাঁদের দুর্ভাগ্য।
ঈর্ষা করা নয়
এবার গুজরাত মডেলটি যাচাই করা যাক। আমি কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেছি:
 বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আছে। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত সেখানে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন তিনজন! এই তিনজনের মধ্যে, সবচেয়ে বেশিদিন দায়িত্ব পালন করেন বিজয় রুপানি—২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত। কিন্তু তিনি এমন একটি অনপনেয় দাগ রেখেছিলেন যে তাঁর পুরো মন্ত্রিসভাসমেতই তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যেটা সামাজিক রীতিনীতির পক্ষে শোভন নয়। ‘রিভলভিং ডোর চিফ মিনিস্টারস’ হল আধুনিক, পুনরুত্থিত গুজরাতের (এই প্রশ্নে পূর্বসূরি কর্ণাটক ও উত্তরাখণ্ড) জন্য পছন্দের মডেল।
 গুজরাত মডেলের আর একটি বৈশিষ্ট্য হল ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার। আপনি হয়তো ভেবে নিয়েছেন, ডাবল ইঞ্জিন মানে—‘প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী’। তাহলে আপনি ভুল। এই ডাবল বা জোড়া ইঞ্জিন হলেন—‘প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী’। ডাবল ইঞ্জিনে গতি সঞ্চারের আগে গুজরাতে কিছুই চলে না। যখন বাকি ভারত গুজরাত মডেল অনুসরণ 
করবে, তখন আমরা রাজ্য সরকারগুলি থেকে মুক্তি পেতে পারি, এবং মুক্তি পেতে পারি রাজ্যগুলি থেকেও। আর এইভাবে গড়তে পারি—‘এক ভারত, এক সরকার’। 
গর্ব নিম্নগামী
 গুজরাত মডেলের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল বৃদ্ধির হার হ্রাস, কিন্তু গুজরাতি গর্বের ঊর্ধ্বগমন। চার বছরে রাজ্যের জিডিপি বৃদ্ধির হার নিম্নরূপ:
২০১৭-১৮: ১০.৭ শতাংশ, ২০১৮-১৯: ৮.৯, ২০১৯-২০: ৭.৩ এবং ২০২০-২১: -১.৯। ২০১৭-১৮ থেকে সর্বভারতীয় জিডিপির বৃদ্ধির 
হার কমেছে কি না, আপনি জানতে চাইতে পারেন। উত্তর হল—‘অবশ্যই, হ্যাঁ’। কারণ 
গুজরাত মডেলকেই সোৎসাহে অনুকরণ করেছে ভারত। যদি মহামারী পরবর্তী গুজরাতের 
২০২১-২২ সালের জিএসডিপিতে একটি 
লম্ফঝম্প পরিলক্ষিত হতো, সর্বভারতীয় জিডিপিতেও মিলত তার সাক্ষাৎ। গুজরাত গতকাল যা করেছে, ভারত সেটা করবে আগামী কাল।
 আর যে একটি বৈশিষ্ট্য ভারত গ্রহণ করবে তা হল—‘কোনওপ্রকার ক্ষমা প্রার্থনা নয়, নয় 
পদত্যাগ’ নীতি। মোরবি সেতু বিপর্যয়ে ৫৩টি 
শিশুসহ ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়। এমন মাত্রার 
বিপর্যয়েও প্রধানমন্ত্রী মিডিয়ার সামনে কৈফিয়ত দেননি এবং সাংবাদিকদের প্রশ্ন আহ্বান করেননি। হাইকোর্ট নজর করেছে যে—মাত্র সওয়া এক 
পৃষ্ঠার একটি চুক্তি হয়েছিল; ‘এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট’ কিছু নেই; নেই কোনও টেন্ডার; বরাত পাওয়া ঠিকাদারের কোনও প্রাক-যোগ্যতা নেই; প্রতিযোগিতামূলক দর আহ্বান করা হয়নি; কোনও শর্ত নেই; ব্রিজটি নতুন করে রংচং হওয়ার (তথাকথিত মেরামত) পর কোনও ফিটনেস সার্টিফিকেট নেওয়া হয়নি; এবং তবুও সেতুটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। নীতিগতভাবে গুজরাত ‘কোনওপ্রকার ক্ষমা প্রার্থনা নয়, নয় পদত্যাগ’-এ বিশ্বাস করে। আগামীর ভারতও শূন্য-জবাবদিহিতার এই মূলনীতি অনুসরণ করবে।
 সিংহের অহঙ্কারের মতো (অগ্রাধিকার যেখানে গির অরণ্য) গর্ব আছে সংখ্যায়। সংখ্যা গুজরাতি অস্মিতা (গর্ব) বৃদ্ধি করে। উদাহরণস্বরূপ, গুজরাতে প্রতিশ্রুত বিনিয়োগ এবং প্রকৃত বিনিয়োগের এই সারণিটি দেখুন:
প্রতিশ্রুতি এবং বাস্তবতার মধ্যে ব্যবধান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে, বাড়বে ভারতেরও অস্মিতা।
নারী, যুব ও শিশু
 মহিলাদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে 
হয় (না)—শিশুকন্যা থেকে যার শুরু—গুজরাত তার একটি মডেল। সেক্স রেশিও বা লিঙ্গ 
অনুপাত (পুরুষের অনুপাতে নারী) হল ৯১৯, যেখানে সর্বভারতীয় গড় ৯৪৩। যেখানে লেবার পার্টিসিপেশন রেট (এলপিআর) ৪১.০ শতাংশ, একই হার মহিলাদের ক্ষেত্রে মাত্র ২৩.৪ শতাংশ। নিখোঁজ কন্যারা কোথায়? তবে তারা বেঁচেবর্তে থাকলেও তাদের ৭৬ শতাংশ বাড়ির চৌহদ্দির বাইরে কাজ করে না।
 গুজরাত মডেল যুবকদের ঘাড়ে কাজের বোঝা চাপায়নি। সেখানে, ২০-২৪ বছর বয়সি যুবদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১২.৪৯ শতাংশ। নির্বাচনের আগে তাঁরা বেশ বিশ্রামে আছেন।
 পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যের যত্নসহ শিশুদের লালনপালনের একটি মডেল (নয়) গুজরাত। শিশুদের মধ্যে 
৩৯ শতাংশ স্টান্টেড (যাদের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গিয়েছে) এবং ৩৯.৭ শতাংশ আন্ডারওয়েট (ওজনে স্বাভাবিকের থেকে কম) এবং  ২৫.১ শতাংশ 
শিশু ওয়েস্টেড (ঠিকমতো খাবার না পেয়ে 
শুকিয়ে যাচ্ছে)। এই সূচকগুলিতে ভারতের 
৩০টি রাজ্যের মধ্যে গুজরাত রয়েছে ২৬ থেকে ২৯তম স্থানে!
 গুজরাত মডেল বিশ্বস্ততার সঙ্গে আরএসএসের এই বিচার-সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে যে ‘এই দেশে বসবাসকারী সমস্ত ভারতীয় হিন্দু’। ফলস্বরূপ, রাজ্যের জনসংখ্যার ৯.৬৭ শতাংশ মুসলমান হয়েও ‘হিন্দু’। এই যুক্তিতে, গুজরাত মডেলের অধীনে, ১৯৯৫ সাল থেকে পাঁচবছর অন্তর অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে (১৮২টি আসনে) বিজেপি কোনও মুসলিম প্রার্থী দেয়নি।
গুজরাত মডেল অন্যান্য রাজ্যে এবং অন্যান্য দেশেও অবশ্যই রপ্তানি হবে। গুজরাত মডেলের জন্য একটি ভোট সেই লক্ষ্যগুলি অর্জন নিশ্চিত করবে। বেশ তবে তাই হোক (আমিন)। 
 লেখক সাংসদ ও ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। মতামত ব্যক্তিগত

21st     November,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ