একটি স্বনির্ভর জাতি গঠনের জন্য, নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সাল থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু করেন। তাঁর ভারতে সমাজের সমস্ত অংশের মানুষ মৌলিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। তাঁর নেতৃত্বে উন্নয়নের গতি এবং মাত্রা একটি নতুন উদীয়মান ভারতের বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে।
দক্ষ, স্বচ্ছ, দ্রুততর এবং মসৃণ পরিষেবা শেষপ্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার সংস্কৃতি গড়ার ক্ষেত্রে এই সরকার অনেকাংশে সফল হয়েছে। মোদিজির সরকার বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রক এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে আরও সুষ্ঠু সমন্বয় গড়ে তুলে সাফল্যের এক উচ্চসীমা অতিক্রম করতে বদ্ধপরিকর। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’—এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই মোদিজি ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে ভারতকে ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করার সঙ্কল্প নিয়েছেন।
২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী ‘পিএম গতি শক্তি জাতীয় মাস্টার প্ল্যান’ সূচনা করেন। নতুন ভারত গড়ার জন্য পরিকাঠামো ক্ষেত্রের ‘গতি’-কে বৃহত্তর ‘শক্তি’ প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর সঙ্কল্পের সঙ্গে, আগামী ২৫ বছরের জন্য ভারতের ভিত্তি স্থাপন করা হচ্ছে ... আমরা কেবলমাত্র সময়মতো প্রকল্পগুলি সম্পূর্ণ করার একটি কর্মসংস্কৃতি গড়ে তুলেছি না, প্রকল্পগুলিকে সময়ের আগেই শেষ করার চেষ্টাও করছি।’
মহামারী যেভাবে ভারতের সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজকর্মকে ব্যাহত করেছিল, সেক্ষেত্রে ভূ-রাজনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ করতে ভারত ছিল সঙ্কল্পবদ্ধ।
এই মাস্টার প্ল্যান প্রধানমন্ত্রী হাতে নিয়েছেন আগামী ২৫ বছরের ভিতরে ভারতকে একটি ‘উন্নত’ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে। এটি মূলত একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। আমার সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রকসহ ১৬টি কেন্দ্রীয় মন্ত্রককে একত্র করবে। একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গড়ে উঠবে। এই সম্মিলিত বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন অংশের আর্থ-সামাজিক বিকাশ ঘটাবে। বিশেষ করে যে-সমস্ত জেলার বিরাট প্রত্যাশা রয়েছে। এই পরিকল্পনা উপজাতীয় অঞ্চল, পার্বত্য অঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একটি সংযোগ পরিকাঠামো গড়ে তুলবে।
গত কয়েক বছরে সরকার একটি সামগ্রিক জনকল্যাণমূলক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে পরিকাঠামো উন্নয়নের উপর বিশেষ জোর দিচ্ছে। প্রধান পরিকাঠামো প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে অংশীদারদের জন্য সামগ্রিক পরিকল্পনার প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান ঘটেছে। এর ফলে অতীতের সমস্যাগুলির মোকাবিলা সহজ হয়েছে। পৃথক পরিকল্পনা ও নকশা নয়, তার পরিবর্তে, এই জাতীয় মাস্টার প্ল্যানের অধীনে একটি অভিন্ন প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হবে। তার জন্য সামনে থাকবে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি।
সড়ক ও মহাসড়ক মন্ত্রক দেশব্যাপী একটি অত্যাধুনিক মাল্টি-মডেল পরিকাঠামো গড়ে তোলার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তার ফলে জাতীয় মাস্টার প্ল্যানের অধীনে যে অগ্রগতি ঘটেছে তা উল্লেখযোগ্য।
মন্ত্রিসভায় আমার বিভিন্ন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী সবসময় কিছু ‘ভ্যালু অ্যাড’ করে থাকেন এবং অমূল্য উদ্ভাবনী ধারণা দেন। বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলির প্রতি তাঁর সবসময় নজর থাকে। ব্যক্তিগতভাবে সেসবের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন। তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সমস্ত অংশীদার এবং কর্মীদেরও উৎসাহিত করেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং।
প্রধানমন্ত্রী মোদি এমনই একটি ক্ষেত্রে আমার নিজের রাজ্য মহারাষ্ট্রের মন্দির শহর পান্ধারপুরের সঙ্গে দু’টি সড়ক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। উন্নত সংযোগ গড়ে তুলতে তিনি এটি করেছেন ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে। শ্রীসন্ত দানেশ্বর মহারাজ পালখি মার্গের পাঁচটি অংশ এবং শ্রীসন্ত তুকারাম মহারাজ পালখি মার্গের তিনটি অংশের চার লেনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি।
দেখুন তিনি কীভাবে সংযোগ গড়ে তোলেন। ‘আমার শ্রমিক ভাইদের’ কাছ থেকে আশীর্বাদ হিসেবে তিনটি জিনিস চেয়েছিলেন তিনি। এক, মহাসড়কের দু’পাশে চলার পথের ধারে গাছ থাকবে। দুই, রাস্তার ধারে নির্দিষ্ট দূরত্বে পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হবে। তিন, পান্ধারপুরকে ভারতের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন তীর্থস্থানে পরিণত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের ধারণার মধ্যে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, আধুনিকতা এবং সাংস্কৃতিক ও সভ্যতার ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ।
প্রধানমন্ত্রীর অন্যান্য প্রধান উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে—সাগরমালা, ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডর, ন্যাশনাল লজিস্টিক পলিসি এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডর, উড়ান-আরসিএস, ভারতনেট, ডিজিটাল ইন্ডিয়া, পার্বতমালা। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ আমাদের ভারতমালা পরিকল্পনাকে সমৃদ্ধ ও সার্থক করেছে।
ভারতমালা পরিকল্পনা সারা দেশে নতুন মহাসড়ক প্রকল্প নির্মাণের কেন্দ্রীয় সহায়তাপুষ্ট উচ্চ প্রত্যাশার একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রজেক্ট। উপজাতীয় ও অনগ্রসর এলাকাসহ দূরবর্তী অঞ্চলগুলির মধ্যে গ্রামীণ এলাকায় সংযোগ স্থাপনে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।
ভারতমালা পরিকল্পনার অধীনে জাতীয় মহাসড়ক কর্তৃপক্ষ এবং জাতীয় মহাসড়ক ও পরিকাঠামো উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন গ্রিন ফিল্ড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে। ৩৫টি মাল্টি-মোডাল লজিস্টিক পার্কও নির্মিত হচ্ছে দ্রুত।
কিছু প্রধান এক্সপ্রেসওয়ে এবং করিডরের কাজ শীঘ্রই সম্পন্ন হতে চলেছে। যেমন দিল্লি-মুম্বই এক্সপ্রেসওয়ে, আমেদাবাদ-ধলেরা এক্সপ্রেসওয়ে, দিল্লি-অমৃতসর- কাটরা এক্সপ্রেসওয়ে, বেঙ্গালুরু-চেন্নাই এক্সপ্রেসওয়ে, আম্বালা-কোটপুটলি এক্সপ্রেসওয়ে, অমৃতসর-ভাতিন্ডা-জামনগর এক্সপ্রেসওয়ে, রায়পুর-ভিজেডজি এক্সপ্রেসওয়ে, হায়দরাবাদ-ভিজেডজি এক্সপ্রেসওয়ে, আরবান এক্সটেনশন রোড-২, চেন্নাই-সালেম এক্সপ্রেসওয়ে এবং চিত্তোর-থাচুর এক্সপ্রেসওয়ে।
রূপায়ণের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো প্রকল্প। যেমন—জোজিলা সুড়ঙ্গ এবং জেড-মর্থ, যা শ্রীনগর এবং লেহকে সংযুক্ত করবে।
আমার মন্ত্রকের অধীনে সড়ক ও মহাসড়ক পরিকাঠামোর সমস্ত অভূতপূর্ব অগ্রগতি, উন্নয়ন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্ব এবং দূরদর্শিতা ছাড়া সম্ভব হতো না। তিনি নিরলসভাবে চব্বিশ ঘণ্টাই কাজ করেন। নতুন ভারতের লক্ষ্য অর্জনে তিনি আমাদের উৎসাহ জুগিয়ে চলেছেন।
আজ শনিবার, আমাদের পরম প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রীর ৭২তম জন্মদিন। এই পুণ্যমুহূর্তে তাঁকে সম্মান জানাতে আমার মন্ত্রকের পক্ষ থেকে সমস্ত উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে তাঁকেই উৎসর্গ করা হবে।
লেখক কেন্দ্রের সড়ক পরিবহণ ও জাতীয় মহাসড়ক মন্ত্রী। মতামত ব্যক্তিগত