বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিশেষ নিবন্ধ
 

কানে ‘কান্ট্রি অব অনার’-এর মর্যাদা পেল ভারত
অনুরাগ সিং ঠাকুর

ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরার নিস্তব্ধ উপকূলে এখন কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৫ তম সংস্করণ আয়োজনের ব্যস্ততা। এবছর ‘মার্শে ডু ফিল্মস’-এর উদ্বোধনী সন্ধ্যার মূল ভাবনার দেশ হিসেবে ভারত বিশ্বের দর্শকদের সামনে দেশীয় চলচ্চিত্রের উৎকর্ষ, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং গল্প বলার অসামান্য ঐতিহ্য তুলে ধরতে চায়। ভারত ও ফ্রান্স তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বছর উদযাপন করছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্যারিস সফর এবং ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে তাঁর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কূটনৈতিক গুরুত্বের এই প্রেক্ষাপটেই ভারতকে কান চলচ্চিত্র উৎসবের মার্শে ডু ফিল্মে ‘কান্ট্রি অব অনার’-এর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
শুরু থেকেই ‘ফেস্টিভ্যাল দি কান’ ভারত-ফ্রান্স সম্পর্ক সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর সূচনা হয়েছিল ১৯৪৬ সালে, যখন বিশিষ্ট ভারতীয় চলচ্চিত্রকার চেতন আনন্দের সিনেমা ‘নীচা নগর’কে ‘পাম ডি’অর’ প্রদান করা হয়েছিল। এর ঠিক এক দশক পর ১৯৫৬ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালীকে’ও ‘পাম ডি’অর’ দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে অমিতাভ বচ্চনকে এই উৎসবের উদ্বোধন করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বছরের পর বছর ধরে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের অগনিত কুশীলব এখানে জুরির ভূমিকা পালন করেছেন। 
এই বছর কানে ভারতের উপস্থিতি বিভিন্ন দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। এই প্রথম রেড কার্পেটের জন্য আমাদের প্রতিনিধি চয়নে বৈচিত্রের উপর নজর দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ভাষা ও অঞ্চলের অভিনেতা এবং চলচ্চিত্র নির্মাতাদের পাশাপাশি থাকছেন সঙ্গীত রচয়িতারা এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মের প্রতিনিধিরা। এমন একজন লোকশিল্পী থাকছেন, যিনি তাঁর গানের মধ্য দিয়ে আট থেকে আশি সবাইকেই মুগ্ধ করেছেন। ভারতীয় সিনেমার প্রাণবন্ত বৈচিত্র তুলে ধরতে ভারতীয় সঙ্গীত জগতের দিকপালরা ইন্ডিয়া প্যাভিলিয়নে অনুষ্ঠান করবেন। মিডিয়া ও বিনোদন ক্ষেত্রে ভারতীয় স্টার্ট-আপগুলি তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রদর্শন করবে। অ্যানিমেশন ও ভিস্যুয়াল এফেক্টসে ভারতের দক্ষতা প্রদর্শন করতে উপস্থিত থাকবেন অ্যানিমেশন ক্ষেত্রের দক্ষ প্রতিনিধিরা। ভারতীয় সিনেমা ‘রকেট্রি’র বিশ্বব্যাপী মুক্তি হবে কান চলচ্চিত্র উৎসবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার বহু চলচ্চিত্র কানে প্রথমবার দেখানো হবে। সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এই প্রথম কান ক্লাসিক বিভাগে প্রদর্শিত হবে তাঁর ধ্রুপদী চলচ্চিত্র ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র রিমাস্টার করা সংস্করণ। 
কানে ভারতের উৎসবমুখর উপস্থিতি এবং বিশ্বজুড়ে আমাদের চলচ্চিত্রের উৎকর্ষের স্বীকৃতি, ভারতকে বিশ্বের কনটেন্ট হাব বা বিষয়বস্তুর কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করেছে। বর্তমানে রুচি ও পছন্দ পশ্চিম থেকে পূর্ব অভিমুখী। চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে ভারতের যাত্রাপথকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আজ আমরা যখন ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ পালন করছি, তখন আমাদের মনে রাখা উচিত, চলচ্চিত্র ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অশান্ত সময়ের মোকাবিলা করে আমাদের বিজয় গাথা চিত্রিত হয়েছে চলচ্চিত্রে। 
মিডিয়া ও বিনোদন ক্ষেত্র আজ ভারতের ‘সৃজনশীল’ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের সৃজনী শক্তিকে তুলে ধরছে। মোদি সরকার ভারতে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে গত ৮ বছরে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারের চলচ্চিত্র অনুকূল নীতি এবং সহ প্রযোজনার সুযোগ উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের মতো বিভিন্ন রাজ্য নিয়েছে। ২০১৮ সালে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে দৃশ্যশ্রাব্য পরিষেবাকে ১২টি চ্যাম্পিয়ন পরিষেবা ক্ষেত্রের অন্যতম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি। এই ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতির লক্ষ্যে সম্প্রতি এই শিল্পের প্রথম সারির প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি এভিজিসি টাস্ক ফোর্স তৈরি করা হয়েছে। ভারতের জন্য একটি নীতিগত পথ নির্দেশিকা তৈরি করে দেওয়া এই টাস্ক ফোর্সের কাজ। আমরা নিজেদের বিশ্বের পোস্ট প্রোডাকশন হাবে পরিণত করতে চাই। কয়েক সপ্তাহ আগেই ৫,৯০০টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের চিত্র, তথ্যচিত্র এবং ছায়াছবিকে নিয়ে ভারতে বিশ্বের বৃহত্তম ডিজিটাইজেশন ও পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর লক্ষ্য হল ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের চলচ্চিত্র ঐতিহ্যের সংরক্ষণ, সুরক্ষা ও প্রচার। 
আমরা লক্ষ্য করেছি, ভারত এবং সারা বিশ্বে মিডিয়া ব্যবসা ও বিষয়বস্তু সৃষ্টির ধরন, ব্যবহার ও পরিবেশন পাল্টে গিয়েছে। কৃত্রিম মেধার উন্মেষ, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, মেটাভার্সের মতো প্রযুক্তির উদ্ভব ভারতের দক্ষ তথ্য প্রযুক্তি কর্মীদের সামনে সম্ভাবনার এক দিগন্ত খুলে দিয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে ওটিটি-র বাজার বার্ষিক ২১ শতাংশ হারে বাড়তে পারে, ২০২৩ সালের মধ্যে এই বাজার পৌঁছতে পারে প্রায় ১২,০০০ কোটি টাকায়। আজ ভারতীয় প্ল্যাটফর্মগুলি বিদেশি প্ল্যাটফর্মগুলিকে ছাপিয়ে গেছে। সম্প্রচারক এবং দূরভাষ সংস্থাগুলি ভারতের বাজার ধরার জন্য উদগ্রীব হয়ে রয়েছে।
শহরে-গ্রামে ভারতের প্রাণস্পন্দন ছড়িয়ে আছে। জীবনের এইসব টুকরো টুকরো ছবি ও গল্প চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কল্পনায় ডানায় ভর করে মূল ধারার সিনেমা ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে পরিবেশিত হয়, এবং পুরস্কার জেতে। সেজন্যই আমরা দেশজুড়ে আঞ্চলিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলির উন্নয়নে সচেষ্ট হয়েছি। লাদাখ, কাশী এবং জম্মু-কাশ্মীরে এই ধরনের উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। 
সামনের দিকে তাকিয়ে সাহসের সঙ্গে বলা যায়, ভারত আজ যা সৃষ্টি করবে, বিশ্ব আগামী কাল তাকে সাদরে গ্রহণ করবে। ভারত আরও এক বিপুল সাফল্য অর্জন করতে চলেছে। দেশের ৩০ কোটি নাগরিককে অনলাইনে সংযুক্ত করতে আমরা প্রস্তুত। মিডিয়া ও বিনোদন ক্ষেত্রের বাণিজ্যে ভারত তার অবস্থানকে ক্রমশ মজবুত করছে। সরকার তার নীতি ও উদ্যোগ নিয়ে সূর্যোদয়ের এই ক্ষেত্রের পাশে সর্বতোভাবে রয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এই ক্ষেত্র থেকে বার্ষিক ৪ ট্রিলিয়ন টাকা আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। 
সংযোগ, যোগাযোগ, সৃষ্টি, বিকল্প চয়ন এবং ব্যবহারের যে সুযোগ ভারত দেয়, বিশ্বের অন্য কোথাও তা পাওয়া যাবে না। আর সেইজন্যই গল্পবলিয়েদের দেশের উপর আজ বিশ্ব চলচ্চিত্র জগতের স্পটলাইট এসে পড়েছে।
লেখক কেন্দ্রের তথ্য ও সম্প্রচার, যুব কল্যাণ ও ক্রীড়ামন্ত্রী

18th     May,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ