বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিশেষ নিবন্ধ
 

বৈষম্য ও অবিচার
বড্ড চোখে লাগছে
পি চিদম্বরম

ভারতের সংবিধানটি হল রাজ্যগুলোর মধ্যে একটি দৃঢ়সংবদ্ধ বন্দোবস্ত। সংবিধানের কেন্দ্রীয় স্তম্ভের মধ্যে রয়েছে তিনটি তালিকা—কেন্দ্রীয় তালিকা, রাজ্য তালিকা এবং যুগ্ম তালিকা। দুই নম্বর (রাজ্য তালিকা), এন্ট্রি ১১, যেভাবে কার্যকর হয়েছে, তা পড়তে হবে: বিশ্ববিদ্যালয়গুলিসহ শিক্ষা, এক নম্বর তালিকার ৬৩, ৬৪, ৬৫ ও ৬৬ নম্বর এন্ট্রি এবং তিন নম্বর তালিকার ২৫ নম্বর এন্ট্রি, বিধান সাপেক্ষে। তিন নম্বর তালিকা (যুগ্ম তালিকা), এন্ট্রি ২৫, যেভাবে কার্যকর হয়েছে, তা পড়তে হবে: শ্রমিকদের বৃত্তিমূলক এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ। 

একটি রামধাক্কা 
৬৩-৬৬ নম্বর এন্ট্রি নিয়ে আদৌ কোনও সমস্যা নেই। কারণ, সেগুলির বিষয় হল কিছু নামী প্রতিষ্ঠান, কেন্দ্রীয় সরকারি তহবিলে পুষ্ট বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিবিদ্যার প্রতিষ্ঠানগুলি, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলি এবং তারা মান নির্ধারণের দায়িত্ব পালন করে। সৃজনশীল ব্যাখ্যায় এন্ট্রি ও নীতিগুলির পুনর্মিলন এমনভাবে করা হয়েছে যে ‘শিক্ষা’ রাজ্য তালিকায় যেমন ছিল সেটাই বহাল রয়েছে। জরুরি তাগিদে সংসদ রাজ্য তালিকার ১১ নম্বর এন্ট্রিতে একটি জোরালো আঘাত করেছিল। ওই এন্ট্রিটা তার সমগ্রতার ভিতরে বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং যুগ্ম তালিকার ২৫ নম্বর এন্ট্রিটা পুনর্লিখিত হল এইভাবে: কারিগরি শিক্ষা, মেডিক্যাল শিক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিসহ শিক্ষা, এক নম্বর তালিকার ৬৩, ৬৪, ৬৫ ও ৬৬ নম্বর এন্ট্রি বিধান সাপেক্ষে; শ্রমিকদের বৃত্তিমূলক এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ। 
এই রামধাক্কায় আহত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ধারণা, রাজ্যগুলির অধিকার এবং সামাজিক ন্যায়। জরুরি-অবস্থা-বিরোধী যোদ্ধারা, যাঁরা ৪৪তম সংবিধান সংশোধনী (৪২তম সংশোধনীর অসূয়া দিকগুলি খারিজ করে দেওয়ার জন্য) পাশ করেছিলেন, ‘শিক্ষা’ সংক্রান্ত মূল এন্ট্রিগুলিই ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন বলে তাঁরা মনে করেননি।  
ঐতিহাসিকভাবে, রাজ্যগুলি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং ব্যক্তি বিশেষকেও মেডিক্যাল কলেজ গড়ার অনুমতি দিয়েছিল। এইসব কলেজে ছাত্রভর্তির বিষয়টি রাজ্যগুলিই নিয়ন্ত্রণ করত। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষার মানেরও (স্ট্যান্ডার্ড ও কোয়ালিটি) উন্নতি করা হয়। তামিলনাড়ুর ক্ষেত্রে যে নামগুলি প্রথমেই মনে আসে তা হল ডঃ রঙ্গাচারী এবং ডঃ গুরুস্বামী মুদালিয়ার। মাদ্রাজ মেডিক্যাল কলেজের প্রবশেদ্বারে তাঁদের মূর্তি দুটি অভিভাবকের মতোই দণ্ডায়মান। এটা সবাই মানেন যে মেডিক্যাল শিক্ষা এবং হেলথকেয়ার প্রদানে তামিলনাড়ু একটি অগ্রণী রাজ্য—আগেও ছিল, এখনও তা বজায় রয়েছে। উল্লেখ করার মতো বিষয় এই যে, এই প্রখ্যাত ডাক্তারদের (সংখ্যাটি সারা দেশে কয়েক হাজার) সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষার ভিত্তিতে ভর্তি হতে হয়নি। 

রাজ্যগুলির অধিকারের স্বীকৃতি 
রাজ্যের অধিকার নিশ্চিত করার পক্ষে যুক্তি এই যে রাজ্য সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলি রাজ্যবাসীর অর্থে গড়া হয়েছে। মোটামুটিভাবে তাঁরা চেয়েছিলেন রাজ্যের ছেলেমেয়েদের সেখানে ভর্তি করে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়াতে। পরবর্তী পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সরকারি ভাষায়, অর্থাৎ সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষায় মেডিক্যাল শিক্ষা দেওয়ার কথা তাঁরা ভেবেছিলেন। প্রত্যাশিত যে স্নাতক ডিগ্রিধারী ডাক্তাররা মূলত রাজ্যবাসীর সেবা করবেন, বিশেষ করে সেইসব গ্রামীণ এলাকার মানুষের চিকিৎসা তাঁরা করবেন, যেখানে স্বাস্থ্যপরিষেবা দুঃখজনকভাবে অপ্রতুল। আরও প্রত্যাশিত যে, মোটামুটিভাবে, ডাক্তাররা সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের ভাষায় কথা বলবেন, প্রেসক্রিপশন লিখবেন এবং তাঁদের কাউন্সেলিং করবেন। 
রাজ্য সরকারের বিধিগুলি সামাজিক ন্যায় বিষয়ক সমস্যার সমাধান করে থাকে। রাজ্যগুলি সেইসব ছেলেমেয়েকে ভর্তির জন্য উৎসাহ দেয়—যারা গ্রামে বসবাস করে এবং যাদের বাবা-মা গরিব, পরিবারগুলি পিছিয়ে রয়েছে, শিক্ষাঙ্গনে যারা উঠে আসছে প্রথম প্রজন্ম হিসেবে, যাদের পড়াশোনা সরকারি স্কুলগুলিতে। 
রাজ্যগুলিতে প্রচলিত ব্যবস্থা নিয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। অন্তত তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র এবং, যতটুকু আমার জানা আছে, দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির ব্যবস্থা নিয়ে কেউ আপত্তি জানাননি। অবশ্য কিছু গুরুতর অভিযোগের নিষ্পত্তির অবশ্যই প্রয়োজন ছিল। যেমন—ক্যাপিটেশন ফি, অস্বাভাবিক বেশি ফি আদায়, মেডিক্যাল শিক্ষায় ব্যবহৃত সরঞ্জামের নিম্নমান, কলেজের সঙ্গে সংযুক্ত হাসপাতাল, ল্যারেটরি, হস্টেল, খেলার মাঠ প্রভৃতির অপ্রতুলতা এবং এই ধরনের আরও কিছু সমস্যা। এগুলি সমস্যাগুলি ধারাবাহিক—রাজ্য ও কেন্দ্র নির্বিশেষে অভিন্ন—ছাত্রভর্তির নিয়ন্ত্রণ রাজ্যগুলির হাতে থাক কিংবা কিছু কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ তা করে থাকুক। 


কিছু দুঃখজনক ঘটনা
ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট (এনইইটি বা নিট) গ্রহণের এটাই যুক্তি যে, ‘উচ্চশিক্ষা, সেটা পেশাদারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, মেধাই একমাত্র বিবেচ্য’ (মডার্ন ডেন্টাল কলেজ বনাম মধ্যপ্রদেশ রাজ্য মামলায় সুপ্রিম কোর্টের অভিমত) এবং কেবলমাত্র একটি কমন এন্ট্রান্স টেস্টই পারে মেধাভিত্তিক ছাত্রভর্তির ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে। ভর্তির ক্ষেত্রে সততা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং শোষণ-বঞ্চনা রোধের ব্যাপারটিও এর দ্বারা নিশ্চিত করা সম্ভব। মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার (তখন থেকেই সংস্থাটির মর্যাদা নষ্ট হয়েছে) তৈরি একটি বিধির বলে নিট গোপনে প্রবেশ করেছে। ২০১৬ সালে গৃহীত একটি সংশোধনী বলে বিষয়টি পরে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল আইনের ১০ডি ধারায় সংযোজিত হয়েছে। 
‘মেধা’ (মেরিট) নামক অত্যন্ত বিতর্কিত বিষয়টি আর একদিন আলোচনা করার জন্য তুলে রাখলাম। তামিলনাড়ুর মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ছাত্রভর্তির প্রক্রিয়ার উপর নিট-এর প্রভাব কী? তা প্রকাশিত হয়েছে বিচারপতি এ কে রাজন কমিটির রিপোর্টে। আমার আজকের আলোচনার কেন্দ্র ওই রিপোর্টের ‘ফ্যাক্টস’।
 নিজেকে কয়েকটি প্রশ্ন করুন: রাজ্য সরকারগুলি রাজ্যের করদাতাদের টাকা কেন খরচ করবে এবং কেন সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলি প্রতিষ্ঠা করবে? কেন ছেলেমেয়েরা মাতৃভাষার (যেমন তামিল) মাধ্যমে পড়বে? কেন ছেলেমেয়েরা রাজ্য বোর্ডের স্কুলে পড়বে এবং সেই বোর্ডের পরীক্ষায় বসবে? রাজ্য শিক্ষা বোর্ড রেখে দেওয়ার আদৌ যুক্তি আছে কি আর? শহুরে ছাত্ররা কি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে (পিএইচসি) এবং মফস্‌সলের (তালুক স্তরের) হাসপাতালগুলিতে রোগীর সেবা করবে?
উপরের সারণিতে দেওয়া সংখ্যাগুলিই এর উত্তর। ‘মেরিট’ সম্পর্কে এক সন্দেহজনক তত্ত্ব খাড়া করে নিট মারাত্মক বৈষম্য ও অবিচারের এক নতুন যুগের সূচনা করছে।  
লেখক সাংসদ ও ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। মতামত ব্যক্তিগত

20th     September,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ