বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

বিশ্ব

যে অদ্বিতীয় পরমাত্মা কাল ও জীব প্রভৃতি পূর্বোক্ত নিখিল কারণকে যথানিয়মে পরিচালিত করেন। সেই দেবের স্বাত্মভূত ত্রিগুণাত্মিকা শক্তিকেই উক্ত ব্রহ্মবাদিগণ সমাধি সহায়ে পরমাত্মার জগৎ কারণত্বের সহায়রূপে দর্শন করেছিলেন।
কিন্তু ঈশ্বর সন্ধানীদের প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন। একই ভাব নিয়ে সকলে ভগবানকে খোঁজে না। একদল সন্ধানকারী ভগবৎ-সত্তাকে বুদ্ধি দিয়ে ধরতে চেষ্টা করে। গোড়া থেকেই এই বিশ্ব মানবমনে একটি ধাঁধার সৃষ্টি করেছে। জাগতিক ব্যাপারে যতই ডুবে থাকুক না কেন কোন না কোন সময়ে তাকে এই রকম মৌলিক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়—এ বিশ্ব কীভাবে চলছে? কোথা থেকে এর উৎপত্তি? এর লক্ষ্যই বা কী? এই জীবনের অর্থ কী? দার্শনিক চিন্তাভাবনার মূলসূত্র তো এই জাতীয় প্রশ্ন।
বৌদ্ধিক তৃপ্তির জন্য দার্শনিকরা ভগবানকে খুঁজতে চেষ্টা করেছেন। এ ব্যাপারে তাঁদের প্রধান সহায় হল অনুমান ভিত্তিক যুক্তি। অধিকাংশ দার্শনিকের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এই যে যুক্তি-বিচার সহায়ে সেই পরম সত্তাকে বোঝা যায় না। সৃষ্টিতত্ত্ব সংক্রান্ত বিচার, বা প্রাযুক্তিক বিচার বা তাত্ত্বিক বিচার সহায়ে সন্ধানকারী ব্যক্তি সৎস্বরূপকে পারে না। অস্তি-নাস্তির পরিপ্রেক্ষিতে বিচার পদ্ধতি দ্বারা অথবা অনুমান দ্বারা পরম সত্তার অপরোক্ষ অনুভূতি ঘটে না।
আবার আর একদল লোক আছে যারা মাত্র বুদ্ধির তৃপ্তির জন্য ভগবানকে খোঁজে না, খোঁজে নিতান্ত প্রয়োজনের তাগিদে। জগতে যে পরিমাণ সন্তুষ্টি সে চেয়েছে—তা পায়নি। জগৎটাকে যতই নিত্য, মনোহর বলে মনে হোক্‌ না কেন, অনেকের কাছে এটি আদর্শ অস্তিত্ব বলে মনে হয় না। মানবমন যে আদর্শ চায় এটি তার অনেক অনেক নীচু থাকের। জগৎটাকে আদর্শের কাছাকাছি আনার জন্য মানুষ যত চেষ্টাই করুক না কেন, অবশ্যম্ভাবী উন্নতি এবং ক্রমবর্ধমান পূর্ণতার স্বপ্ন যতই দেখা যাক্‌ না কেন, আশ্চর্য সব আবিষ্কার এবং সুনিপুণ রাষ্ট্রপরিচালনা সত্ত্বেও জগৎ সেই দ্বন্দময় থেকেই যায়—যেখানে ভাল-মন্দ, যুদ্ধ-শান্তি, অভাব-প্রাচুর্য্য, জ্ঞান-অজ্ঞান, উত্থান-পতন থেকেই যায়।
এখন তাহলে প্রশ্ন—কীভাবে মানুষ তার চির প্রাথিত পূর্ণতার আদর্শে পৌঁছুতে পারে? যদি এই আপেক্ষিক অস্তিত্বটুকুই একমাত্র সত্য হয়, তাহলে তো মানুষের উচ্চতম আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হবার কোন সম্ভাবনাই নাই। বিস্ময় বা রহস্যের ভাবটুকু মাত্র মানুষকে জগতের কারণ অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত করে না। অত্যন্ত বাস্তব প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষ এতে প্রবৃত্ত হয়।
মানুষ যে নিরাপত্তা চায়, জগৎ তা দিতে পারে না। তার ন্যায্য কাম্যবস্তু বা আদর্শ পূর্ণ হওয়ার ব্যাপারেও কোন নিশ্চয়তা নাই। তাই তার মনে প্রশ্ন জাগে—“আমাকে কি এই জীবন, এই জগৎ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে?” সে আবার ভাবে— এ জগতের পারে কি সত্যিকারের নিরাপত্তা আছে? না, নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে নিরাপত্তার ভাব খুঁজে নেবার জন্য মানুষের জন্ম? মৃত্যুতেই কি মানুষের সব শেষ হয়ে যায়? না, মৃত্যুর পরেও কোন জীবন আছে?” এই উভয়-সংকটই অনেককে পরম সত্তার অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত করেছে। যদিও অনুসন্ধিৎসা, রহস্য বা বুদ্ধির তৃপ্তি বহু দার্শনিককে পরম সত্যের স্বরূপ অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত করেছে।
স্বামী সৎপ্রকাশানন্দের ‘ধ্যান সাধনা সিদ্ধি’ থেকে

25th     September,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ