শ্রীশ্রীঠাকুরের কথা
কালীঘাট থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত পীঠস্থান। মা সবটা ব্যেপে আছেন।
কাশী, বৃন্দাবন—এই দু’টো হয়ে গেলেই হল।
কাশী যাওয়ার কি দরকার, যদি ব্যাকুলতা না থাকে? ব্যাকুলতা থাকলে এখানেই কাশী।
কাশীতে ব্রাহ্মণই মরুক, আর বেশ্যাই মরুক, শিব হবে।
পুরীধামে যদি কেউ যাও তো টোটাগোপীনাথ দর্শন করো।
দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী, কালীঘাটের কালী ও খড়দার শ্যামসুন্দর—এঁরা জ্যান্ত। কথা ক’ন, খেতে চান।
গঙ্গা অভীষ্টদায়িনী, ইষ্টদর্শনের সহায়কারিণী।
গঙ্গাজল স্পর্শ কর, ওতেই হবে। স্নান নাই বা করলে।
যদি কেউ মা গঙ্গার কাছে অকপটে নিজের সব দুর্বলতার কথা জানায় তা হলে মা তার সব অপরাধ মার্জনা করেন।
দশহরার দিন গঙ্গাপূজা করতে হয়।
ব্রহ্মবারি গঙ্গাজল—জলের মধ্যে নয়, শ্রীবৃন্দাবনের রজ—ধূলার মধ্যে নয়, আর শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের মহাপ্রসাদ অন্নের মধ্যে নয়। এ তিন ব্রহ্মের স্বরূপ।
খাওয়ার আগে ২/১ দানা মহাপ্রসাদ খেতে হয়।
যেখানে তাঁর কথা হয়, সেখানে তাঁর আবির্ভাব হয়, আর সকল তীর্থের আবির্ভাব হয়।
দুষ্টলোকের মধ্যে থেকে কি আর ঈশ্বরলাভ হয় না? ঋষিরা বনের মধ্যে ঈশ্বরচিন্তা করত, চারদিকে বাঘ-ভাল্লুক।
এককে জানলে সব জানা যায়। একের পর যদি পঞ্চাশটা শূন্য থাকে তো অনেক হয়ে যায়। ‘এক’কে পুঁছে ফেললে কিছুই থাকে না। ‘এক’কে নিয়েই অনেক। এক আগে, তারপর অনেক। আগে ঈশ্বর, তারপর জগৎ।
মনে নিবৃত্তি হলে বিবেক হয়। বিবেক হলে তত্ত্বকথা মনে ওঠে। শুদ্ধমনে যা ওঠে, তা তাঁরই কথা। তিনিই মাহুৎ- নারায়ণ। তিনিই কর্তা। একটু ‘আমি’ যতক্ষণ রেখেছেন, তাঁর আদেশ শুনে কাজ করব।
তাঁর সৃষ্টিই এইরকম—ভাল, মন্দ, সৎ অসৎ। যেমন গাছের মধ্যে কোনটা আম গাছ, কোনটা কাঁঠাল গাছ, কোনটা আমড়া গাছ। দেখ না, দুষ্ট লোকেরও প্রয়োজন আছে। যে তালুকের প্রজারা দুর্দান্ত, সে তালুকে একটা দুষ্ট লোককে পাঠাতে হয়, তবে তালুক শাসন হয়। তিনিই সুমতি দেন, তিনিই কুমতি দেন। পরমহংস দেখে—এসব মায়ার ঐশ্বর্য। নামরূপ যেখানে, সেখানেই প্রকৃতির ঐশ্বর্য। তাঁর মায়ার কাজে অনেক গোলমাল আছে; এটির পর ওটি, এটি হতে ওটি হবে, এসব বলবার যো নেই। কিছু বোঝা যায় না।
গোঁপে চাড়া, পায়ের ওপর পা দিয়ে বসে আছেন, পান চিবুচ্ছেন, কোন ভাবনা নেই, এরূপ হলে ঈশ্বরকে পাওয়া যায় না।
শ্রীউমাপদ মুখোপাধ্যায় সংকলিত ‘অমিয় বাণী’ থেকে