বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

শ্রীশ্রীঠাকুরের কথা

যিনিই ব্রহ্ম, তিনিই আদ্যাশক্তি। প্রতিবিম্ব সগুণব্রহ্ম—আদ্যাশক্তি। ব্রহ্ম আর আদ্যাশক্তি প্রথম দুটো বোধ হয়, কিন্তু ব্রহ্মজ্ঞান হলে আর দুটো থাকে না, অভেদ—এক, যে একের দুই নেই—অদ্বৈতম্‌। যতক্ষণ ‘আমি’-জলে সূর্যকে দেখতে হয়, সূর্যকে দেখবার আর কোন উপায় নেই; আর যতক্ষণ প্রতিবিম্ব-সূর্য বই সত্য-সূর্যকে দেখবার উপায় নেই, ততক্ষণ প্রতিবিম্ব-সূর্যই ষোল আনা সত্য। যতক্ষণ ‘আমি’ সত্য, ততক্ষণ প্রতিবিম্ব-সূর্যও সত্য, ষোল আনা সত্য। এই প্রতিবিম্ব-সূর্যই আদ্যাশক্তি। সকলেই সেই মহামায়া আদ্যাশক্তির অধীন। অবতার পর্যন্ত মায়া আশ্রয় করে লীলা করেন, তাই তাঁরা আদ্যাশক্তির পূজা করেন।
বেদান্তবাদী ব্রহ্মজ্ঞানীরা বলে—সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয়, জীবজগৎ—এসব শক্তির খেলা, বিচার করতে গেলে এসব স্বপ্নবৎ। শক্তিও স্বপ্নবৎ অবস্তু, ব্রহ্মই বস্তু। কিন্তু হাজার বিচার কর, সমাধিস্থ না হলে শক্তির এলাকা ছাড়িয়ে যাবার যো নেই। যতক্ষণ একটু ‘আমি’ থাকে, ততক্ষণ সেই আদ্যাশক্তির এলাকা—তাঁর ‘অণ্ডারে’(under); তাঁকে ছাড়িয়ে যাবার যো নেই। সমাধিস্থ না হলে শক্তির লীলারাজ্য ছাড়িয়ে যাবার যো নেই। শক্তি মানতে হয়। ব্রহ্মও শক্তি, যেমন স্থির জল, আর জলের ঢেউ উঠেছে। সর্প আর তার তির্যগ্‌গতি। দুধ ও দুধের ধবলত্ব। জল আর তার হিমশক্তি। এই আদ্যাশক্তি, মহামায়া ব্রহ্মকে আবরণ করে রেখেছে। আবরণ গেলেই যা ছিলুম, তাই হলুম—আমিই তুমি, তুমিই আমি। সেই মহামায়া দ্বার ছেড়ে দিলে তবে অন্দরে যাওয়া যায়।বেদে যাঁকে ব্রহ্ম বলেছে, তাঁকেই আমি মা বলে ডাকছি। সেই চিৎশক্তি, সেই মহামায়া চতুর্বিংশতি তত্ত্ব হয়ে রয়েছেন। তিনি চৈতন্যরূপে চরাচর বিশ্বে ব্যাপ্ত হয়ে রয়েছেন। তিনিই চৈতন্যস্বরূপ জগতের আধার, আধেয়—দুই-ই। সেই মহান্‌ ব্রহ্মযোনি থেকে এ জগৎ বেরুচ্ছে। মা-ই সব। তিনি অজ্ঞানরূপে বন্ধন, জ্ঞানরূপে মুক্তি। অবিদ্যারূপে ভ্রান্তি, বিদ্যারূপে বিবেক। মা আমার চিন্ময়ী ব্রহ্মশক্তি, ইচ্ছায় জগৎ প্রসব করেছেন। তিনি ইচ্ছা করলে কি না করতে পারেন? যিনি জগৎরূপে আছেন, সর্বব্যাপী হয়ে তিনিই মা। মা-ই সব। তিনি ত্রিগুণময়ী, আবার শুদ্ধসত্ত্বময়ী। তিনিই সকলের দেহে কুলকুণ্ডলিনীরূপে আছেন, যেন ঘুমন্ত সাপ কুণ্ডলী পাকিয়ে রয়েছে।
তিনিই মহাকালী, নিত্যকালী, শ্মশানকালী রক্ষাকালী, শ্যামাকালী। গৃহস্থবাড়িতে শ্যামাকালীর পূজা হয়। মহামারী, দুর্ভিক্ষ, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি হলে রক্ষাকালীপূজা দিতে হয়। যখন সৃষ্টি হয় নাই, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, পৃথিবী ছিল না, তখন কেবল মা নিরাকার মহাকালী মহাকালের সঙ্গে ছিলেন। তিনি সৎ, তাঁর আরেকটি নাম কাল (মহাকাল) ও একটি নাম ব্রহ্ম। কালী যিনি কালের সহিত রমণ করেন। কাল ও কালী, ব্রহ্ম ও শক্তি।
কালী আর কেউ নয়, যিনিই ব্রহ্ম, অখণ্ড সচ্চিদানন্দ, তিনিই কালী। ব্রহ্ম আর কালী অভেদ, যেমন অগ্নি আর তার দাহিকাশক্তি। অগ্নি ভাবলেই দাহিকাশক্তি ভাবতে হবে। ব্রহ্ম মানলেই কালী, আর কালী মানলেই ব্রহ্ম মানতে হয়। দু’টি জিনিস বই তো আর কিছু নেই—ব্রহ্ম আর শক্তি। জ্ঞান হলে ঐ দুটি এক বোধ হয়। নিত্যকে ছেড়ে শুধু লীলা বোঝা যায় না; যেমন মণি না ভাবলে মণির জ্যোতি ভাবতে পারা যায় না, মণির জ্যোতি না ভাবলে মণি ভাবতে পারা যায় না। ব্রহ্ম ও ব্রহ্মশক্তি—পুরুষ ও প্রকৃতি অভেদ। এ দুই স্বতন্ত্র বস্তু নয়, একই বস্তু। কখন পুরুষ, কখন প্রকৃতিভাবে। 
শ্রীউমাপদ মুখোপাধ্যায় সংকলিত ‘অমিয় বাণী’ থেকে

8th     September,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ