বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

নিঃস্বার্থ ফলাকাঙ্ক্ষাবর্জিত কর্ম

মীমাংসকগণ বলেন, শাস্ত্রীয় সকাম কর্ম দ্বারাও মুক্তি হয়। তাঁহাদের মতে সকাম কর্মের ফল স্বর্গাদি ভোগ করিতে করিতে মানুষের ভোগ-বাসনা শেষকালে একেবারেই থাকে না। ইহার ফলে সে আত্মস্বরূপে অবস্থিত হইয়া মুক্তিলাভ করে। এজন্য অনেকে উপভোগ করিয়া কামনা নাশ করিবার পরামর্শ দেন। কিন্তু ‘বিষ্ণুপুরাণ’ বলেন, “উপভোগ দ্বারা কামনা কখনও দূর হয় না।” শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলিয়াছেন, “কামনা মানুষের চিরশত্রু, ইহা অনলের ন্যায় দুষ্পূরণীয়। এই তৃষ্ণারূপ কামের দ্বারা বিবেক-বুদ্ধি আবৃত থাকে।” এই জন্য কর্মযোগ নিবৃত্তি বা সংযম পথাশ্রয়ে কামনাশূন্য হইয়া কর্ম করিতে উপদেশ দেন। প্রবৃত্তিপথে চলিয়া মানুষ বাহিরের সব কিছু আহরণ করিয়া ‘আমি’ বা ‘আমার’-কেন্দ্রে জড় করে। ইহারই নাম স্বার্থপরতা, ইন্দ্রিয়পরায়ণতা, অধর্ম—অসৎ কর্ম। আর নিবৃত্তি-পথে গমন করিলে ‘আমি’ ও ‘আমার’-কেন্দ্র হইতে সব কিছু সরাইয়া বাহিরের দিকে নিক্ষেপ করে। ইহারই অপর নাম নিঃস্বার্থপরতা—সংযম—আত্মত্যাগ। ইহা সকল ধর্ম ও নীতির সার কথা। কর্মযোগ নিবৃত্তির পথে নিষ্কামভাবে সকলকে কর্ম করিতে উদ্বুদ্ধ করে। এই রূপে কর্ম করিলে “মানুষ নিজ নিজ বর্ণ ও আশ্রমের কর্মে নিরত থাকিয়াও সিদ্ধিলাভ করিতে পারে।” কোন বর্ণের কোন বৃত্তি সিদ্ধিলাভের প্রতিবন্ধক নয়। আর্য-অনার্য স্ত্রী-পুরুষ গৃহস্থ-সন্ন্যাসী সকলেই মুক্তিলাভ করিতে পারে। শ্রীকৃষ্ণ বলিয়াছেন, “হে পার্থ, যাহারা অসৎকুলজাত, সেই সকল স্ত্রী, বৈশ্য এবং শূদ্রগণও আমাকে আশ্রয় করিয়া পরা গতি লাভ করে।” রৈক্ব বাচক্‌নবী সংবর্ত ধর্মব্যাধ প্রভৃতি বর্ণাশ্রমরহিত হইয়াও মুক্তিলাভ করিয়াছিলেন। কর্মফল ত্যাগ করিয়া নিষ্কাম ভাবে কর্ম করিলে জাতি-বর্ণ-নির্বিশেষে সকলেই মুক্ত হইতে পারে।
নিষ্কাম ও নিঃস্বার্থ ভাবে ধর্মদান বিদ্যাদান, স্বদেশ সমাজ ও জাতির সেবা, পরোপকার, বিশ্বমানবের কল্যাণসাধন প্রভৃতি সৎকর্ম সর্ববন্ধনবিমুক্তির উৎকৃষ্ট উপায়। সর্ববিধ স্বার্থাভিসন্ধি ও প্রতিদান প্রাপ্তির বাসনা ত্যাগ করিয়া অনাসক্ত ভাবে এই সকল কর্ম করার নামই কর্মযোগ। আমাদের কর্মকে কর্মযোগে পরিণত করিতে হইলে সর্বদা স্মরণ রাখা আবশ্যক—“জগদ্ধিতায় বহুজন সুখায় হচ্ছে ধর্ম, আর নিজের জন্য যা করা যায় সবই অধর্ম।” প্রকৃতপক্ষে আমরা নিজের জন্য যাহা কিছু করি তাহাই আমাদের বন্ধনের হেতু এবং অপরের জন্য যাহা কিছু করি তাহাই আমাদের মুক্তির কারণ। পরার্থে কর্ম করিতে যাইয়া আমাদের সর্বদা মনে রাখিতে হইবে যে, এই জগতে কোন ক্ষুদ্র জীবও আমাদের উপকারের অপেক্ষায় সৃষ্ট হয় নাই। আমি বা তুমি মরিয়া গেলে জগতের কোন কার্যও অচল হইবে না। ঈশ্বর কাহারও দয়ার উপর নির্ভর করিয়া এই জগৎ সৃষ্টি করেন নাই। বরং সকল মানুষকেই সকল বিষয়ে জগতের উপর একান্ত নির্ভরশীল করিয়া তিনি সৃষ্টি করিয়াছেন। পৃথিবী কোন মানুষের নিকট কোন বিষয়ে ঋণী নহে, পরন্তু সকলেই সকল বিষয়ে পৃথিবীর নিকট ঋণী। জগতের সকল জীবের উপকারসাধনই এই ঋণ পরিশোধ করিবার উপায়। জীবের হিতসাধন করিয়া আমরা প্রকৃতপক্ষে আমাদেরই কল্যাণ করি। মানুষের সেবা করিয়া আমরা যথার্থই নিজেদের সেবা করি। কারণ, মানুষের সপ্রেম সেবাদ্বারা আমরা আমাদের ‘আমি’ ও ‘আমার’-রূপ ক্ষুদ্র গণ্ডি অতিক্রম করিয়া নিঃস্বার্থ ত্যাগী ও অনাসক্ত হইবার সুযোগ পাই।
স্বামী সুন্দরানন্দের ‘যোগচতুষ্টয়’ থেকে

7th     June,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ