বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

কৃষ্ণতত্ত্ব

‘কৃষ্‌’ ধাতুর দ্বিতীয় অর্থ হ’ল আকর্ষণ করা—সব কিছুকে নিজের দিকে আকর্ষণ করা। আমাদের এই যে সৌরমণ্ডল, এর প্রাণকেন্দ্র হ’ল সূর্য আর সূর্যের চারিপাশে ঘুরে চলেছে অনেক গ্রহ-উপগ্রহ ইত্যাদি। সূর্য তার চারিপাশে ঘূর্ণায়মান সমস্ত সত্তাকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে চলেছে। সূর্যের এই আকর্ষণের জন্যে প্রতিটি গ্রহ বা উপগ্রহ আপন আপন কক্ষপথে থেকে ঘুরে চলেছে। তেমনি এই সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে যিনি নিজের দিকে আকর্ষণ করে চলেছেন তিনি কৃষ্ণ। তাই সমগ্র বিশ্বের মধ্যে সব চেয়ে বড় আকর্ষক সত্তা হলেন এই কৃষ্ণ যাঁর আকর্ষণ-শক্তি থেকে কেউ রেহাই পেতে পারে না। মানুষ তাঁর সান্নিধ্যে যাক বা না যাক, কেউ কোন অবস্থাতেই তাঁর আয়তক্ষেত্রের বাইরে যেতে পারে না। আর যাবেই বা কোথায়! তাঁর বাইরে তো কিছুই নেই, কেউই নেই। তাই যাঁর আকর্ষণ ক্ষমতা সব চেয়ে বেশী তাঁকেই আমরা ‘কৃষ্ণ’ আখ্যা দিতে পারি। তোমরা আরও জান যে শাদা-কাল যতগুলো রঙ আছে তার মধ্যে কাল রঙটার আকর্ষণ-ক্ষমতা বেশী। তাই সংস্কৃত ভাষায় কালকে ‘কৃষ্ণ’ বলা হয়।
এবার একটু ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা যাক। আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে আমাদের এই ভারতবর্ষ বহুধা-বিভক্ত ছিল। আর সেই বিভিন্ন রাজ্যগুলোর মধ্যে পারস্পরিক একতা ছিল না। আর পারস্পরিক ঐক্যের অভাবে জনসাধারণের প্রগতি ঘটানো সম্ভব ছিল না। ভারত এক ও অবিভাজ্য। ‘ভারত’ শব্দের অর্থ কী? সংস্কৃত ভাষায় ‘ভূ’ ধাতুর অর্থ ভরণ-পোষণ করা; আর ‘তন্‌’ ধাতুর অর্থ বাড়ানো, বৃদ্ধি ঘটানো। কাজেই ‘ভারত’ শব্দের অর্থ এমন দেশ যেখানে মানুষের ভরণ-পোষণ তথা সর্বপ্রকার প্রগতি ঘটানো সম্ভবপর। ভারতবর্ষ অনেকগুলি খণ্ড-ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হওয়ার ফলে তাদের মধ্যে পারস্পরিক ঐক্য মোটেই ছিল না। আর ঐক্যের অভাবে কোন প্রকার প্রগতি সম্ভব ছিল না। সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতবর্ষ মুখ্যতঃ এক জনগোষ্ঠীর দেশ। সেই সুপ্রাচীন অতীতে এদেশে জন্মেছিলেন এক বিরাট মহাপুরুষ। তাঁর লক্ষ্য ছিল সেই খণ্ড-বিচ্ছিন্ন ভারতবর্ষকে এক ঐক্যসূত্রে বেঁধে ফেলা, ঐক্যবদ্ধ করে ফেলা আর সে কাজ তিনি করেও ছিলেন। সেই যুগে কৃষ্ণই ছিলেন সেই বিরাট মানুষ যিনি নিজের অসাধারণ ব্যষ্টিত্বের দ্বারা সকলকে আকর্ষণ করতে পারতেন। তোমরা বলতে পার, তাহলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মহাভারতীয় যুদ্ধের পরিকল্পনা কেন করেছিলেন? তোমরা মনে রেখো যে মানুষকে নিজের কর্মসিদ্ধির জন্যে উপায় খুঁজতে হয়। মিষ্টি ভাষায় সে কাজ করিয়ে নিতে হয়। কিন্তু সকলেই যে মিষ্টি কথায় সব সময় কাজ করবে এমন তো নয়। গোরুর গাড়ীর গাড়োয়ান যদি তার বলদদের বলে, “বলদ, তোমরা ডাইনে বা বাঁয়ে চলো”, বলদ তার কথা শুনতেও পারে, আবার নাও শুনতে পারে। তাই দেখবে বলদকে কথা শুণতে বাধ্য করার জন্যে গাড়োয়ানের হাতে থাকে একটা কড়া চাবুক। 
শ্রীআনন্দমূর্ত্তির ‘কৃষ্ণতত্ত্ব ও গীতাসার’ থেকে

3rd     June,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ