বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

কৃষ্ণ

কৃষ্ণ বলছেন, “যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে”। অর্থাৎ এই বিশ্বে আমরা যা কিছু স্পর্শ করি, দেখি তা সবেরই স্রষ্টা হলেন কৃষ্ণ। মানুষ তাঁর আন্তরিক ইচ্ছা অনুযায়ী, মানস প্রবণতা অনুযায়ী পরমপুরুষের কাছ থেকে যা চায় তা সাধারণতঃ পেয়েও যায়। মানুষ তাঁর কাছ থেকে যে জিনিসটা প্রার্থনা করে থাকে তিনি তা যোগান দেন। তাই কৃষ্ণ বলছেন, যে যে রকম বাসনা-কামনা নিয়ে আমার কাছে যা চাইবে আমি তার যোগান দিয়ে থাকি। আমি সেইভাবে তার মনস্কামনা পূর্ণ করে থাকি। কেউ যদি তাঁর কাছ থেকে ধনদৌলত চেয়ে থাকে সে হয়তো তা পেয়েও যাবে কিন্তু সে পরমপুরুষকে পাবে না। কারণ, সে তো ধনদৌলতই চাইছে, পরমপুরুষকে চাইছে না। তেমনি কেউ যদি পরমপুরুষের কাছ থেকে যশঃ-প্রতিপত্তি চায় সে তা পেলেও পেতে পারে, কিন্তু পরমপুরুষকে পায় না কারণ সে যশঃ-প্রতিপত্তি চাইছে, পরমপুরুষকে নয়। মানুষ হয়তো চাইল যে পরমপুরুষ তার শত্রুর নিধন করুন। এখন মানুষ যদি ধর্মপথে থাকে অর্থাৎ তার দাবীদাওয়াগুলি যদি ধর্মসঙ্গত হয় পরমপুরুষ হয়তো তার শত্রু নিধন করবেন। কিন্তু সে পরমপুরুষকে পাবে না কারণ পরমপুরুষকে তো সে চায়নি। ঠিক তেমনি মানুষ যদি পরমপুরুষের কাছ থেকে মুক্তি-মোক্ষ চায় তাহলে যদি সে মুক্তি-মোক্ষ লাভের উপযুক্ত পাত্র বিবেচিত হয় তবে তা’ সে পেয়ে যাবে, কিন্তু পরমপুরুষকে পাবে না কারণ সে তো আর পরমপুরুষকে চাইছে না। কাজেই যে সাধক বুদ্ধিমান সে বলবে, “হে পরমপুরুষ আমি তোমাকেই চাই—অন্য কিছু নয়, অন্য কাউকেই নয়। যদি বলো আমি কেন তোমাকেই চাই তাহলে বলব তুমি আমাকে আনন্দ দেবে এই জন্যে আমি তোমাকে চাইছি না, তোমার উপস্থিতি আমাকে তোমার সেবা করবার সুযোগ দেবে বলে চাইছি। তোমাকে কাছে পেয়ে আমি তোমাকে আনন্দ দেবার সুযোগটা নিতে চাই। তোমার আনন্দ দিয়ে আমার আনন্দ। আমি নিজে আনন্দ পাবার জন্যে চেষ্টা করছি না”। তাই বুদ্ধিমান আধ্যাত্মিক সাধক বলবেন—“আমি তোমার কাছ থেকে কোন স্থূলে পাঞ্চভৌতিক জিনিস চাই না, আমি শুধু তোমাকে চাই”।
রামায়ণে একটা গল্প আছে। এটা নিছক গল্প—একটা বিশেষ লোকশিক্ষার গল্প। একবার মহর্ষি বিশ্বামিত্র রাম ও লক্ষ্মণকে সঙ্গে নিয়ে গঙ্গা পেরিয়ে মিথিলার দিকে যাচ্ছিলেন। গঙ্গা নদীর অপর পারে গিয়ে মাঝি নৌকাটা ঘাটে ভিড়াল। দেখল—নৌকাটা আর কাঠের নৌকা নেই, সেটা সোনা হয়ে গেছে। মাঝি ভাবল ‘রাম’ নামের ওই ছোট্ট ছেলেটি নিশ্চয় সাধারণ বালক নয়। সে ভাবল এই অসাধারণ বালকেরই অলৌকিক পাদস্পর্শে কাঠের নৌকা সোনার নৌকায় রূপান্তরিত হয়েছে। তখন মাঝির স্ত্রী বাড়ী থেকে যত কাঠের আসবাবপত্র নিয়ে এসে রামচন্দ্রের চরণপ্রান্তে এনে জড় করল। সে ঘর থেকে এক একটা কাঠের জিনিসকে নিয়ে এসে রামচন্দ্রের পায়ে স্পর্শ করিয়ে সোনায় পরিণত করে নিল। তাই দেখে মাঝি তার স্ত্রীকে বলল—দেখো, তুমি কি বোকা মেয়েমানুষ, কী করতে হয় সেই আক্কেলটাই তোমার নেই। তোমার বাস্তব বুদ্ধির বড্ড অভাব। তুমি দেখেছ রামচন্দ্রের ওই চরণ দু’টির কী বিরাট গুণ। যদি তুমি বুদ্ধিমতী হয়ে থাকো, যদি ঘটে তোমার বুদ্ধি থাকে, তাহলে ওই চরণযুগলকেই বাড়ীতে নিয়ে যাও আর সব কিছুকে সেই শ্রীচরণে ছুঁইয়ে সোনায় পরিণত করে নাও। এটাই হ’ল সিদ্ধির গুপ্ত রহস্য।
তাই বুদ্ধিমান সাধক কী করবেন? তিনি বলবেন—“হে পরমপুরুষ, আমি তোমার কাছ থেকে কোন কিছুই চাই না। যেহেতু তুমিই সব কিছুর উৎস, তাই আমি তোমাকেই চাই। কিন্তু কী জন্যে? না, তোমার সেবা করবার জন্যে। কেন সেবা করবার জন্যে? না, সেবার মাধ্যমে নিজে আনন্দ পাবার জন্যে নয়, পরমপুরুষকে আনন্দ দেবার জন্যে। যে পরমপুরুষকে আনন্দ দিতে চায় তাকে সংস্কৃতে বলে ‘গোপ’। “গোপায়তে যঃ সঃ গোপঃ”। অন্যকে আনন্দ দেওয়া যার ব্রত সে-ই গোপ, যারা গোরু চরায় তারা ঠিক গোপ নয়।
শ্রীআনন্দমূর্ত্তির ‘কৃষ্ণতত্ত্ব ও গীতাসার’ থেকে

1st     June,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ