বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

ভগবান

হে শৌনকাদি ঋষিগণ, যেমন অক্ষয় সরোবর থেকে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলধারা নির্গত হয়, সেরূপ শুদ্ধসত্ত্বাত্মক শ্রীহরি থেকে অসংখ্য অবতারগণ আবির্ভূত হয়ে থাকেন। মরীচি প্রভৃতি ঋষিগণ, স্বায়ম্ভুব প্রভৃতি মনুগণ, উপেন্দ্র প্রভৃতি দেবগণ, দক্ষাদি মনুপুত্রগণ, মহাপরাক্রান্ত লোকপাল ও দিকপালগণ সকলেই শ্রীভগবানের অংশ—বিভূতি বলে প্রসিদ্ধ। উক্ত ও অনুক্ত সমস্ত অবতারই শ্রীভগবানের অংশ বা কলারূপে দেবদ্বেষী অসুরদের দ্বারা উৎপীড়িত পৃথিবীকে রক্ষা করেছেন। সর্ব বিলক্ষণ কৃষ্ণই স্বয়ং ভগবান। যে ব্যক্তি সমাহিত চিত্তে ভগবানের এই পরম গোপনীয় (রহস্যময়) অবতার কথা সর্বদা ভক্তিপূর্ণ ভাবে কীর্তন করেন, তিনি সংসারদুঃখ থেকে মুক্তি পেয়ে থাকেন। প্রাকৃতরূপ রহিত অর্থাৎ অপ্রাকৃতরূপ—চিদেকরস পরমাত্মার এই প্রাকৃত অতএব অনিত্য, স্থূলরূপ মহদহঙ্কার পঞ্চতন্মাত্রাদিরূপ বহিরঙ্গাদিশক্তিপ্রসূত গুণ-সমূহের দ্বারা জীবশরীর নির্মিত হয়ে থাকে। যেরূপ অজ্ঞ, মূঢ় ব্যক্তিগণ বায়ু-আশ্রিত মেঘরাশির অস্তিত্ব আকাশে আরোপ করে অথবা পৃথিবীগত ধূলিরাশির ধূসরত্বাদি যেরূপ বায়ুতে আরোপ করে, সেইরূপ ওই মূঢ় ব্যক্তিগণ সর্বদর্শী সচ্চিদানন্দ ভগবানে দৃশ্যধর্মাত্মক অ-চিৎ শরীর আরোপ করে থাকে। (পূর্ববর্ণিত) স্থূলরূপ ছাড়াও (শ্রীভগবানের) একটি সূক্ষ্মরূপ আছে যা কোন ভাবেই কারোর অনুভবে আসে না। কারণ, তাতে শব্দাদি গুণের প্রকাশ থাকে না। জীব এই সূক্ষ্মদেহে আবেশবশত পুনঃ পুনঃ জন্মগ্রহণ করে। যখন স্বরূপের সম্যক জ্ঞানলাভের প্রভাবে অজ্ঞানতার দ্বারা পরমাত্মায় আরোপিত স্থূলসূক্ষ্মরূপ সম্বন্ধ দূরীভূত হয়, তখনই জীবের ব্রহ্মসাক্ষাৎ হয়। জীবন্মুক্তি দশায় পরমেশ্বর কর্তৃক দত্ত সত্ত্বময়ী মায়াবৃত্তিরূপা বিদ্যা যখন শ্রীভগবানের কৃপায় নিবৃত্ত হয়ে যায়, তখনই মুনিগণ পরমানন্দ লাভ হয়েছে বলে থাকেন। এই অবস্থায় জীব স্বস্বরূপে অবস্থিত হয়ে প্রকাশিত হয়। তত্ত্বজ্ঞ ব্যক্তিগণ প্রাকৃতজন্মকর্মরহিত অন্তর্যামিরূপ ভগবানের বেদগুহ্য পরমগোপ্য জন্মকর্মাদি অপ্রাকৃত বলে কীর্তন করে থাকেন। সেই অব্যর্থকর্মা শ্রীভগবান এই বিশ্বের সৃষ্টি-স্থিতি ও লয় করেন, কিন্তু কিছুতেই লিপ্ত হন না। যদিও তিনি ষড়-ইন্দ্রিয়-নিয়ন্তা এবং সর্বভূতে (অন্তরস্থিত) গুঢ়পুরুষ, তথাপি রুপ-রসাদি ষড়-ইন্দ্রিয়ের বিষয়কে অন্বেষণ করে (দূর থেকে) আস্বাদন করেন। কোন অজ্ঞ ব্যক্তি যেমন অভিনেতার অভিনয় কৌশল দেখেও বুঝতে পারে না, তেমন কুবুদ্ধিযুক্ত ব্যক্তি বিশ্ববিধাতার লীলানামরূপ কিছুই বুঝতে পারে না। যে ভাগ্যবান ব্যক্তি নিষ্কামভাবে নিরন্তর শ্রীভগবানের চরণারবিন্দ ভক্তিভরে ভজনা করে, একমাত্র সে-ই অশেষ মহিমময় চক্রপাণি ভগবানের লীলাদি জানতে পারে।
(হে ঋষিগণ) এই সংসারে আপনারাই ধন্য। আপনারা লীলাকথা শোনবার জন্য নানাবিধ প্রশ্ন করছেন, কারণ শ্রীভগবানের প্রতি আপনাদের ঐকান্তিক ভক্তি জন্মেছে। এরূপ ভক্তিভাব জন্মালে এই দুঃখময় সংসারে আর জন্মগ্রহণ করতে হয় না।
(হে সূত), শ্রীভগবানলীলাপ্রধান, বেদতুল্য, সকল পুরুষার্থপ্রদায়ক ও মঙ্গলজনক এই শ্রীমদ্ভাগবত নামক সর্বশ্রেষ্ঠ পুরাণশাস্ত্র জগতের অশেষ কল্যাণসাধনের জন্য ঋষি ব্যাসদেব রচনা করেছেন।
অধ্যাপিকা গীতা মাইতি অনুদিত ‘শ্রীমদ্ভাগবতম্‌’ থেকে

31st     May,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ