বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

অদ্বৈত

শ্রীশ্রীমার বিচক্ষণতা ও দূরদৃষ্টি স্বামীজীকেও বারে বারে সচেতন করেছে। যেখানে স্বামীজীর কথাতেও তাঁর সাক্ষাৎ শিষ্যদের সংশয় নিরসন হয়নি, সেখানে শ্রীশ্রীমার কথাই শেষ কথা। মায়াবতীতে প্রতিষ্ঠিত অদ্বৈত আশ্রমের prospectus-এ উল্লিখিত ছিল যে সেখানে কেবল অদ্বৈতভাবে ধ্যান-চিন্তা করা হবে কিন্তু মূর্তি বা পট পূজা করা যাবে না। কিন্তু স্বামীজী সেখানে উপস্থিত হয়ে দেখেন অত্যন্ত অনাড়ম্বরভাবে হলেও একটি ঘরে শ্রীঠাকুরের পটপূজা হচ্ছে। স্বামীজীর অসন্তোষ দেখে সেখানে পূজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর শিষ্যদের দ্বিধার অবসান হয়নি। শ্রীশ্রীমার কাছে পত্রের মাধ্যমে তাঁর অভিমত জানতে চাইলে শ্রীমা লেখেন, “আমাদের গুরু যিনি তিনি তো অদ্বৈত। তোমরা সেই গুরুর শিষ্য, তখন তোমরাও অদ্বৈতবাদী। আমি জোর করিয়া বলিতে পারি: তোমরা অবশ্য অদ্বৈতবাদী।” তদবধি সেখানে আর দ্বৈতপূজার প্রচলন হয়নি। এখানে শঙ্করীপ্রসাদের একটি অভিমত উল্লেখ করতে পারি। “সারদাদেবীর এই বক্তব্য আমাদের চমকিত নয়, স্তম্ভিত করে। সারদা দেবীর যিনি স্বামী-গুরু-ঈশ্বর, যাঁর পূজায় তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত নিয়োজিত, সেই রামকৃষ্ণের পটপূজা বন্ধ করার অনুমতি দেওয়া! এ বোধহয় একমাত্র শ্রীরামকৃষ্ণপত্নীর পক্ষেই সম্ভব।”
শ্রীশ্রীমাকে স্বামীজী সঙ্ঘজননীরূপে বরণ করে নিয়েছিলেন—এ আমরা দেখেছি। অথচ শ্রীশ্রীমা কখনও প্রত্যক্ষভাবে সঙ্ঘ পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন না। কেবল সংকটকালে নির্দেশ দিয়েছেন মাত্র। এযুগের পরিভাষায় বলা যায় Remote control করতেন শ্রীমা। শ্রীশ্রীমা স্নেহময়ী ছিলেন কিন্তু স্নেহদুর্বলা ছিলেন না। একবার তাঁর এক ত্যাগী সন্তান সন্ন্যাসের পবিত্র ব্রতভঙ্গের অপরাধে অনুতপ্ত হয়ে মার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করেন। শ্রীমা তাঁকে বলেছিলেন, “তোমার সব অপরাধ আমি ক্ষমা করেছি, তুমি আমার সন্তানই থাকবে, কিন্তু ব্রতভঙ্গকারীর কোনও প্রায়শ্চিত্তেই সন্ন্যাসী সঙ্ঘে স্থান হতে পারে না।” আদর্শের সঙ্গে স্নেহের যেখানে সংঘর্ষ, সেখানে তাঁর কাছে আদর্শই মাথা তুলে থেকেছে।
স্বামী বিবেকানন্দের কর্মযোগ যে শ্রীরামকৃষ্ণের ‘শিবজ্ঞানে জীবসেবা’র প্রকাশিত রূপ, এ সম্পর্কে বহু অন্তরঙ্গ পার্ষদদেরই সংশয় ছিল। শ্রীশ্রীমা কিন্তু নিষ্কাম কর্মযোগকে আন্তরিক সমর্থন করেছেন। সাধুরা ভিক্ষা করে ইতস্তত ঘুরে বেড়ালে তিনি ব্যথিত হতেন।
জনৈক সন্ন্যাসী সন্তান সঙ্ঘের কাজ থেকে সরে গিয়ে তপস্যায় যেতে চাইলে শ্রীমা তাঁকে বলেছিলেন, “সে কি গো, আমার কাজ করছ, ঠাকুরের কাজ করছ, এ কি তপস্যার চেয়ে কম হচ্ছে? হাওয়া গুনতে কোথায় যাবে?” সঙ্ঘের সেবাকাজে সর্বদা তিনি শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি অনুভব করেছেন।
করুণাপাথার শ্রীশ্রীমার অহৈতুকী কৃপা যেমন ঈশ্বরব্যাকুল হৃদয়কে শান্ত করেছে তেমনি সান্ত্বনা দিয়েছে আর্ত, পীড়িত, অবহেলিত মানুষকে। আগ্রহী সন্তানকে অক্লেশে গৈরিক কাপড় দান করতে কুণ্ঠিত হননি। বলতেন, “ওরা তো কাকের বাচ্চা নয়, কোকিলের বাচ্চা। বড় হলেই লালন-পালন করা মাকে ছেড়ে আসল মায়ের কাছে উড়ে যায়।” কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার অধিকারী অনুযায়ী বৈরাগ্যের পরিবর্তে সংসারী হওয়ার উপদেশ দিতেন। শ্রীমার এই দ্বিবিধ মনোভাব বুঝতে না পেরে নবাসনের বউ অনুযোগ করেন: “মা, আপনার সব ছেলেরা সমান।...আপনার তো উচিত, যেটি ভাল সেই পথেই সকলকে নিয়ে যাওয়া।” মা বললেন, “যার ভোগবাসনা প্রবল, আমি নিষেধ করলে সে কি শুনবে? আর যে বহু সুকৃতিবলে এইসব মায়ার খেলা বুঝতে পেরে তাঁকেই একমাত্র সার ভেবেছে, তাকে একটু সাহায্য করব না? সংসারে দুঃখের কি অন্ত আছে মা?” বেলুড় মঠ দেখে আসা ভক্তকে সাগ্রহে জিজ্ঞেস করছেন: “সেই ফুলের মতো পবিত্র ব্রহ্মচারীদের দেখনি?” বলেছেন—ওরা দেবশিশু, দেবের আরাধ্য ধন।
প্রব্রাজিকা শ্রদ্ধাপ্রাণার ‘মননের আলো’ থেকে

26th     May,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ