বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

ধ্যান

ধ্যান গভীর হইলে যখন ধ্যানজ্ঞান পর্যন্ত থাকে না এবং চিত্ত ধ্যেয় বস্তুতে লীন হইয়া ধ্যেয়াকার প্রাপ্ত হয়, তখন সমাধি লাভ হইয়া থাকে। মহর্ষি পতঞ্জলি বলেন, “ধ্যান যখন কেবলমাত্র ধ্যেয় বস্তুকেই প্রকাশ করে, তখন উহাকে সমাধি বলে।” সমাধি সম্প্রজ্ঞাত ও অসম্প্রজ্ঞাত ভেদে দুই প্রকার। যে সমাধিতে বির্তক বিচার আনন্দ ও অস্মিতা অনুগত থাকে ইহা সম্প্রজ্ঞাত সমাধি। এই সমাধিতে ধ্যেয় বা ভাব্য বস্তুর স্পষ্ট জ্ঞান থাকে। এই জন্য ইহাকে সম্যক জ্ঞানযুক্ত সমাধি বলে। এই সমাধি বিতর্ক বিচার আনন্দ ও অস্মিতা এই চারিপ্রকার। বিতর্ক মানে প্রশ্ন। বিতর্ক সমাধি আবার সবিতর্ক ও নির্বিতর্ক ভেদে দ্বিবিধ। যে সমাধিতে দেশ-কালের অন্তর্গতরূপে বাহ্য স্থূল ভূত ধ্যেয় ইহাকে সবিতর্ক বলে। ইহাতে শব্দ অর্থ এবং তৎপ্রসূত জ্ঞান থাকে। এই জন্য ইহাকে সবিতর্ক বা বিতর্কযুক্ত সমাধি বলা হয়। যে সমাধিতে দেশ-কালের অতীতরূপে ভূতের স্বরূপ চিন্তা করা হয় ইহাকে নির্বিতর্ক সমাধি বলে। এই সমাধি লাভ করিলে স্মৃতি শুদ্ধ হয় বলিয়া স্মৃতিতে ত্রিগুণের (সত্ত্ব রজঃ তমঃ) সম্পর্ক থাকে না এবং ইহা ধ্যেয় বস্তুর অর্থ মাত্র প্রকাশ করে। এই জন্য ইহাকে নির্বতর্ক বা বিতর্কশূন্য সমাধি বলা হয়। যখন ভূত-তন্মাত্রগুলিকে দেশ-কালের অন্তর্গতরূপে চিন্তা করা হয়, তখন ইহাকে সবিচার সমাধি এবং যখন ভূত-তন্মাত্রগুলিকে দেশ-কালের অতীতরূপে ভাবা হয়, তখন ইহাকে নির্বিচার সমাধি বলে। এই সমাধির পরবর্তী অবস্থায় স্থূল সূক্ষ্ম উভয় ভূত এবং ইহাদের তন্মাত্রগুলির চিন্তা ত্যাগ করিয়া কেবল অন্তঃকরণকে ধ্যানের বিষয় করিতে হয়। অন্তঃকরণকে রজঃ ও তমঃ গুণযুক্তরূপে চিন্তা করিলে ইহাকে সানন্দ সমাধি এবং অন্তঃকরণকে রজঃ ও তমঃলেশশূন্য শুদ্ধসত্ত্বরূপে চিন্তা করিলে এবং সমাধি সুগভীর হইলে স্থূলসূক্ষ্ম ভূতের চিন্তা ছাড়িয়া মনের স্বরূপাবস্থা যখন ধ্যেয় হয় ও সাত্ত্বিক অহংকার মাত্র অন্যান্য বিষয় হইতে পৃথক হইয়া বিদ্যমান থাকে, তখন ইহাকে সাস্মিত সমাধি বলে। এই অবস্থা লাভ করিলে যোগী বিদেহ হন। বিদেহ যোগীর স্থূল দেহজ্ঞান থাকে না। তিনি আপনাকে স্থূলদেহী মনে না করিয়া সূক্ষ্মদেহী বলিয়া মনে করেন। এই অবস্থায় লয়প্রাপ্তিকে প্রকৃতিলয় বলে। যে যোগী এইরূপ সূক্ষ্মভোগেও সন্তুষ্ট হন না তিনিই চরম লক্ষ্য অসম্প্রজ্ঞাত সমাধিতে অধিষ্ঠিত হইয়া মুক্তি লাভ করেন। এই সমাধিতে সমুদয় মানস ক্রিয়ার বিরাম অভ্যাস করা হয়, কেবল সংস্কার মাত্র অবশিষ্ট থাকে। সম্প্রজ্ঞাত সমাধিতে চিত্তবৃত্তিসমূহ দমিত হইয়া সংস্কার বা বীজাকারে বিদ্যমান থাকে, কিন্তু সুযোগ পাইলেই ইহারা পুনরায় প্রকাশিত হয়। অসম্প্রজ্ঞাত সমাধিতে সংস্কারগুলি নির্বীজ হয়। এই জন্য এই সমাধিকে নির্বীজ সমাধিও বলে। নির্বীজ সমাধিতে সংস্কার-বীজ একেবারেই থাকে না। এই সমাধিতে মন সম্পূর্ণ সংস্কারশূন্য হয়। এই অবস্থায় মনের সর্ববিধ বৃত্তি নষ্ট হওয়ায় মন শূন্য আকার ধারণ করে এবং যোগী জ্ঞানাতীত অবস্থায় উপনীত হন। যোগশাস্ত্রমতে অজ্ঞান নিম্নাবস্থা, জ্ঞান মধ্যাবস্থা এবং জ্ঞানাতীত উচ্চাবস্থা। জ্ঞানাতীত অবস্থাকে বিজ্ঞান অবস্থা বলে। এই ভূমিতে উপনীত হইলে সৎ ও অসৎ উভয় বৃত্তি এবং অজ্ঞান অন্তর্হিত হয়। ইহার ফলে যোগী সর্ববন্ধনবিমুক্ত হইয়া জন্মমৃত্যু-চক্রের বাহিরে চলিয়া যান এবং তাঁহার আত্মা নিত্য শুদ্ধ বুদ্ধ মুক্তরূপে স্বমহিমায় প্রকাশিত হন।
স্বামী সুন্দরানন্দের ‘যোগচতুষ্টয়’ থেকে

24th     May,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ