বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

চক্ষু

স্বামী অভেদানন্দ মহারাজ তাঁর অভিন্নহৃদয় গুরুভাইদের কথা বল্‌তে বল্‌তে আনন্দে উল্লসিত হ’য়ে উঠ্‌লেন। মুখ প্রদীপ্ত, চোখ-দু’টি সামান্য ছলছল। তিনি আবার বল্‌তে উদ্যত হচ্ছেন, এমন সময়ে আমাদের মধ্যে থেকে একজন জিজ্ঞাসা করলো: ‘মহারাজ, শ্রীশ্রীমা’র করুণা তো আপনার উপর অফুরন্ত ছিল! তাঁর প্রসঙ্গ কিছু আপনার মুখ থেকে আমাদের শুন্‌তে ইচ্ছা হয়’।
স্বামীজী মহারাজ: ‘শ্রীমা-র অজস্র আশীর্বাদ ও করুণা আমার উপর ছিল। তিনি ছিলেন সবারই করুণাময়ী জননী। তিনি ছিলেন সরলা বালিকার মতো! বাইরের লোকের কাছে তিনি ছিলেন নিতান্ত লজ্জাশীলা, কিন্তু ভক্ত-সন্তানদের কাছে ছিলেন সর্বদা হাস্যময়ী। শ্রীমা থাক্‌তেন স্বভাবতই অতি-সাধা্‌রণ মেয়েদের মতো, মনে হ’ত দুনিয়ার কোন-কিছুই যেন তিনি জানেন না। কিন্তু তাঁর ছিল ত্রিকালদর্শী চক্ষু! ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্তমান সবই জ্ঞানচক্ষে তিনি দেখ্‌তে পেতেন! অসামান্যা বুদ্ধিমতী ও মহীয়সী নারী ছিলেন শ্রীমা, অথচ বাইরে ছিলেন সকল রকম ঐশ্বর্য ও আড়ম্বরবিহীনা! এতটুকু অলৌকিক শক্তি বা বিভূতির বিকাশ তাঁর মধ্যে কখনো কেউ দ্যাখেনি! মোটকথা শ্রীমা ছিলেন একাধারে সাদাসিদে পাঁড়াগেঁয়ে মেয়ের মতো সরলা, আবার সর্বজ্ঞানময়ী ও করুণাময়ী সাক্ষাৎ-জগজ্জননী। শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবনে কিছু-কিছু ঐশ্বর্যের প্রকাশ বরং ছিল, কিন্তু শ্রীমা ছিলেন সর্বৈশ্বর্যবিহীনা! সকল শক্তিকে তিনি নিজের মধ্যে চেপে রাখ্‌তে পেরেছিলেন। কি মহিয়সী নারীই না তিনি ছিলেন! তাঁর মহিমা উপনিষদের ভাষায় বর্ণনা করতে গেলে বল্‌তে হয়: ‘তং দুর্দর্শং গূঢ়ম্‌’,—দুর্বিজ্ঞেয় ও অতীব নিগীঢ় শ্রীমার ভাব ও প্রকৃতি’। ‘আলমবাজার-মঠে থাক্‌তে ‘শ্রীমার স্তোত্র’ রচনা ক’রে শ্রীমাকেই প্রথম শোনালাম। তিনি শুনে আশীর্বাদ ক’রে বল্লেন: ‘তোমার মুখে সরস্বতী বসুক’। ‘মূকং করোতি বাচালাম্‌’,—সত্যই আমার মতো মূককে তিনি বাচাল করেছিলেন! নইলে ইংল্যাণ্ড ও আমেরিকার মতো দেশে ধুরন্ধর সব পণ্ডিত ও পাদরীদের কাছ থেকে আমার মতো অজ্ঞাত একজন ভারতবাসী কি জয়টীকা নিয়ে ভারতে ফির্‌তে পারে! সবই শ্রীমা ও শ্রীঠাকুরের অশেষ ও অসাধারণ কৃপা!’
আমরা: ‘মহারাজ, আমরা শুনেছি যে, শ্রীমা নাকি আপনার সঙ্গে সাম্‌নাসাম্‌নি কথা বল্‌তেন না, আপনাকে অন্যকে দিয়ে ব’লে পাঠাতেন?’
স্বামীজী মহারাজ: ‘কে বল্লে! যোগীন (স্বামী যোগানন্দ), লাটু (স্বামী অদ্ভূতানন্দ), বুড়ো গোপাল (স্বামী অদ্বৈতানন্দ) ও আমি—এই চারজনের সঙ্গে শ্রীমা সাম্‌নাসাম্‌নি কথা বল্‌তেন। তবে শ্রীমা ছিলেন অত্যন্ত লজ্জাশীলা, বাইরের যেকোন লোকের সাম্‌নে তিনি একহাত লম্বা ঘোমটা দিয়ে থাক্‌তেন। এমনকি স্বামীজী (স্বামী বিবেকানন্দ), রাজা মহারাজ (স্বামী ব্রহ্মানন্দ) প্রভৃতির কাছেও শ্রীমা মাথায় একটু কাপড় দিয়ে অপরকে দিয়ে কথা বল্‌তেন। অতিসরলা সাধারণ বালিকার মতো স্বভাবসম্পন্না ছিলেন শ্রীমা, তাই লজ্জাটা ছিল তাঁর প্রকৃতির একটা অঙ্গ অর্থাৎ অঙ্গভূষণ।
স্বামী প্রজ্ঞানানন্দের ‘মন ও মানুষ’ (৩য় ভাগ) থেকে

23rd     May,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ