বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

যুদ্ধ

একটি বিরাট যুদ্ধক্ষেত্র। আঠারো অক্ষৌহিণী সৈন্যের সমাবেশ হইয়াছে। সমস্ত বড় বড় যোদ্ধারা উপস্থিত। তাঁহাদের নাম “অত্র সূরা মহেষ্বাসাঃ” ইত্যাদি শ্লোকে দুর্যোধনের মুখ দিয়া কবি আমাদের শুনাইতেছেন। যুদ্ধ এখনই আরম্ভ হইবে শঙ্খ বাজিয়াছে। সকল বড় বড় বীর পরস্পর শঙ্খধ্বনি দ্বারা পরস্পরের ধ্বনির প্রতিধ্বনি করিতেছেন। অর্থাৎ জানানো হইতেছে, আমরা প্রস্তুত, যুদ্ধ আরম্ভ হইতে পারে। যুদ্ধের বাজনা বাজিয়া উঠিয়াছে। “স শব্দস্তুমুলোঽভবৎ।”
এমন সময় এক পক্ষের সেনাপতি অর্জুন তাঁহার কপিধ্বজ রথের সারথি হৃষীকেশকে বলিলেন, “দেখ অচ্যুত, রথখানিকে আর একটু আগাইয়া লইয়া উভয় সেনার মাঝখানে রাখ। একবার দেখিয়া লই কোন্‌ কোন্‌ বীর আমার সঙ্গে লড়িতে আসিয়াছে। তাহাদের মুখগুলি একবার দেখিব।”
সেনাপতির কথাগুলি খুব বীরত্ব-ব্যঞ্জক। কথার মধ্যে দেমাক আছে, ঝাঁজও আছে। যেন কাহাকেও গ্রাহ্য করেন না। বলিতেছেন—“দুর্বুদ্ধি দ্বারা প্ররোচিত হইয়া ধৃতরাষ্ট্রের কোন্‌ কোন্‌ ছেলে আসিয়াছে। কে কয়টা মাথা লইয়া আমার সামনে দাঁড়াইয়াছে একবার চোখ বুলাইয়া দেখিয়া লই। রথখানি আগাইয়া নিয়া রাখ।”
সারথী হৃষীকেশ বীর রথীর অভিপ্রায় অনুসারে রথ লইয়া আগাইয়া আসিলেন! বলিলেন, “দেখ পার্থ, সমবেত কুরুদের দেখ।” সারথির ভাষার মধ্যে বেশ একটু মনস্তত্ত্ব আছে। রথীকে ডাকিয়াছেন “পার্থ!” তাঁহার মা পৃথার পরিচয় দিয়া, যাহাতে হৃদয়ের কোমল তন্ত্রী স্পর্শ করে। আর শত্রু পক্ষের কথা বলিয়াছেন পূর্বপুরুষ কুরুর পরিচয় দিয়া, যাহাতে কুটুম্বিতার কথা মনে জাগে। সৈন্যদর্শনে প্রতিক্রিয়াটি যে কী হইবে, হৃষীকেশের কথা কয়টির মধ্যে তাহার বেশ একটু ইঙ্গিত আছে।
অর্জুন সৈন্য পরিদর্শন করিতেছেন। দেখিলেন যে, সবই পরিচিত মুখ। কেবল পরিচিত নহে—পরম আত্মীয় কুটুম্ব, ঠাকুরদাদা, গুরুদেব, মাতুলগণ, ভ্রাতৃগণ, পুত্র-পৌত্রগণ, শ্বশুরগণ, শালা-সম্বন্ধীরা সব উপস্থিত যুদ্ধ করিতে। অর্জুন দেখিলেন—কিছুক্ষণ দেখিবার পর আর দেখিতে পারিতেছেন না। দেহ শিথিল হইয়া আসিতেছে, মুখ শুকাইতে আরম্ভ করিয়াছে। সমস্ত শরীর কাঁপিতেছে। সারা গায়ে রোমাঞ্চ আর জ্বালা অনুভব হইতেছে। গাণ্ডীব হাত হইতে খসিয়া পড়িতেছে। মাথাটার সঙ্গে মনটাও ঘুরিতেছে। একটি বীর রসের বিগ্রহ কি করুণ রসের মূর্তি হইয়া গিয়াছে। কাব্যাংশেও চমৎকার। ব্যাসদেব সাত-আটটি শ্লোকের মধ্যে একটা লোহার মানুষকে ননীর পুতুল তৈয়ারী করিয়া দিয়াছেন। আর কাহারও হয়ত সাত-আট পৃষ্ঠা লাগিত।
“কৃষ্ণ! যুদ্ধ করিতে পারিব না। জয় চাই না, রাজ্য চাই না, সুখ চাই না, ভোগ চাই না, বাঁচিতেও চাই না। যাঁহাদের লইয়া জীবনে সুখ, তাঁহাদের জীবনের বিনিময়ে সুখ চাওয়া—এমন হীন কাজ করিব না।” এই সব কথা তখন সেই বীরপুঙ্গবের মুখে। কথা বলিতে বলিতে আর বলার শক্তি রইল না। ধনুর্বাণ হাত হইতে খসিয়া পড়িল। রথী একেবারে রথের উপর মুমুর্ষু হইয়া পড়িলেন।
অর্জুন “শোকসংবিগ্নমানসঃ”। শোকের দ্বারা মনটা একেবারে সমাচ্ছন্ন। কী করিবেন বুঝিতেছেন না—কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা। সত্যসত্যই অর্জুন বিপদাপন্ন। সংগ্রামক্ষেত্রে রথীর মনের এই অবস্থা অপেক্ষা বড় বিপদ তাহার আর কিছু হইতে পারে না। যুদ্ধে হাত-পা ভাঙ্গিলে কিছুই হয় না; মন ভাঙ্গিলেই বিপদ। প্রাণ হারাইলেও বিপদ নাই, লক্ষ্য হারাইলেই মহাবিপদ। অর্জুন লক্ষ্য হারাইয়েছেন, তাই মহাবিপদের সম্মুখীন।
মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর ‘গীতা-ধ্যান’ থেকে

22nd     May,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ