বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

শিকাগো—নবভারতের উত্থান

সেসময়ে সারা ভারত জুড়ে শিক্ষিত সমাজ ভারতের ধর্ম, ঐতিহ্য সব ঝুট্‌ বলে শাসকদের ধর্ম, কালচার গ্রহণ করছে; সবাই তা অনুকরণ করছে। কোন কোনও আলোকিত মানুষ সেখান থেকে ফিরিয়ে এনে ভারতীয় ভাবে ভারতকে জাগাবার চেষ্টা করেছিলেন। ভারতে চারদিক থেকে—যেমন, পূর্ব ভারতে ব্রাহ্মসমাজ, উত্তর ভারতে আর্যসমাজ, পশ্চিম ভারতে প্রার্থনাসমাজ, দক্ষিণ ভারতে থিওসফিক্যাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরাও প্রকৃতপক্ষে হিন্দুধর্মকে ঘৃণা করতেন। হিন্দুধর্মের নিন্দা করে নূতন ধর্মের প্রতিষ্ঠা করেন। যারা উকিল, ডাক্তার, প্রশাসক, শিক্ষক, অধ্যাপক, বিচারপতি, কেরানি, অভিনেতা, সমাজসেবী সবাই হিন্দুধর্মে কিছু না পেয়ে তাকে ত্যাগ করেন। আবার যাঁরা হিন্দু সনাতনপন্থী, তাঁরা হরিনাম করতেন, রাধাকৃষ্ণ ভজনা করতেন। তাঁরা বৈষ্ণব। কালীপূজা যাঁরা করেন তাঁরা শাক্ত। এভাবে শৈব, বৌদ্ধ, জৈন—অসংখ্য শাখা হিন্দুধর্মের। সবাই হিন্দু, কিন্তু বৈষ্ণব ও শাক্তদের ঝগড়া ছিল খ্রিস্টানদের চেয়েও বেশি মারাত্মক। হিন্দুরা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে। 
দ্বৈতবাদীরা অদ্বৈতবাদকে ভ্রান্ত বলে দ্বৈতভাবকে প্রতিষ্ঠা করছেন, অদ্বৈতবাদী অন্যসব মতবাদগুলিকে খণ্ডন করে বলছেন একমাত্র অদ্বৈতই সত্য। সনাতন ধর্ম কী? এই ধর্মকে কে রক্ষা করবে? কার কথা লোকে শুনবে? শিক্ষিতের কথা? অবশেষে তাই হলো—দলে দলে হিন্দুরা খ্রিস্টান, মুসলমান, বৌদ্ধ হয়ে যাচ্ছে, নাস্তিক হয়ে যাচ্ছে। বড় বিপদ। রবীন্দ্রনাথ সহ ঠাকুরবাড়ির সবাই ব্রাহ্ম—বিজয়কৃষ্ণ, কেশব সেন, শিবনাথ শাস্ত্রী ব্রাহ্ম। বিদ্যাসাগর নাস্তিক। বঙ্কিমচন্দ্র বললেন—কালী, দুর্গা, গণেশ, শিব নয়, একমাত্র কৃষ্ণকে নিয়ে ভারতীয় ধর্ম জাগবে। তিনিই পুরাণ পুরুষ। সেজন্য তিনি কৃষ্ণ-চরিত্র লিখলেন—সেখানে শ্রীরাধা বাদ, বৃন্দাবন বাদ। শ্রীরামকৃষ্ণদেব তাঁকে বকলেন—রাধা ছাড়া কৃষ্ণ শক্তিহীন। তিনি রাধা-তত্ত্ব বোঝালেন; বঙ্কিমচন্দ্র মাথা নত করলেন। কেশব সেন, বিজয়কৃষ্ণ এঁরা সব শ্রীরামকৃষ্ণের কৃপায় হিন্দুধর্মের মহিমা বুঝলেন; সেই শুরু হল। বিদ্যাসাগরও খুশি হলেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ সবাইকে পরের ঘর থেকে ডেকে নিয়ে নিজের ঘরে বসালেন। সবার সামনেই ভগবানের সঙ্গে কথা বললেন। তারপর সমাধি দেখালেন, গান গাইলেন, এভাবে ধর্মকে প্রত্যক্ষ করালেন। বৈষ্ণবরা, শৈবরা, শাক্তরা, ব্রাহ্মরা, জৈনরা, বৌদ্ধরা, খ্রিস্টানরা, মুসলমানরা সবাই শ্রীরামকৃষ্ণের মাধ্যমে সব মতকে শ্রদ্ধা ও গ্রহণ করতে শিখলেন। নিজেদের মতের প্রতি আস্থাবান হলেন। এ এক অভিনব ব্যাপার! সকল ধর্মমতই জেগে উঠল; স্বধর্মে সবার নিষ্ঠা ফিরে এল। এটা কম নয় কিন্তু! সূচনা হল এইভাবে। আমরা দেখলাম, একটু জাগল সবাই—নড়ে চড়ে বসলো। কিন্তু ঐ দূর থেকে এসব হল। শ্রীরামকৃষ্ণের দেহত্যাগের পর এই ভাবটিকে নিয়েই স্বামীজী ভারত ভ্রমণ করলেন। এই উদারভাব—যেখানে সব ভাবকে সম্মান করার প্রয়োজন। সেই ভাবটিকেই বিশ্বের দরবারে পৌঁছানোর প্রয়োজন এবং তা করার দায়িত্ব স্বামীজী স্বয়ং নিলেন। কিন্তু এ হিন্দুধর্ম সর্বাংশে শ্রীরামকৃষ্ণের কাছ থেকে প্রাপ্ত হিন্দুদের বেদান্ত। সর্বসাধারনের এই ধর্ম সমন্বয়ী ধর্ম, সর্বশ্রেষ্ঠ হিন্দু শঙ্করাচার্য আগেই বেদান্তের আবিষ্কার করেছেন। শিকাগোতে তারই সূচনা করে ভারতের দিকে সকলের দৃষ্টি ফেরালেন স্বামীজী। তাঁর ভক্তি, তাঁর জ্ঞান, তাঁর ধ্যান, তাঁর কর্মযোগ শেখার জন্য আজ পৃথিবীর মানুষ উদগ্রীব। ভারতকে গুরুর আসনে বসিয়ে দিয়ে গেলেন আর স্বামীজী নিজে হলেন জগদ্‌গুরু। বিদেশীরাও আজ শ্রীরামকৃষ্ণ-ভাব নিচ্ছেন, তাঁরাও সন্ন্যাসী হচ্ছেন, সন্ন্যাসিনী হচ্ছেন। নিবেদিতারা এসেছিলেন, ভারতকে শ্রদ্ধার আসনে বসালেন। 
স্বামী সুপর্ণানন্দের ‘সত্যের আনন্দরূপ’ থেকে

17th     May,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ