বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

অত্যাচার

ঠাকুর বল্‌লেন—“দেখ মহাপুরুষকে কত লোক কত লাঞ্ছনা করে, কত অত্যাচার তাঁদের ওপর করা হয়। তবুও তাঁরা সে সব অত্যাচারকেও ভগবানের দান ব’লে শিরে ধারণ করেন। এই যে কবীর, এর সংসারে পরিবার ছাড়া আর কেউ ছিল না। একটি তাঁত ছিল, তার দ্বারা কোন প্রকারে তাঁদের ভরণ-পোষণ নির্বাহ হ’ত। তাঁর সাধনা ছিল সেই তাঁতকলের কাছে। তিনি সেই তাঁত বুনতে বুনতে কখন হাস্‌তেন, কখন কাঁদতেন, আবার কখন বা বাহ্যদশা হারিয়ে গভীর সমাধিতে মগ্ন হয়ে যেতেন। তাঁর সেই ভাব দেখে বাইরের লোক তাঁকে খুব ভক্তি-শ্রদ্ধা কর্‌ত। তথাকার বামুন আর অন্যান্য ভদ্রলোক যাদের দশজন মানে-গণে, তাদের চেয়েও সমাজে তাঁকে বেশী আদর কর্‌তে লাগ্‌ল। এই দেখে বামুনদের খুব ঈর্ষ্যা হ’ল। তাঁকে কি ক’রে জব্দ করা যায়, এর চেষ্টা কর্‌তে লাগ্‌ল। প্রথমে একবার তাঁকে ভাণ্ডারী ক’রে তাঁর বাড়ীতে সব সাধুদের সেবা হবে ব’লে অনেক সাধুকে নিমন্ত্রণ কর্‌ল। পূর্বদিন বিকালে কবীর লোকপরম্পরায় শুন্‌তে পেলেন—‘পরদিন সকালেই সেবার দিন!’ শুনে তিনি খুব ভয় পেলেন। অনন্যোপায় হয়ে সেইদিন রাত্রিতে স্থানীয় অরণ্যে পালিয়ে গিয়ে লুকিয়ে থাকলেন। পরদিন বিকালে বন হতে বেড়িয়ে ঘরে আসতে আসতে রাস্তায় শুন্‌তে পেলেন যে, সাধুদের সেবা খুব ভাল হয়েছে, আর সুচারুরূপে কাজ হয়ে গিয়েছে। কোন ত্রুটী হয় নাই। এ কথা শুনে কবীর অত্যন্ত আশ্চর্য্যান্বিত হলেন। তাড়াতাড়ি বাড়ী গিয়ে তাঁর পত্নীকে জিজ্ঞাসা করলেন—“ওরে ব্যাপারখানা কি? কিরূপে সাধুসেবা হ’ল? বাড়ীতে তো একটি কপর্দ্দক বা এক কণা তণ্ডুলও ছিল না!” তাঁর স্ত্রী একথা শুনে বল্‌লেন—“তোমার চলে যাবার পর কোত্থেকে সব ভারে ভারে দধি দুগ্ধ মিষ্টান্ন আরও অনেক রকম জিনিষপত্র এসে ঘর বোঝাই হ’তে লাগ্‌ল। সাধুরা এসে নিজে নিজে গ্রহণ করে সেবা সম্পন্ন করলেন। পরে সন্তুষ্ট হয়ে আশীর্ব্বাদ কর্‌তে কর্‌তে যথাস্থানে গমন করলেন।”...কবীর তখন বুঝতে পারলেন যে প্রভুর কৃপাদৃষ্টি তাঁর উপর পতিত হয়েছে। এই ঘটনা দেখে বামুনেরা আশ্চর্য্য হল বটে, তবু তারা তাঁকে জব্দ করবার উপায় খুঁজতে ছাড়ল না। কিছুদিন পরে ফন্দী এঁটে এক বেশ্যাকে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে কবীরকে অপমান করবার জন্য পাঠিয়ে দিল। একদিন কবীর কোথায় যাচ্ছিলেন, এমন সময় ওঁকে রাস্তায় পেয়ে সেই বেশ্যা গলায় কাপড় দিয়ে জড়িয়ে ধ’রে বল্‌লে, “হারামজাদা, জুয়াচোর, আমার সঙ্গে পিরীত পাতিয়ে শেষে আমায় ছেড়ে পালাচ্ছ? বলি যাবে কোথায়?”...দেখ, মহাপুরুষেরা কেমন! একটুও বিচলিত হ’ল না। তখন যেন কবীর ঠিক তারই জন্য পালাচ্ছিল। তাই তিনি ফিরে বল্‌লেন—“ও তুমি না-কি? তোমায় ছেড়ে পালাব কেন? বেশ তো, তুমি আমার ঘরে চল।”...কোথায় অন্যত্র যাওয়া? ওকে নিয়ে ঘরে এল। প্রতিবেশী বামুনরা আর অন্যান্য বদ লোকে ওঁকে বেশ্যার সঙ্গে আস্‌তে দেখে ঠাট্টা ক’রে বলতে লাগ্‌ল—“ওহে, এই বুঝি তোমার সাধুগিরি! তুমি বাইরে সাধুর ভান কর আর এদিকে ভিতরে ভিতরে এই বেশ্যার সঙ্গে পিরীত পাতান হয়েছে। সাধুত্ব এতদিনে বেশ বুঝা গেল। তুমি ঠক, প্রতারক, ধর্ম্মের নামে প্রতারণা ক’রে বেড়াও মাত্র।” আরও হেন-তেন এ-ও সাতসতর ব’লে গাল দিতে লাগ্‌ল। কবীর এসব শুনে রাম কি বিষ্ণু কিছু বল্‌লেন না। তিনি নির্ব্বিকার, তাই ওসব কথায় ভ্রূক্ষেপও কর্‌লেন না।...এর আগে কবীরের সাধুত্বের খ্যাতি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই দেশের রাজা ওঁর নাম শুন্‌তে পেয়ে নিমন্ত্রণ করে পাঠালেন। 
স্বামী সত্যানন্দ সরস্বতী সম্পাদিত ‘শ্রীশ্রীনিগমানন্দের জীবনী ও বাণী’ থেকে

15th     May,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ