বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

দিব্যভাব

‘তারপর আমায় তিনি (শ্রীরামকৃষ্ণদেব) দিব্যভাবের শিক্ষা দিয়ে বল্লেন—
শুচি অশুচিরে লয়ে দিব্যঘরে কবে শুবি।
দুই সতীনে পীরিত হ’লে তবে শ্যামা-মাকে পাবি।।
‘তিনি প্রত্যহ সকালে ও রাত্রে শোওয়ার পূর্বে বিছানায় বসে ধ্যান করার জন্য উপদেশ দিলেন ও বল্লেন: ‘এখন ধ্যানে যা-যা দর্শন কর্‌বি,—সব এসে (আমার কাছে এসে) বল্‌বি’। তিনি কালীমন্দিরে গিয়ে আবার আমায় ধ্যান করতে বল্লেন। তাই কর্‌লাম। কালীমন্দির থেকে ফিরে এলে তিনি সস্নেহে আমার হাতে মিষ্টান্ন-প্রসাদ দিয়ে বল্লেন:—‘খা’। আমি প্রসাদ খেলাম। তারপর তাঁকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম ক’রে কলকাতায় ফেরার জন্য বিদায় প্রার্থনা করলাম। তিনি স্নেহমাখা স্বরে বল্লেন: ‘আবার আসিস্‌। শেয়ারের নৌকো কিংবা ঘোড়ার গাড়ী ক’রে এখানে এলে সুবিধে হবে’। আমি বল্লাম: ‘যদি ভাড়া যোগাড় করতে না পারি?’ তিনি বল্লেন: আস্‌বি। তার আর কি, আমি যোগাড় ক’রে দেবো’। ‘এরপরই দেখি যে, কলকাতা থেকে একজন বড়লোক-ভক্ত ঘোড়ার-গাড়ী ক’রে পরমহংসদেবের কাছে এসে উপস্থিত। তিনি প্রণাম ক’রে দাঁড়াতেই পরমহংসদেব আমার দিকে অঙ্গুলি দেখিয়ে বল্লেন: ‘তুমি এই ছেলেটিকে কলকাতা পৌঁছে দিও তো’। তিনি হাতজোড় ক’রে বল্লেন: ‘জিয়াজ্ঞে’। তারপর পরমহংসদেবকে প্রণাম ক’রে আমায় বিদায় নিলাম ও সেই ভদ্রলোকটির গাড়ীর উপরে কোচবাক্সে ব’সে কলকাতা রওনা হলাম। আসার সময়ে সারাটা রাস্তা কেবল চিন্তা করতে লাগ্‌লাম পরমহংসদেবের কথা, আর তাঁর অফুরন্ত ভালবাসা ও করুণার কথা!’ দেখ্‌লাম স্বামীজী মহারাজ কথাগুলি বলতে বলতে আত্মহারা হ’য়ে গেলেন। ঘড়িতে তখন প্রায় তিনটে বেজেছে। আমরা শশব্যস্তে উঠে বল্লাম: ‘মহারাজ, তিনটে প্রায় বাজে, আপনি বিশ্রাম করুন আজ’। তিনি হাস্‌তে হাস্‌তে বল্লেন: ‘হ্যাঁ, শুধু আমি কেন, তোমরাও বিশ্রাম করগে এবার। রাত্রি অনেক হ’ল। কাল তো আবার সকাল-সকাল উঠ্‌তে হবে’। তিনি উঠে দাঁড়ালেন ও আমাদের দিকে চেয়ে হাসিমুখে গাইতে লাগলেন—
ঘুম ভেঙেছে আর কি ঘুমাই,
যোগে-যাগে জেগে আছি,
তোর ঘুম তোরে দিয়ে মা,
আমি, ঘুমেরে ঘুম পাড়ায়েছি।’
তিনি বল্লেন: ‘এটি জীবন্মুক্ত-সাধকের কথা। সাধারণ মানুষ অজ্ঞানের সংসারে ঈশ্বরকে ভুলে কাজের মধ্যেই ডুবে আছে। জীবন্মুক্ত-সাধকরা অজ্ঞানের পারে গিয়ে ব্রহ্মানন্দে ভরপুর হ’য়ে বাস করেন। তাঁদের অজ্ঞান-ঘুম আর তাঁদেরকে মোহে আচ্ছন্ন ও আবদ্ধ করতে পারে না। অজ্ঞানের সংসারে তাঁরা অজ্ঞানকে জয় ক’রে সদানন্দে বাস করেন’। মনে হ’ল, স্বামীজী মহারাজ নিজের কথাই যেন বল্লেন একটু আবেশের ভাব নিয়ে!
সে’দিন বুধবার। সকাল সাড়ে-আটটা—কি ন’টা হবে। স্বামীজী মহারাজ তখন কলকাতার মঠে (শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠে)। আমরা প্রণাম করতে গেছি। প্রতিদিন যেমন যাই! প্রণাম ক’রে দাঁড়াতেই তিনি হাতে একখানি সবুজ মলাটের বাঁধানো খাতা দিয়ে বল্লেন: ‘কপি’ (copy) ক’রে দেবেতো এটা’।
আমরা বল্লাম: ‘এটা কি মহারাজ?’
স্বামীজী মহারাজ: ‘আমার জীবনকথা। দার্জিলিঙে (বেদান্ত আশ্রমে) থাক্‌তে (১৯৩৬ খ্রীঃ) সময় পেলেই বসে-বসে সাদাসিদে ভাষায় আমার ছেলেবেলা-জীবনের সকল ঘটনা লিখে রাখ্‌তাম।
স্বামী প্রজ্ঞানানন্দের ‘মন ও মানুষ’ (৩য় ভাগ) থেকে

23rd     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ