বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

গীতা

গীতার মধ্যে একটা সহজ-সরল ভাব আছে যা আমরা প্রায়ই ধরতে পারি না। আমরা জটিল ব্যাপারে অভ্যস্ত। আমরা সহজ জিনিসের কদর করতে পারি না। দর্শন ও ধর্মের নামে মানুষের মন আসলে যা চায় তা হলো চটকদার কোন কিছু—বইপত্র, পোশাক-আশাক বা আচার-পদ্ধতির মধ্য দিয়ে। সরল চরিত্র বা সরল নৈতিক সৌন্দর্য তেমন কদর পায় না, সাধারণ মানুষ সহজ সৌন্দর্য ধরতে পারে না। সত্য সহজ, কিন্তু সেই সত্য বিভিন্ন আবরণে আবৃত থাকে, আর আমরা প্রকৃত সত্যকে পাই না, আমরা পাই আবৃত সত্যকে। গীতায় এসে আমরা পাচ্ছি এই সরল সত্যের উপস্থাপনা, যা আমাদের জীবনসমস্যার পাড়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। এটি আমাদের সুখ-দুঃখ, ভাল-মন্দের প্রতি সবরকম আসক্তি থেকে মুক্ত করে। সেই সঙ্গে দান করে অনাবিল প্রশান্তি, এবং বাহ্য ও আন্তর—সর্বপ্রকার অবস্থা থেকে মুক্তি। আমরা যে কোন মূল্যে এই স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে চাই। দর্শন জীবনে এই অবস্থাটাই প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এইটি যদি আমাদের থাকে, তাহলে আর আমাদের অন্য কিসেরই বা প্রয়োজন থাকে? যিনি এই অবস্থা অর্জন করেছেন, তিনি বৃদ্ধ হলেও প্রাণবন্ত থাকেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত একজন সদ্যোজাত শিশুর প্রাণচঞ্চলতা বজায় রাখেন। তিনি দর্শনকে তাঁর পথ প্রদর্শকরূপে পান। এই হচ্ছে দর্শনের প্রকৃত পরীক্ষা—দর্শন এমন হতে হবে যা আমাদের জীবন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নির্বিঘ্নে এগিয়ে চলতে সাহায্য করবে, জীবনের যাত্রাপথের শুরুতে যেমন, শেষেও তেমনি প্রাণবন্ত থাকতে সাহায্য করবে। দ্বিতীয় অধ্যায়ের একেবারে শুরুতেই শ্রীকৃষ্ণ এইসব জীবনদায়ী ভাবনা দান করেছেন। যাঁদের সেই সাহস ও মানসিক বল আছে, তাঁরা গীতার প্রকৃত শিক্ষার ধারণা করতে পারেন। যে মন বিষাদগ্রস্ত ও আসক্ত, সেই মন এইসব মহান ভাব ধরতে পারবে না। অবসন্ন মন সত্য উপলব্ধি করতে পারে না; সেই মনকে আগে শান্ত ও শক্তিশালী করতে হবে যাতে প্রদত্ত উপদেশ ঐ মনে আমূলপ্রোথিত হতে পারে। বিষাদগ্রস্ত অর্জুনকে প্রথমে শান্ত ও সুস্থির করা হলো। তারপর তাঁকে সত্যজ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হলো। বিষাদগ্রস্ত অবস্থায় আমরা বিশ্বকে একটা সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিতে দেখি; যখন আমরা শান্ত ও স্থিত, তখন বিশ্বকে তার প্রকৃত সত্তায় দেখি। এই কারণেই অর্জুন বলেন, ‘‘আমার প্রকৃত মঙ্গল কিসে, সে বিষয়ে আমার মন বিভ্রান্ত, অতএব নিশ্চয় করে বলুন কিসে আমার মঙ্গল—আমি আপনার চরণে শরণাগত, আমাকে শিক্ষা দিন।’’ অষ্টাদশ অধ্যায়ে যখন সকল শিক্ষাদান সমাপ্ত হয়েছে, কৃষ্ণ অর্জুনকে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘‘তুমি কি সন্তুষ্ট? তোমার মন কি শান্ত ও সন্দেহ কি দূরীভূত হয়েছে?’’
কচ্চিৎ এতৎ শ্রুতং পার্থ ত্বয়ৈকাগ্রেণ চেতসা 
কচ্চিৎ অজ্ঞানসম্মোহঃ প্রণষ্টস্তে ধনঞ্জয় 
‘‘হে পার্থ, তুমি কি একাগ্রচিত্তে এই গীতাশাস্ত্র শ্রবণ করেছ? হে ধনঞ্জয়, এই শ্রবণের ফলে কি তোমার অজ্ঞানজনিত মোহ বিনষ্ট হয়েছে?’’
অর্জুন উত্তরে জানালেন:
নষ্টো মোহঃ স্মৃতির্লব্ধা ত্বৎপ্রসাদাৎ ময়া অচ্যুত 
স্থিতোহস্মি গতসন্দেহঃ করিষ্যে বচনং তব 
স্বামী রঙ্গনাথানন্দের ‘শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতার রূপরেখা’ থেকে

17th     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ