বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

কর্ম্ম

জগতে যাঁহারা মহৎ বলিয়া গণিত, তাঁহারাও তোমার আদর্শ নহেন। তাঁহাদের চরিত্রগত বা কর্ম্মগত আংশিক উৎকর্ষ বর্ত্তমানতায় অথবা সম্ভাব্যতায় তোমার নিজস্ব হইতে পার, কিন্তু কোনও সৃষ্ট জীবেরই অখণ্ড-চরিত্র তোমার নিজস্ব হইতে পারে না। সকল খণ্ড যে অদ্বিতীয় অখণ্ডের অংশীভূত, তাঁহাকেই একমাত্র জীবনের আরাধ্য করা চলে। নতুবা, নিজ হাতে গড়া লৌহ-নিগড়ে নিজের চরণ শৃঙ্খলিত করিয়া আবার সেই বন্ধনই কাটিতে কাটিতে কত জন্ম চলিয়ে যায়, তাহার হিসাব কে করিবে? মানুষ নিজে নিজের প্রভু, নিজে নিজের নেতা। জগতের কোন গুরু, কোন আচার্য্যের আদেশের অপেক্ষা রাখিবে না। প্রাণ যাহা চাহে, তাহাই করিয়া যাও—ইহার বেশি কি বলিতে পারি? পরের কথা তোমার গ্রাহ্য হইতে পারে, তাহাতে সন্দেহ কি? কিন্তু উহা গ্রহণ করিবার সময় ভিক্ষা করিয়া চাহিয়া আনিও না। আমরা যে শুধু অর্থই ভিক্ষা করি, তাহা নহে, আমরা ভাবও ভিক্ষা করি। আর ভিক্ষা করি বলিয়াই ঐগুলি ইহজন্মেও কদাপি আমাদের নিজস্ব হয় না। দাসবুদ্ধি লইয়া ভাবের যাচাই করিতে গেলে উহার যাচাই করা আর হয় না, মোহবশে উহাকে পরম অনুগ্রহের দান বলিয়া গ্রহণ করিয়া ফেলা হয়। আর আত্মবুদ্ধি বা মর্যাদাবুদ্ধি লইয়া ভাবের যাচাই করিতে গেলে উহা বিচারান্তে গ্রাহ্য বিবেচিত হইলেও প্রকৃত পক্ষে গৃহীত হয় না বরং ভাব-সঙ্ঘাত-প্রভাবে আত্মগত সুপ্ত চৈতন্যকে জাগ্রত করে এবং তাহার সহিত উহার সামঞ্জস্য উপলব্ধ হয়।
তুমিই কি স্বয়ং অতুল সমৃদ্ধির আকর নহ? ভাবের সমৃদ্ধি, বাক্যের সমৃদ্ধি, কর্ম্মের সমৃদ্ধি সকলই কি তোমার প্রকৃতিগত সম্পদ নহে? তবে তুমি কোথায় চাহিতে যাইবে? তবে তুমি কাহার খোশামুদি করিয়া রাজার ছেলে হইয়াও মুদির ঘরের কলমপেশা বৃত্তি যাচিয়া লইবে? যাহারা গৃধ্রের মত শুধু গলাধঃকরণ করিয়াই যায়, তাহারা ভাব-জগতের কেরাণী ছাড়া আর কি? মহাজনের সুদের হিসাব কষিয়া জন্মযুগ খোয়াইলেও তাহাদের আপন ঘরে একটা কাণা-কড়ি যায় না। হইতে পারে, বড় লোকেরই মতি বদলাইয়াছে, কিন্তু তাতে তোমার কি? তুমিই বা এমন কোন্‌ ছোট লোকটা। আজ যাঁরা বড়’র পূজা পাইয়া আসিতেছেন, তাঁহাদের কর্ম্ম, তাঁহাদের পুণ্য ও তাঁহাদের যোগ্যতা অর্জ্জন করিবার পূর্ণ সম্ভাব্যতা কি তোমারও মধ্যে নাই?—শুধু বাহির কর, ভিতরকে প্রকাশিত কর, অন্তরকে অভিব্যক্তি দাও।
চাষার ছেলে লাঙ্গল কাঁধে করিলেও চাষার ছেলে, রাজ সিংহাসনে বসিলেও চাষার ছেলে। আবার রাজার ছেলে ভিক্ষার ঝুলি লইয়া ভ্রমিয়া বেড়াইলেও তাহার পিতৃপরিচয়টা লোপ পায় না, সে রাজার ছেলেই থাকে। অবস্থার বিবর্ত্তন মানসম্মানের হ্রাস-বৃদ্ধি করিতে পারে কিন্তু পিতৃ-পরিচয় মুছিয়া দিবার বা রক্ত-সম্বন্ধের বিলোপ-সাধন করিবার ক্ষমতা রাখে না। তুমি কি অমৃতের সন্তান নও? আজ যাঁরা বড়’র মর্য্যাদা কর্ম্মবলে, সাধনবলে, তপস্যার ফলে পাইয়াছেন, তাঁহারাও এই অমৃতেরই সন্তান। তবে আবার নিজেকে ছোট ভাবিয়া পিছু পিছু ছুটিতে চাহ কেন? যাহারা বড় হয়, তাহাদের লেজ থাকে না যে, তুমি ধরিয়া তাহাদের পিছে পিছে সমান পায়ে চলিবে। আর তাহাদের যদি লাঙ্গুল থাকিতই, তাহা হইলেও উহাতে এত শক্তি থাকিত না যে, অমৃতের সন্তানকে টানিয়া নেয়। নিজের মুক্তিদাতা তুমি নিজে। নিজের প্রাপ্য পরকে দিয়া নিজে নিঃস্বতার মিথ্যা ছদ্মবেশ পরিও না। কেহ কাহারও বশ্য নহে, কেহ কাহারও আয়ত্তে নহে, কেহ কাহারও ভ্রূকুটীর অধীন নহে। জগতের প্রতি পরমাণু নিজ নিজ হিসাবে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র।
স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের ‘কর্ম্ম-ভেরী’ থেকে

16th     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ