বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

ঈশ্বর

প্রাণরূপী ঈশ্বর বিনা পায়ে চলেন, বিনা কানে শোনেন, হাত ছাড়া সব কাজ করেন, মুখ ছাড়া সকল রস পান বা ভোগ করেন, মুখে শব্দ নেই অথচ বড় বক্তা। শরীর নেই অথচ স্পর্শবোধ আছে, বিনা চোখে সব দেখেন, নাক বিনা ঘ্রাণ গ্রহণ করেন। ভগবানের এইভাবে সব কাজই অলৌকিক, যাঁর মহিমা বর্ণনা করা যায় না। এই প্রাণের তিনটি অবস্থা। আদি, অন্ত ও মধ্য। আদি ও অন্তে ইনি স্থির এবং মধ্যে চঞ্চল। আদি ও অন্তে স্থির হওয়ায় একটি অবস্থা এবং মধ্যে চঞ্চল, অর্থাৎ স্থির ও চঞ্চল, প্রাণের মূলতঃ এই দুটি অবস্থা। মধ্যের চঞ্চল অবস্থাই জীবভাব অর্থাৎ ব্যক্তভাব এবং আদি ও অন্তের স্থির অবস্থাই শিবভাব অর্থাৎ অব্যক্তভাব। জন্মের পূর্বে স্থির, মৃত্যুর পরেও স্থির, মধ্যে চঞ্চলরূপ জীবিতাবস্থা। এই চঞ্চলতাই মহামায়া। পৃথিবীর যেমন তিনভাগ জল এবং একভাগ স্থল, তেমনি প্রাণের তিনভাগই স্থির এবং একভাগ চঞ্চল। এই একভাগ চঞ্চলতায় বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রকাশ। 
এই প্রাণরূপী ঈশ্বরকে কেমন করে পাওয়া যায়? ইনি সূক্ষ্মাদপিসূক্ষ্ম, ইনি মহাস্থির। এমন স্থির যা পৃথিবীর কোন কিছুর দ্বারা তুলনা হয় না। স্থিরপ্রাণই চঞ্চলপ্রাণের উৎসস্থল। স্থিরপ্রাণ অব্যক্ত এবং চঞ্চলপ্রাণ প্রকাশমান। প্রাণের চঞ্চল অবস্থাই যেহেতু প্রকাশমান এবং জীবের বর্তমান অস্তিত্ব, অতএব যদি কোন প্রকারে স্থির হতে পারে তবেই তাঁকে পাওয়া যাবে। কারণ চঞ্চলতাই জীব এবং স্থিরত্বই শিব। এছাড়া আর কোন পথ নেই। আবার তাঁকে পাওয়া যাবে বললেও ঠিক হয় না। যেমন লবণকে জলে মেশালে আর লবণ থাকে না, তখন উহা জলে পরিণত হয়। ঠিক তেমনি জীব সাধনা করে যখন মহাস্থির হয় অর্থাৎ ভগবানকে পায়, তখন সে আর জীব থাকে না, তখন সে নিজেই শিব হয়। অর্থাৎ ভগবানকে পাওয়া যায় না, নিজেকে ভগবান্ হতে হয়। নদীর ধর্ম তার উৎসস্থলরূপ সমুদ্রকে পাওয়া। যখন সে সমুদ্রকে পায় তখন সে নিজেই সমুদ্র হয়ে যায়। তখন নদীর নাম-রূপ সবকিছু হারিয়ে যায় অর্থাৎ আর নদীত্ব থাকে না। তেমনি জীবের ধর্মও তার উৎস্থলরূপ মহাস্থির প্রাণকে পাওয়া। যখন সে তাঁকে পায় তখন তার সমস্ত চঞ্চলতার অবসান হয়ে, নাম-রূপ সবকিছু হারিয়ে মহাস্থিরে রূপান্তরিত হয়। কারণ স্থিরপ্রাণই বর্তমান চঞ্চলপ্রাণের উৎসস্থল; স্থিরপ্রাণই ব্রহ্ম। তিনি ঘটস্থ হলে অর্থাৎ দেহস্থ হলে আত্মা পদবাচ্য। সেই স্থির আত্মাই যখন শ্বাস-প্রশ্বাসরূপে জীবদেহে চঞ্চলতা প্রাপ্ত হন, তখন তিনি প্রাণ পদবাচ্য। সেই প্রাণই আবার ইন্দ্রিয় সংযোগে থাকলে জীবাত্মা পদবাচ্য। অতএব এই প্রাণই ঈশ্বর এবং এই চঞ্চল প্রাণের অতীতাবস্থারূপ স্থিরাবস্থা যাহা তাহাই পরমেশ্বর। অতএব প্রাণই আত্মা বা পরমাত্মা। তিনি সর্বব্যাপী, সুতরাং তিনি এই দেহের মধ্যেও আছেন।  
বাচস্পতি অশোককুমার চট্টোপাধ্যায়ের ‘প্রাণময়ং জগৎ’ থেকে

11th     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ