বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

জপ

জপ ও ধ্যান এ দুইটির পরস্পর সম্বন্ধ বিষয়ে সাধকের অধিকারভেদবশতঃ মতভেদ রহিয়াছে। কাহারও পক্ষে জপের পর ধ্যান অনুষ্ঠেয়, আবার অন্যের পক্ষে ধ্যান না করিয়া জপে প্রবৃত্ত হওয়া বিধেয় নহে। জপের উদ্দেশ্য আমন্ত্রণপূর্বক আকর্ষণ। অর্থাৎ ইষ্টকে ভাবনা। জপের বিষয় নাম অথবা বীজ যাহাই ইউক না কেন, উহা যে সিদ্ধ শব্দের অন্তর্গত তাহাতে কোন সন্দেহ নাই। নাম ও নামীর সম্বন্ধ অচ্ছেদ্য। এইজন্য প্রাচীন ঋষিগণ শব্দ ও অর্থের স্বাভাবিক সম্বন্ধকে বাচ্য ও বাচক বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। নামকে আশ্রয় করিতে পারিলে নামীর আবির্ভাব অবশ্যম্ভাবী। এই যে নামের আশ্রয়ের কথা বলা হইল, বীজ, সম্বন্ধেও ঐ একই তত্ত্ব জানিতে হইবে। নাম ও বীজের পরস্পর পার্থক্য সম্বন্ধে এখানে কিছু বলিবার নাই।
নাম অথবা বীজ যাহাই হউক উভয়ই শব্দাত্মক। এই শব্দ কুণ্ডলিনী শক্তি হইতে উত্থিত হয়! কুণ্ডলিনী শক্তি চিদাকাশ স্বরূপ মহামায়ার নামান্তর। যখন সদ্‌গুরুর কৃপাকটাক্ষপাতবশতঃ অর্থাৎ চিৎশক্তির উন্মেষবশতঃ কুণ্ডলিনী ক্ষুদ্ধ হন, অর্থাৎ স্পন্দিত হন, তখন মহানাদের আবির্ভাব হয়। মন্ত্রাদি শুদ্ধ শব্দমাত্রই মহানাদের প্রকারভেদ অর্থাৎ এক মহানাদই ব্যক্তিগত সংস্কার ও বাসনারূপ উপাধির তারতম্য বশতঃ বিভিন্ন মন্ত্র এবং নামরূপে আত্মপ্রকাশ করে। এই শুদ্ধ শব্দ কুণ্ডলিনী হইতে উত্থিত হয় কুণ্ডলিনী শক্তিকে শুদ্ধ সৃষ্টির জননী বলা হয়। কুণ্ডলিনী শক্তির এক নাম বিন্দু। ইনি জীবদেহে মূলাধার চক্রে অথবা তন্নিম্নের আধারকমলে অনাদি কাল হইতে সুষুপ্তভাবে বর্তমান রহিয়াছেন। এই সুষুপ্তি মধ্যে জীবের অনন্তপ্রকার স্বপ্নদর্শন হইতেছে। ইহাই জাগতিক জ্ঞানের স্বরূপ। কুণ্ডলিনী জাগ্রত হইলে নিদ্রাভঙ্গ হয় বলিয়া স্বপ্নদর্শন আর থাকে না। অর্থাৎ তখন সত্যবস্তুর সাক্ষাৎকার হয় বা হইবার উপক্রম হয় এবং সেই অনুপাতে মিথ্যাজ্ঞান ও মিথ্যাদর্শন ক্রমশঃ তিরোহিত হইতে থাকে। সত্যদর্শন পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হইলে, মিথ্যাদর্শন ও তাহার কার্য চিরদিনের মত অস্তমিত হইয়া যায়। ইহাকে জ্ঞানচক্ষুর উন্মেষ বলে। সাধকগণ যে অবস্থাকে ষট্‌চক্রভেদ বলিয়া বর্ণনা করেন, তাহা বস্তুতঃ জ্ঞানচক্ষুর উন্মীলন ভিন্ন অন্য কিছু নহে। জপের মুখ্য উদ্দেশ্য জ্ঞানচক্ষুর উন্মীলন। যে কুণ্ডলিনী শক্তির কথা পূর্বে বলা হইয়াছে, তাহাকে উদ্বুদ্ধ করাই জ্ঞানের বিকাশ। ইহা ক্রমশঃ হইতে পারে এবং তেমন উচ্চ অধিকারী হইলে মুহূর্তের মধ্যে হইতে পারে। যাহাদের হঠাৎ অর্থাৎ একটি মাত্র ক্ষণের মধ্যে জ্ঞানচক্ষুর স্ফুরণ হয় তাহাদের ক্রমবিকাশ অবস্থা থাকে না বা জানিতে পারা যায় না। ইহাদের বিষয় না বলিয়া সাধারণ সাধকের বিষয় সংক্ষেপে বলিব।
ভূমধ্য বিন্দুস্থান। চিত্ত একাগ্র হইলে ইহার রশ্মি চারিদিক হইতে উপসংহৃত হইয়া বিন্দুতে ফিরিয়া আসে। সূর্যমণ্ডল হইতে যেমন কিরণধারা চারিদিকে বিকীর্ণ হয়, সেই প্রকার চিত্তবিন্দু হইতে তাহার রশ্মিমালা ছড়াইয়া পড়ে। ইহাকে বিক্ষিপ্ত অবস্থা বলে। সাধক সাধনবলে গুরুকৃপায় এই বিক্ষিপ্ত রশ্মিসমূহকে ফিরাইয়া আনে এবং কেন্দ্রস্থানে প্রতিষ্ঠিত করে। ইহারই নামান্তর একাগ্রতা। একাগ্রতার সঙ্গে সঙ্গেই জ্ঞানের উজ্জ্বল জ্যোতি প্রকাশিত না হইয়া পারে না।
ডক্টর গোপীনাথ কবিরাজের ‘পত্রাবলী’ থেকে

9th     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ