বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

ব্রহ্ম

সর্বেশ্বর ব্রহ্ম ও সর্বেশ্বরী মহামায়া আদিমিথুনকেই পুরুষ-প্রকৃতি, রাধা-শ্যাম, লক্ষ্মী-নারায়ণ, সীতা-রাম, শিব-কালী, হর-পার্বতী প্রভৃতি যুগল মূর্তি রূপে ভক্তবৃন্দ নিজ রুচিভেদে সকাম বা নিষ্কাম ভাবে আরাধনা করেন। সব উপাসনাই একই ব্রহ্মের উপাসনা। দেবতার মূর্তিভেদে উপাসকের নাম বৈষ্ণব, শৈব ও শাক্ত হয় মাত্র। পরব্রহ্ম মহামায়াশক্তির সাহায্যেই বিভিন্ন উপাস্য দেবদেবী মূর্তি ধারণ করেন। শক্তি শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ এবং শক্তি দেবতা দুর্গা, কালী, লক্ষ্মী, সরস্বতী প্রভৃতি দেবীর নারীমূর্তিতে প্রকাশ ঋষিগণের ধ্যানে হওয়ায় লৌকিক দৃষ্টান্তে সেইরূপ মূর্তি নির্মাণ হয়। সকল পুরুষ দেবতার শক্তি পুঞ্জীভূত হইয়া নারীমূর্তিতে প্রকাশিতা হইলেন ইহা চণ্ডীর প্রসিদ্ধ ঘটনা। তাহাতে মনে হয় ব্রহ্মশক্তির নারীমূর্তিতে প্রকাশই যেন স্বাভাবিক, যদিও তিনি সর্বব্যাপিনী বস্তুতঃ ব্রহ্ম বা ব্রহ্মশক্তির কোনও লিঙ্গ নাই। একই জগৎকারণকে কেহ কৃষ্ণ কেহ কালী ধ্যানে উপাসনা করেন, তাহাতে উপাসনাক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই সমান মর্যাদা; কোনও বড় ছোট চিন্তা বা বিবাদ-বিদ্বেষ অজ্ঞাতপ্রসূত মাত্র। তবে মনের ভাব ও রুচি অনুসারে—শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য, মধুর ভাবে ব্রহ্মের উপাসনা এবং ব্রহ্মকে পিতা বা মাতা ভাবিয়া উপাসনার বহু দৃষ্টান্ত শাস্ত্রে এবং সিদ্ধসাধক মহাত্মা মহাজনগণের জীবনে দৃষ্ট হয়। ভাগবত টীকাকার শ্রীবিশ্বনাথ চক্রবর্তী একটি সুন্দর কথা টীকায় বলিয়াছেন। ভূভারহরণের জন্য পৃথিবীতে অবতরণ করার পূর্বে ভগবান্‌ তাঁহার যোগমায়াশক্তিকে অগ্রে এখানে আসিয়া শ্রীকৃষ্ণলীলার পূর্বকর্তব্য কাজ অগ্রসর করার জন্য বলিলেন। শ্রীকৃষ্ণ উপাসক ভক্তগণকে বৈষ্ণব এবং শক্তি-উপাসকগণকে শাক্ত বলা হইবে (“এবং সতি ত্বদবতারত্বেন মদবতারত্বেন চ কেচিদ্‌ জনা শাক্তাঃ কেচিদ্‌ বৈষ্ণবা ভবিষ্যন্তীতি ভাবঃ”)। জগৎ কারণ ব্রহ্ম যে একত্রপিতা ও মাতা উভয়ই তাহা গীতার উক্তিতে স্পষ্ট—“পিতাহমস্য জগতো মাতা ধাতা পিতামহঃ।” শ্রীভগবান্‌ তাঁহার স্বমুখের এই বাণীকে সত্য করার জন্য গৌরাঙ্গলীলায় শ্রীচৈতন্যদেবের আদ্যাশক্তি মূর্তি ধারণ। শ্রীল বৃন্দাবন দাস ঠাকুর স্তব লিখিয়াছেন শ্রীচৈতন্যভাগবতে—“জয় জয় জগতজননী মহামায়া” ইত্যাদি। বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণের কালীরূপ ধারণ এবং শ্রীপাট খড়দহে শ্রীশ্রীশ্যামসুন্দরের শ্যামামূর্তি ধারণ প্রভৃতি ঘটনার অভিন্নতা প্রদর্শনই তাৎপর্য। “যঃ কৃষ্ণঃ সৈব দুর্গা স্যাৎ”—গৌতমীয় তন্ত্র। ব্রহ্ম ও ব্রহ্মশক্তি যে এক ও অভিন্ন, কেবল লীলার জন্যই পৃথক্‌ রূপ তাহা শ্রীশ্রীচৈতন্যচরিতামৃতের অনবদ্য ভাষায় পরিস্ফূট—“রাধা পূর্ণশক্তি কৃষ্ণ পূর্ণ শক্তিমান্‌।”  
পণ্ডিতপ্রবর জ্যোতির্ময় নন্দের ‘জ্যোতির্ময় রচনাঞ্জলি’ থেকে

21st     January,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ