বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

শক্তি

নির্দিষ্ট আদর্শ একটি আছে, কিন্তু ইহাও ঠিক যে, মানবজাতির একটি বৃহৎ অংশ সেই আদর্শে পৌঁছিতে পারে না, ধারণাতেও তাহা আনিতে পারে না।...যাঁহারা শক্তিমান্‌ তাঁহারা ঐ আদর্শ অনুযায়ী চলেন। অনেক সময়েই অসমর্থদের প্রতি তাঁহাদের সহানুভূতি থাকে না। শক্তিমানের নিকট—দুর্বল তো শুধু কৃপারই পাত্র! শক্তিমানরাই আগাইয়া যান।...অবশ্য ইহা আমরা সহজে বুঝিতে পারি যে, দুর্বলের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন হওয়া এবং তাহাদের সাহায্য করাই উচ্চতম দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দার্শনিকগণ আমাদের হৃদয়বান্‌ হওয়ার পথে প্রতিবন্ধক হইয়া দাঁড়ান। এ পৃথিবীতে কয়েক বৎসরের জীবন দ্বারা এখনই সমগ্র অনন্ত জীবন নিরূপিত করিয়া ফেলিতে হইবে—এই মত যদি অনুসরণ করিতে হয়,...তবে ইহা আমাদের নিকট অত্যন্ত নৈরাশ্যজনকই হইবে।...যাহারা দুর্বল, তাহাদের কথা ভাবিবার অবসর আমাদের থাকিবে না। যদি এই জগৎ আমাদের অন্যতম অপরিহার্য শিক্ষালয় হয়, যদি অনন্ত জীবন শাশ্বত নিয়ম অনুসারেই গঠিত, রূপায়িত এবং পরিচালিত করিতে হয়, আর শাশ্বত নিয়মে সুযোগ যদি প্রত্যেকেই লাভ করে, তাহা হইলে তো আমাদের তাড়াহুড়া করিবার কোন প্রয়োজন নাই। সমবেদনা জানাইবার, চারিদিকে চাহিবার এবং দুর্বলের সাহায্যে হস্ত প্রসারণ করিয়া তাহাদিগকে প্রতিপালন করিবার প্রচুর সময় আমাদের আছে।
বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে সংস্কৃতে আমরা দুইটি শব্দ পাই: একটি ‘ধর্ম’, অপরটি—‘সংঘ’। ইহা খুবই বিস্ময়কর যে, শ্রীকৃষ্ণের শিষ্য ও বংশধরগণের অবলম্বিত ধর্মের কোন নাম নাই, (যদিও) বিদেশীরা ইহাকে হিন্দুধর্ম বা ব্রাহ্মণ্যধর্ম বলিয়া অভিহিত করেন। ‘ধর্ম’ এক, তবে ‘সম্প্রদায়’ অনেক। যে মুহূর্তে তুমি ধর্মের একটি নাম দিতে যাও, ইহাকে স্বাতন্ত্র্য দিয়া অন্যান্য ধর্ম হইতে পৃথক্‌ করিয়া ফেলো, তখনই ইহা একটি সম্প্রদায়ে পরিণত হয়, তখন আর উহা ‘ধর্ম’ থাকে না; সম্প্রদায় শুধু নিজের মতটিই (প্রচার করে), ঘোষণা করিতে ছাড়ে না যে, ইহাই একমাত্র সত্য, অন্য কোথাও আর সত্য নাই। পক্ষান্তরে ‘ধর্ম’ বিশ্বাস করে যে, জগতে একটিমাত্র ধর্মই চলিয়া আসিতেছে এবং এখনও আছে। দুইটি ধর্ম কখনও ছিল না। একই ধর্ম বিভিন্ন স্থানে উহার বিভিন্ন দিক্‌(উপস্থাপিত করিতেছে)। মানবজাতির লক্ষ্য এবং সম্ভাবনা সম্বন্ধে যথাযথ ধারণা করাই আমাদের কর্তব্য। আমাদের দৃষ্টিকে স্বচ্ছ করিয়া ঊর্ধ্বে এবং সম্মুখে আগুয়ান মানবজাতিকে উদার দৃষ্টিতে দেখিতে শেখানোই শ্রীকৃষ্ণের মহতী কীর্তি। তাঁহার বিশাল হৃদয়ই সর্বপ্রথম সকল মতের মধ্যে সত্যকে দেখিতে পাইয়াছিল, তাঁহার শ্রীমুখ হইতেই প্রত্যেক মানুষের জন্য সুন্দর সুন্দর কথা প্রথম নিঃসৃত হইয়াছিল।
এই কৃষ্ণ বুদ্ধের কয়েক হাজার বৎসরের পূর্ববর্তী। এমন বহু লোক আছেন, যাঁহারা বিশ্বাস করেন না যে, কৃষ্ণ কখনও ছিলেন। কাহারও কাহারও বিশ্বাস—প্রাচীন সূর্যোপাসনা হইতেই কৃষ্ণের পূজা উদ্ভূত হইয়াছে। সম্ভবতঃ কৃষ্ণ নামে বহু ব্যক্তি ছিলেন। উপনিষদে এক কৃষ্ণের উল্লেখ আছে, এক কৃষ্ণ ছিলেন রাজা, আর একজন ছিলেন সেনাপতি। সবগুলি এক কৃষ্ণে সম্মিলিত হইয়া গিয়াছে। ইহাতে আমাদের কিছুই আসিয়া যায় না। ব্যাপার এই যে, যখন আধ্যাত্মিকতায় অনুপম এমন একজন আবির্ভূত হন, তখন তাঁহাকে ঘিরিয়া নানাপ্রকার পৌরাণিক কাহিনী রচিত হয়।
স্বামী বিবেকানন্দের ‘মহাপুরুষ প্রসঙ্গ’ থেকে 

20th     January,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ