বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

ঠাকুর

একদা ঠাকুর বললেন—“ওঁ হর গুরো শঙ্কর শিব শম্ভো”—এটি হচ্ছে যুগের যুগমন্ত্র। আসনে ধ্যানে বসে এটি পাওয়া গেছে। এর প্রচারে জগতে অনন্ত কল্যাণ সাধিত হবে।” মনে হলো ঠাকুরের এই বাণীর সত্যতা পরীক্ষা করতে হবে। যেমন ইচ্ছা, তেমনি কাজ। বাজিতপুরের উৎসব সবে মাত্র শেষ হয়েছে। শ্রীশ্রীঠাকুরের জিনিসপত্র ও উৎসবের আসবাবপত্র গোছ গোছ করতে অতিমাত্র ব্যস্ত সকলে। আচার্য্যদেবও মন্দিরাভ্যন্তরে শত শত ভক্ত ও নরনারীকে উৎসবের শেষ দর্শন ও আশীর্বাদ দিতে বিশেষ ব্যাপৃত। লেখক মন্দিরের নীচে সিদ্ধাসন অর্চ্চনালয়ে বসে একাকী ‘ওঁ’ হর গুরো শঙ্কর শিব শম্ভো” ধুনটি গাইছে উচ্চ কণ্ঠে। কতক্ষণ যে এই ভাবে কাটলো হুঁস নাই তার সে দিকে। ইতোমধ্যে অবাক্‌ হয়ে সে দেখলো ধুনের দেবতা সেই শিবশোম্ভু, ঠাকুর কখন এসে দাঁড়িয়ে আছেন তার সামনে, চোখ খুলে তাঁকে সামনে দেখতেই সেবক গদ গদ হয়ে লুটিয়ে পড়লো তাঁর চরণমূলে। প্রসন্ন আননে বললেন তিনি—“এতক্ষণ এই ভাবে উচ্চকণ্ঠে গান গাইলে তোমার কণ্ঠস্বর খারাপ হয়ে যাবে। গলা খারাপ হলে পরে বক্তৃতা দেওয়া কঠিন। এরূপ ভাব নিয়ে ধীরে ধীরে গাইলেও ফল পাওয়া যায়। যার নখদর্পণে সারাটি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড প্রতিনিয়ত ভাসছে তাঁর অজ্ঞাত কিছুই থাকতে পারে না।” এই ব’লে শিরঃস্পর্শ করে আশীর্বাদ দিয়ে চলে গেলেন তিনি। ওঁ হর গুরো শঙ্কর শিব শম্ভো—নামক সঙ্ঘের ধুনটির মহত্ত্ব সম্বন্ধে আর কোন সংশয়, কোন সন্দেহ রইল না লেখকের প্রাণে।
ইং ১৯৩০ সাল। নিদারুণ ব্যাধিতে শয্যাগত থাকায় সে-বার বাজিতপুর উৎসবে শুভপদার্পণ করতে পারেন নি আচার্য্যদেব। শ্রীমৎ স্বামী যোগানন্দজী, স্বামী ওঁকারানন্দ প্রভৃতি আমরা কয়েক জন আদিষ্ট হয়ে এসেছি কোন প্রকারে উৎসবের কাজ সম্পন্ন করতে। উৎসবের যাবতীয় পর্ব্বগুলি ঐকান্তিক আন্তরিকতা এবং আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্‌যাপিত হলো সকলের সমবেত প্রচেষ্টায়। পরন্তু উৎসব-দেবতা যিনি, যাঁকে আশ্রয় করে উৎসবের যাবতীয় আনন্দ, তিনি এবার অনুপস্থিত। ভীষণ সঙ্কটাপন্ন ব্যাধিতে শয্যাশায়ী তিনি কলকাতায়। এজন্য উৎসবাগত শতসহস্র নরনারীর প্রাণে রয়েছে অসহ্য দুঃখ-বেদনা। আমাদের হৃদয়েও এ কারণে উৎকণ্ঠা অশান্তির অন্ত নাই। কোনক্রমে যন্ত্রবৎ নির্দিষ্ট কর্ত্তব্য ও দায়িত্বগুলি প্রতিপালন করা হচ্ছে যথাবিধি মতে। কিন্তু আমাদের সকলের মনপ্রাণ তুষানলের ন্যায় দগ্ধ-বিদগ্ধ হচ্ছে ভিতরে ভিতরে। হঠাৎ পুণ্যা মাঘী পূর্ণিমার মঙ্গল ঊষায় সঙ্কল্প জাগলো লেখকের প্রাণে—ধুনী জ্বেলে সারা দিন রাত্রি শ্রীশ্রীঠাকুরের পবিত্র স্বাস্থ্য কামনায় প্রার্থনা-মন্ত্রসহ আহুতি দিতে হবে ধুনির পবিত্র অগ্নিতে। কী এক অপূর্ব আবেগে একাসনে বসে দুর্জয় সে সঙ্কল্প পূর্ণ করলো সেবক। আহারনিদ্রা, বাহ্যপ্রস্রাব পরিহার করে সারা দিন রাত্রি আকুল আবেগে এই ভাবে প্রার্থনা ও আহুতি দিতে দিতে কাটিয়ে দিল সে। উৎসবশেষে স্বামী যোগানন্দজীর ইচ্ছামত কীর্ত্তনসহ সেই যজ্ঞভস্ম বিসর্জ্জন দেওয়া হলো পার্শ্ববর্ত্তী খালের জলে। উৎসব সম্পন্ন করে কোলকাতায় প্রত্যাবৃত হলাম আমরা। 
স্বামী নির্ম্মলানন্দের ‘শ্রীশ্রীপ্রণবানন্দ—শত রূপে, শত মুখে’ থেকে

2nd     January,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ