বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

সে-যুগ এ-যুগ মিলে গেল

সে-যুগের অর্থাৎ পৌরাণিক যুগের দুটি ঘটনার উল্লেখ করছি আমরা। ত্রেতাযুগে শ্রীরাম-লক্ষ্মণ গুরু বশিষ্ঠের সঙ্গে বিশ্বামিত্র মুনির তপোবনে গেছেন। রাক্ষসদের হাত থেকে ঋষিদের যজ্ঞানুষ্ঠান রক্ষা করতে হবে। ভোর থেকে সনাতন ধর্মের রীতি অনুযায়ী তপোবনে ঋষিদের নিয়মিত বেদপাঠ, নিরন্তর যজ্ঞকর্মানুষ্ঠান, হোমশিখার পবিত্র স্পর্শে বৃক্ষলতা, পাখিদের অব্যক্ত এবং ব্যক্ত উল্লাস লক্ষ্য করা যায়। শুচিশুভ্র পরিবেশে ধর্ম-দর্শনের কেন্দ্রস্থল ছিল এই সব তপোবন। কিন্তু এই সভ্যতা, শিক্ষা, সংস্কৃতির পরম বিদ্বেষী হল নিশাচর রাক্ষসরা। ঋষি বিশ্বামিত্রের তপঃপ্রভাবে বনের পশুরা হিংসা ভুলে ছিল। কিন্তু নিশাচর রাক্ষসদের হাতে নিস্তার ছিল না। শ্রীরাম তাঁদের অভয় দিলেন—আপনারা যথারীতি ধর্মক্রিয়া আরম্ভ করুন। রামকথা শুনে ঋষিরা যথাশাস্ত্র দ্রব্যাদি আহরণ করে যজ্ঞক্রিয়া আরম্ভ করলেন। যথারীতি রাক্ষসদেরও আবির্ভাব ঘটল। লক্ষণ তাদের নিধন করলেন। এমন সময় তাড়কা রাক্ষসীর পুত্র মারীচ ক্রোধে গর্জন করতে করতে রামচন্দ্রের সামনে এল। তখন বিশ্বামিত্র ঋষি শ্রীরামকে এই মায়াবী রাক্ষসের দস্যুতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানালেন—এই রাক্ষস নরমাংসে উদরপূর্ণ করার জন্য নিষ্পাপ ঋষিদের হিংসা করে। এর দয়ামায়া কিছুই নেই কেন?
মারীচ উত্তর দিয়েছিল—হে রাম, আমাদের দোষ কোথায়? আমরা ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যদের ধরে ধরে খাই; যারা শুদ্ধ জীবনযাপন করে দেবতাদের ডাকে, তাদের বিনাশ করি; জনপদ, নগরকে শ্মশানভূমিতে পরিণত করি। এই তো আমাদের কাজ। তোমাদের বিনাশ করা ছাড়া আমাদের তো অন্য কোন ধর্ম তোমরা স্বীকার কর না। আমরা যা করি তা আমাদের কাছে নিত্য, সনাতন ধর্মই। তোমাদের বেদবিহিত ধর্মকর্মে তো আমাদের অধিকার নেই। আমরা সুনীতি, দুর্নীতি, সভ্যতা-সংহতি, ধর্মাধর্ম বিষয়ে অজ্ঞ, অনভিজ্ঞ। আমরা রাক্ষসরা তো সে জন্যেই রাক্ষস। আমরা রাক্ষসধর্ম পালন করছি; আমাদের মতে এই হল আমাদের সনাতন ধর্ম। এর অতিরিক্ত আর কিছু নেই। আমাদের ধর্ম পরহিংসা, পরপীড়ন প্রশস্ত। একে খারাপ বল কেমন করে?
অকাট্য যুক্তি। কোনটা ভাল, কোনটা খারাপ তা জানানোর এবং জানার সুযোগ তাদের নেই। সুতরাং খারাপটা দেওয়াই আমাদের ধর্ম। সেজন্য আমরা দায়ী হব কেন? ঠিকই। সেজন্যই তো ভগবান তাদের উদ্ধার করতে এসেছেন, নিধন করে। তার আগে দ্বাপরে কি হলো তা দেখি।
দ্বাপরে শ্রীকৃষ্ণও ঠিক এমনই প্রশ্নের সম্মুহীন হয়েছিলেন। বৃন্দাবনের হ্রদে কালীয় নাগ থাকে। হ্রদের জলকে বিষাক্ত করে রেখেছে। ক্রূর সাপ প্রাণিজগতের ত্রাস। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ অপূর্ব নৃত্যিভঙ্গিমায় অনন্ত সাপের এক একটি ফণাতে চরণ স্পর্শ করছেন আর ফণাগুলি ভেঙে পড়ছে। তার দুর্দশার শেষ নেই; এরপর মারা পড়বে। সে সময় তার স্ত্রীরা এসে স্তবস্তুতি করে শ্রীকৃষ্ণকে নিরস্ত করলে তিনিও ভগ্নমস্তক এবং মূর্চ্ছিত কালীয়কে রেহাই দিলেন। এরপর দীন অর্থাৎ দুর্দশাপন্ন কালীয় নাগ ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরে পেয়ে অতিকষ্টে শ্বাস নিতে নিতে শ্রীকৃষ্ণকে বললে—
বয়ং খলাঃ সহোৎপত্ত্যা তামসা দীর্ঘমন্যবঃ
স্বভাবো দুস্ত্যজো নাথ! ভূতানাং যদ্‌ অসদ্‌গ্রহঃ।
    হে প্রভু, আমরা তো জন্ম থেকেই খল, তমোগুণস্বভাব, অতিশয় ক্রোধী (দীর্ঘমন্যবঃ)। সেই স্বভাব কি করে ত্যাগ করব? এবং এও তো সত্য—আপনিই তো এভাবে আমাদের সৃষ্টি করেছেন। ফলে জন্ম থেকেই ক্রোধপরায়ণ। সুতরাং আমরা তা ত্যাগ করে কি করে ভাল হবো। আর—
ভবান্‌ হি কারণং তত্র সর্বজ্ঞো জগদীশ্বরঃ
অনুগ্রহং নিগ্রহং বা মন্যসে তদ্বিধেহি নঃ।
আপনিই তো কারণ এ কাজের। সুতরাং অনুগ্রহ, নিগ্রহ যা ইচ্ছা তাই করুন।
স্বামী সুপর্ণানন্দের ‘সত্যের আনন্দরূপ’ থেকে 

28th     November,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ