বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

দীক্ষা

‘‘দীপজ্ঞানং যতো দদ্যাৎ কুর্যাৎ পাপক্ষয়ং ততো।
তস্মাৎ দীক্ষেতি সা প্রোক্তা সর্বতন্ত্রস্য সম্মতা।।’’
‘দী’ আর ‘ক্ষ’ নিয়ে হ’ল ‘দীক্ষ’, এর সঙ্গে স্ত্রী লিঙ্গে ‘আ’ প্রত্যয় করে হ’ল দীক্ষা। ‘দীপজ্ঞানং’ জিনিসটা কী? কোনো মানুষের কাছে যদিও চলার পথটা সে মোটামুটি জানে তাহলেও তার কাছে যদি আলোক-বর্তিকা বা টর্চ না থাকে, তাহলে অন্ধকারে সে ঠিক ভাবে চলতে পারবে না। আর পথের সংকট থাকা সত্ত্বেও সে দেখতে পারবে না, আর ঠিক ভাবে চলতে না পারায় সে হোঁচট খেয়ে পড়েও যেতে পারে। সেই জন্যেই দরকার হচ্ছে আলোকবর্তিকা, টর্চ বা দীপনী। এই থেকে ‘দী’ শব্দটা এসেছে। মন্ত্রচৈতন্য, মন্ত্রাঘাত— এই রকম কতকগুলো জিনিসের সমষ্টি দীপনী বা দীপজ্ঞানম্‌। মানুষকে দীক্ষা নেবার সময়ে দরকার মন্ত্রচৈতন্যও বটে, মন্ত্রাঘাতও বটে। কেবলমাত্র কয়েকটা শব্দ বা syllable নিলেই তো আর মন্ত্র হয় না। কারণ যত বীজ বা acoustic expression রয়েছে একদিক দিয়ে দেখতে গেলে তা সবই মন্ত্র বটে, কারণ তারা সমস্তই মূলা প্রকৃতির অভিব্যক্তি— পরমপুরুষের ইচ্ছায়। অভিব্যক্তি যখন আছে তখন তাতে স্পন্দন রয়েছে, তাতে শব্দও রয়েছে, বর্ণও রয়েছে। সে বিচারে দেখতে গেলে আর্য বর্ণমালায় ‘অ’ থেকে ‘ক্ষ’ পর্যন্ত যে পঞ্চাশটা বর্ণ রয়েছে সেগুলো সবই মন্ত্র— ‘যত শোনো কর্ণ পুটে, সবই মায়ের মন্ত্র বটে।’ কিন্তু তার মধ্যে থেকেই মানুষকে তার সংস্কার অনুযায়ী মন্ত্র বেছে নিতে হবে; ও সে গুলো হবে তদিষ্ট মন্ত্র। কেবল শব্দ হলেই মন্ত্র হতে পারে, কিন্তু তা ইষ্ট মন্ত্র নয় বা সাধনায় ব্যবহার্য জিনিসও নয়। মন্ত্রকে হতে হবে চেতনাসম্পন্ন— সিদ্ধমন্ত্র। যে মন্ত্রকে চেতনা দেওয়া হয়েছে তাকে বলে সিদ্ধমন্ত্র। মহাকৌলরাই সিদ্ধমন্ত্র তৈরী করতে পারেন। তাঁরা শব্দ বেছে নিয়ে, শব্দের syllable বেছে নিয়ে তাতে বিশেষ প্রাণস্পন্দনের অধ্যারোপ করে দেন, তবে তাকে সিদ্ধমন্ত্র রূপে ঘোষণা করেন। এইভাবে সিদ্ধীকৃত যে মন্ত্র, তাকেই বলা হয় মন্ত্রচৈতন্য। আর তা না হলে মন্ত্র শব্দসমষ্টি মাত্র।
‘‘চৈতন্যরহিতাঃ মন্ত্রাঃ প্রোক্তাঃ বর্ণাস্তু কেবলম্‌
ফলং নৈব প্রযচ্ছন্তি লক্ষকোটি জপৈরপি।।’’
তা ছাড়া নিজের পছন্দমত যে যেমন ইচ্ছে শব্দ বেছে নিয়ে যদি জপ করতে শুরু করে দেয় তবে লক্ষকোটি জপেও কোনো কাজ হবে না; কারণ সে মন্ত্র সিদ্ধমন্ত্র বা চৈতন্যযুক্ত মন্ত্র নয়। সাধারণ মানুষ মন্ত্রচৈতন্য করতে পারে না, করা সম্ভবও নয়। তাদের সিদ্ধমন্ত্র জপ করে কাজ করতে হয়। [তখন] অত্যল্প কালের মধ্যেই তার মানস দেহে ও আত্মিক দেহে পরিবর্তন আসতে থাকে। তার মধ্যে পাশ-রিপুর প্রভাব দ্রুত কমে যায়; সে দ্রুত গতিতে পরমপুরুষের দিকে ছুটে যায়। কে কী প্রশংসা করছে ওসব নিয়ে মাথা ঘামাবার সময় তার নেই। সে ছুটেই যাচ্ছে, তার আদর্শের দিকে মন্ত্রচৈতন্যের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে। 
শ্রীআনন্দমূর্ত্তির ‘আনন্দ বচনামৃতম্‌’ (১০-১৩ খণ্ড) থেকে

27th     November,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ