বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

সত্য

ভাব কি কার্যে পরিণত করা সম্ভব? বর্তমান সমাজে ইহা কি কার্যে পরিণত করা যাইতে পারে? তাহার উত্তর এই, সত্য প্রাচীন বা আধুনিক কোন সমাজকে সম্মান করে না, সমাজকেই সত্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করিতে হইবে; নতুবা সমাজ ধ্বংস হউক। সত্যের উপরই সকল সমাজ গঠিত হইবে; সত্য কখনও সমাজের সহিত আপস করিবে না। নিঃস্বার্থতার ন্যায় একটি মহৎ সত্য যদি সমাজে কার্যে পরিণত না করা যায়, তবে বরং সমাজ ত্যাগ করিয়া বনে গিয়া বাস কর। তাহা হইলেই বুঝিব, তুমি সাহসী। সাহস দুই প্রকারের: এক প্রকারের সাহস কামানের মুখে যাওয়া; আর এক প্রকার—আধ্যাত্মিক দৃঢ় প্রত্যয়ের সাহস। একজন দিগ্বিজয়ী সম্রাট একবার ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন। তাঁহার গুরু তাঁহাকে ভারতীয় সাধুদের সহিত সাক্ষাৎ করিতে বলিয়া দিয়াছিলেন—অনেক অনুসন্ধানের পর তিনি দেখিলেন, এক বৃদ্ধ সাধু এক প্রস্তরখণ্ডের উপর উপবিষ্ট। সম্রাট তাঁহার সহিত কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলিয়া বড়ই সন্তুষ্ট হইলেন। সুতরাং তিনি ঐ সাধুকে সঙ্গে করিয়া নিজ দেশে লইয়া যাইতে চাহিলেন। সাধু তাহাতে অস্বীকৃত হইলেন; বলিলেন, ‘আমি এই বনে বেশ আনন্দে আছি।’ সম্রাট বলিলেন, ‘আমি সমুদয় পৃথিবীর সম্রাট। আমি আপনাকে ধন ঐশ্বর্য ও পদমর্যাদা প্রদান করিব।’ সাধু বলিলেন, “ঐশ্বর্য পদমর্যাদা প্রভৃতি কিছুতেই আমার আকাঙ্ক্ষা নাই।” তখন সম্রাট বলিলেন, “আপনি যদি আমার সহিত না যান, তবে আমি আপনাকে মারিয়া ফেলিব।” সাধু তখন উচ্চ হাস্য করিয়া বলিলেন, “মহারাজ, তুমি যত কথা বলিলে, তন্মধ্যে ইহাই দেখিতেছি মহামূর্খের মতো কথা। তুমি আমাকে সংহার করিতে পার না। সূর্য আমায় শুষ্ক করিতে পারে না, অগ্নি আমায় পোড়াইতে পারে না, কোন যন্ত্রও আমাকে সংহার করিতে পারে না। কারণ, আমি জন্মরহিত, অবিনাশী, নিত্যবিদ্যমান, সর্বব্যাপী, সর্বশক্তিমান আত্মা।” ইহা আর এক প্রকারের সাহসিকতা। ১৮৫৭ খ্রীস্টাব্দে সিপাহীবিদ্রোহের সময় একটি মুসলমান সৈনিক একজন মহাত্মা সন্ন্যাসীকে প্রচণ্ডভাবে অস্ত্রাঘাত করে। হিন্দু বিদ্রোহিগণ ঐ মুসলমানকে সন্ন্যাসীর নিকট ধরিয়া আনিয়া বলিল, “বলেন তো, ইহাকে হত্যা করি।” কিন্তু সন্ন্যাসী তাহার দিকে ফিরিয়া “ভাই, তুমিই সেই, তুমিই সেই” বলিতে বলিতে দেহত্যাগ করিলেন। এও একপ্রকার সাহসিকতা। যদি এমনভাবে সমাজ গঠন না করিতে পার—যাহাতে সেই সর্বোচ্চ সত্য স্থান পায়, তাহা হইলে তোমরা আর বাহুবলের কি গৌরব কর?—তাহা হইলে তোমরা তোমাদের পাশ্চাত্য প্রতিষ্ঠানগুলির কি গৌরব কর? তোমাদের মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্বন্ধে কি গৌরব কর, যদি তোমরা কেবল দিবারাত্র বলিতে থাক—ইহা কার্যে পরিণত করা অসম্ভব? টাকা-আনা-পাই ছাড়া আর কিছুই কি কার্যকর নহে? যদি তাই হয়, তবে তোমাদের সমাজের এত গর্ব কর কেন? সেই সমাজই সর্বশ্রেষ্ঠ, যেখানে সর্বোচ্চ সত্য কার্যে পরিণত করা যাইতে পারে—ইহাই আমার মত। আর যদি সমাজ উচ্চতম সত্যের উপযুক্ত না হয়, তবে উহাকে উপযুক্ত করিয়া লও। যত শীঘ্র করিতে পার ততই মঙ্গল। হে নরনারীগণ, এই ভাব লইয়া দণ্ডায়মান হও, সত্যে বিশ্বাসী হইতে সাহসী হও, সত্য অভ্যাস করিতে সাহসী হও। জগতে কয়েক শত সাহসী নরনারী প্রয়োজন। সাহসী হওয়া বড় কঠিন। সেই সাহসিকতা অভ্যাস কর, যে সাহসিকতা সত্যকে জানিতে চায় এবং জীবনে সেই সত্য দেখাইতে পারে।
স্বামী বিবেকানন্দের ‘জ্ঞানযোগ’ থেকে

25th     November,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ