বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

জগতের বর্ণপরিচয়

জগতকেও চেনার দরকার। সেজন্য তার বর্ণপরিচয়ও দরকার। জগতের বর্ণপরিচয় না হলে জগতের স্বরূপ বোঝা যায় না। কথাটা খুব কঠিন হয়ে গেল—বোধ হয় বড়দের জন্যও। খুব ছোটরা হয়তো বুঝতে পারবে তাড়াতাড়ি। কারণ, তাদের কোন বর্ণই পরিচিত নয়। একটি ছোট ছেলেকে যার অ, আ, ক, খ বর্ণগুলোকে চেনাই হয়নি, ‘তাকে’ একটি বই এনে দিলে প্রত্যেকটি বর্ণই কতকগুলো অর্থহীন রেখা মাত্র, আঁচড় মাত্র বলে মনে হবে। কোন শব্দই সে বোঝে না। পরবর্তীকালে সে বর্ণ চিনল; বর্ণ দিয়ে শব্দ তৈরী করল। ধরা যাক, সে শিখল বাবা, মা দুটো শব্দ এবং দেখল যে বাবা, মা দুটো শব্দমাত্র নয়; তা অক্ষর বা বর্ণ দিয়ে তৈরী হলেও বাবা, মা দু-জন মানুষ—তার বড় আপনজন। যখন অক্ষর জ্ঞান হয়নি তখন বাবা ছিল কয়েকটা আঁচড় বা রেখা মাত্র। এখন হল শব্দ (word)। কিন্তু ছেলেটির কাছে বাবা আর শব্দও নয়, বাবা হাত, পা বিশিষ্ট একজন মানুষই নয়। বাবা তার অতি আপনজন। সুতরাং অক্ষর বা বর্ণ দিয়ে ভাষা বা শব্দ তৈরি করি; আর ভাষা বা শব্দ দিয়ে ‘ভাব’ প্রকাশ করি। যখন বলি, ওই তো আমার বাবা যাচ্ছে, তখন দুটো অক্ষর বা, অথবা শব্দরূপে ‘বাবা’ জ্ঞান থাকে না; থাকে ‘বাবা’ ভাবরূপে।
রবীন্দ্রনাথ বলছেন—আমরা অক্ষর, ভাষা গড়তে পারি। ‘বাবা’ শব্দটিকে বাংলা ভাষায়, উর্দুতে, হিন্দিতে, তামিলে, ফরাসি ভাষায়—নানা ভাবে গড়তে পারি। কিন্তু এসবের ভিতরে যে ভাবটি আছে অর্থাৎ ভাষায় আশ্রয় করে যে ভাবটি আছে— সেই ‘বাবা’-কে ভিন্ন ভাবে গড়া যায় না। বাবা ধ্রুব বা স্থির। ভাবের ইচ্ছামতো বদল হয় না; ভাষার হয়, অক্ষরের হয়।
অন্য একটা বিরাট শিক্ষাও পাই। যখন ‘বাবাকে’ ধরলাম তখন কিন্তু আঁকড়গুলো, অক্ষরগুলো বা বর্ণগুলোকেও দেখিনা। ‘ভাব’-কে ধরতে পারলে ভাষাগুলো গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। ‘ঐ আমার বাবা যাচ্ছে’—বললে ভাবটিকেই সর্বাংশে ধরে ফেলি। বই খুঁজে দুটো অক্ষর ‘বা’, ‘বা’ অথবা একটা শব্দ ‘বাবা’ খুঁজতে যাই না। ‘গাছ’ বললে তখন ‘গা’, ‘ছ’ দুটো অক্ষর দেখিনা বা একটা শব্দ—‘গাছ’ও দেখিনা। তারা অদৃশ্য হয়। থাকে পাতা, কাণ্ড, শাখা নিয়ে একটা গাছ। ওই গাছই সত্য, ভাবই সত্য; ভাষা নয়।
তেমনই জগতের বর্ণপরিচয়েও এমন ফল হয়। তখন জগতকে মিথ্যা বলে মনে হবে। কেন? তা তো বর্ণ, ভাষা দিয়ে তৈরি। অক্ষর এবং ভাষার বাইরে যে ভাবরূপ জগৎ আছে তা ধরতে পারি না। জগতের বর্ণপরিচয় হলে জগৎটা মিথ্যা হয়ে যাবে। যেমন বাবা বর্ণপরিচয় হওয়ায় বইটার পাতায় যে বাবা আছে তা মিথ্যা হয়ে যায়। ভাবরূপে সেই বাবা জেগে থাকেন পুত্রের মনে।
বইয়ের ‘বাবা’ ভাষার প্রয়োজন এইখানে। সে অদৃশ্য নয়, দৃশ্য। দেখা যায় এই বাবাকে। কিন্তু সেই বাবাইতো আমাদের আসল বাবাকে ধরিয়ে দেয়। তেমনি জগতে যা কিছু দেখা যায় সব ভাষা দিয়ে তৈরি। এদের পিছনে ভাবরূপে যিনি আছেন তিনি বিশ্বপিতা। তিনি অদৃশ্য। জগতের ঠিক ঠিক বর্ণপরিচয় হওয়ার অর্থঃ জগতের স্বরূপটিকে জানা।
স্বামী সুপর্ণানন্দের ‘সত্যের আনন্দরূপ’ থেকে

14th     November,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ