বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

বীজ

বাগানের মালী যেমন কোন ফলের বীজ রোপন করিয়া অঙ্কুরিত করার উদ্দেশ্য তাহাতে জলসেচন করে, যে ভাগ্যবান জীব গুরু কৃষ্ণ প্রসাদে ভক্তিলতার বীজ প্রাপ্ত হন, তিনিও তাহা রোপণ করিয়া তাহাতে শ্রবণ-কীর্তনাদি জলসেচন করেন। ফলের বীজ রোপণ করা হয় মাটিতে। ভক্তিলতার বীজ কোথায় রোপণ করিবে? চিত্তে-সৎসঙ্গ প্রভাবে যে ভজনপ্রবৃত্তি (ইহাই ভক্তিলতার বীজ) জন্মিয়াছে তাহাকে চিত্তে জাগ্রত রাখিতে হইবে। ফলের বীজ মাটিতে পুতিয়া রাখাই রোপণ। ভক্তিলতার বীজকে চিত্তরূপ মাটিতে রক্ষা করিতে হইবে, যেন ইহা চিত্তরূপ মাটি হইতে সরিয়া না যায়। শ্রবণ-কীর্তনাদির অনুষ্ঠানই হইল ভক্তিলতার বীজে জলসেচ। জলসেচের গুণে ফলের বীজ যেমন অঙ্কুরিত হয়, অঙ্কুরিত হইয়া বর্ধিত ও পরিপুষ্ট হয়, তদ্রূপ শ্রবণ-কীর্তানাদির অনুষ্ঠানের ফলে ভক্তিলতার বীজও অঙ্কুরিত হইয়া ক্রমশঃ বর্ধিত ও পরিপুষ্ট হইয়া থাকে। বীজ মাটিতে রোপণ না করিলে এবং রোপণ করিয়া তাহাতে জলসেচন না করিলে যেমন তাহা হইতে অঙ্কুর জন্মে না বরং তাহা নষ্ট হইয়া যায়, তদ্রূপ সৎসঙ্গের প্রভাবে ভজন বিষয়ে যে ইচ্ছা জন্মে তাহা যদি হৃদয়ে ধারণ করিয়া রাখা না যায় এবং ধারণ করিয়া নিয়মিত ভাবে শ্রবণ-কীর্তনাদি করা না যায়, তাহা হইলে সেই ভজনেচ্ছা বলবতী হইবে না বরং তাহা ক্রমশঃ লোপ পাইয়া যাইবে।
শ্রবণ-কীর্তনাদিরূপ জলসেচনের প্রভাবে রোপিত ভক্তিলতার বীজ হইতে অঙ্কুর জন্মে। এই অঙ্কুরই আবার বর্ধিত হইয়া ভক্তিলতায় পরিণত হয়। জলসেচনের প্রভাবে এই লতাই ক্রমশঃ বাড়িতে থাকে, বড়িতে বাড়িতে ব্রহ্মাণ্ডকে ভেদ করিয়া, অতিক্রম করিয়া উপরের দিকে উঠিতে থকে। কোনও প্রকার লতা যখন বাড়িতে থাকে, তখন কেবলই সে উপরের দিকে উঠিতে থাকে। কোনও আশ্রয় পাইলে বাড়িতে বাড়িতেও তাহাতে জড়াইয়া পড়িলে আর উপরে উঠিতে পারে না। প্রাকৃত ব্রহ্মাণ্ডে স্বর্গলোক, তপোলোক, সত্যলোক প্রভৃতি ভোগলোক আছে, কর্মফল অনুসারে জীব এই সকল লোকে আসিয়া থাকে। শ্রবণ-কীর্তনাদিরূপ সেচজল পাইয়া ভক্তিলতা বাড়িতে বাড়িতে এই সকল ভোগলোককে অতিক্রম করিয়া চলিয়া যায়। ভাবার্থ এই যে, যাঁহার চিত্তে ভক্তির উন্মেষ হইয়াছে কোনও ভোগলোকের সুখভোগের আকর্ষণই তাঁহাকে মুগ্ধ করিতে পারে না। তাঁহার মনের গতি প্রাকৃত ব্রহ্মাণ্ড ছাড়াইয়া অপ্রাকৃত ভগবদ্ধামের দিকে ধাবিত হয়। ভক্তির প্রভাবে তাঁহার সমস্ত কর্মফল নষ্ট হইয়া যায়, তাই কোন ভোগলোকই তাঁহার ভক্তিপূতচিত্তের ঊর্দ্ধগতিকে বাধা দিতে পারে না।
ভক্তিলতা বিরজাকে ভেদ করিয়া চলিয়া যায়। বিরজা হইল কারণসমুদ্র। মহা প্রলয়ে জীব সূক্ষ্মরূপে এই কারণসমুদ্রে কর্মফলকে আশ্রয় করিয়া অবস্থিতি করে। ভক্তিলতা এই কারণসমুদ্রকেও ভেদ বা অতিক্রম করিয়া চলিয়া যায়, কারণসমুদ্র ও কোনও বস্তুকে আশ্রয় করিয়া থাকিয়া যায় না। ভাবার্থ এই যে, যাঁহার হৃদয়ে ভক্তির উন্মেষ হইয়াছে তাঁহার কর্মফল সমস্ত নষ্ট হইয়া যায় সুতরাং মহা প্রলয়েও তাঁহার ভক্তিপূত চিত্তের ঊর্দ্ধগতিকে বাধা দিতে পারে না অর্থাৎ মহা প্রলয়েও তাঁহাকে কর্মল আশ্রয় করিয়া বিরজায় থাকিতে হয়না, যেহেতু তাঁহার কর্মফল নাই।
ভক্তিলতা ব্রহ্মলোককেও ভেদ করিয়া চলিয়া যায়। বিরজা ও পরব্যোমের পরবর্তী জ্যোতির্ময় ধামকে ব্রহ্মলোক বা সিদ্ধলোক বলে। যাঁহারা জ্ঞানমার্গের সাধন করিয়া সাযুজ্য-মুক্তির অধিকারী হন, অথবা যে সমস্ত দৈত্য শ্রীহরি কর্তৃক নিহত হন, তাঁহারা এই নিত্যধামে সূক্ষ্ম জীবস্বরূপে থাকেন। ভক্তিলতা এই ব্রহ্মলোককেও ভেদ করিয়া চলিয়া যায়, এখানেও অপেক্ষা করে না।
তীর্থ গোস্বামী রচিত ‘মহৎ কৃপা’ থেকে

19th     September,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ