বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

ভজস্ব মাম্‌

বিনশ্বর ও দুঃখপূর্ণ জগতে সুদুর্লভ মনুষ্য দেহধারী সংসারী মানবের ঈশ্বর ভজনই নিত্য সুখশান্তি লাভের একমাত্র প্রকৃষ্ট উপায়। এই উপদেশ স্বয়ং ভগবান্‌ গীতার নবম অধ্যায়ে রাজবিদ্যারাজগুহ্যযোগের বর্ণনার সমাপ্তিতে ব্যক্ত করিয়াছেন— ‘‘মন্মনা ভব মদ্‌ভ঩ক্তো মদ্‌যাজী নমস্কুরু’’ ইত্যাদি শ্লোকে ঈশ্বর ভজনের প্রকারসমূহ উপদিষ্ট হইয়াছে। শ্লোকটি রাজবিদ্যা রাজগুহ্যযোগের বা ভাগবতমার্গে ভক্তি ধর্মের সার ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় অষ্টাদশ অধ্যায়ের শেষেও উহার পুনরাবৃত্তি করিয়া প্রিয় ভক্তের হৃদয়ে বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করার উদ্দেশ্যে ভগবান এই কথা সত্য বলিয়া প্রতিজ্ঞা করিলেন। গীতা রত্নমালার মধ্যস্থিত মণিতুল্য এই শ্লোকটি নবম অধ্যায়ের শেষে অত্যুজ্জ্বল হইয়া শোভা পাইতেছে এবং তাহার আলোকে সমগ্র গীতা ও ভক্তহৃদয় আলোকিত হইতেছে। ভগবান্‌ই যখন একমাত্র বেদ্য ও প্রাপ্য তখন তাঁহাকে জানিবার ও পাইবার শ্রেষ্ঠ উপায় তিনি নিজেই যদি প্রকাশ করেন তাহা নির্বিঘ্ন ও নিঃসংশয় হইবেই। কিরূপ মনে ও কিরূপ আচরণে সাধক ভগবৎপরায়ণ হইয়া ভগবান঩কে লাভ করিয়া ধন্য ও কৃতার্থ হয় তাহার বিবরণ ‘মন্মনা’ প্রভৃতি শ্লোকে ভগবান নিজ শ্রীমুখে বলিয়াছেন। ভগবৎ পরায়ণ হইয়া ভগবানকে লাভ করার অব্যর্থ উপায়—সমগ্র মনটি সর্বদা ভগবানে অভিনিবিষ্ট রাখিয়া তাঁহার প্রতি একনিষ্ঠা ও অনন্যা ভক্তির সহিত বাহ্যে ও মানসে তাঁহার অর্চন এবং তাঁহার প্রীতির উদ্দেশ্যে সকল কর্ম করিতে হইবে এবং দৈন্য বিনয়ের সহিত সর্বদা তাঁহার নিকট মাথা নত করিয়া প্রণাম জানাইতে হইবে। এই অবস্থার নামান্তর পরাভক্তি ও শরণাগতি। কায়, মন, বাক্য, সকল ইন্দ্রিয় ও বুদ্ধির দ্বারা সর্বদা ঈশ্বরানুশীলনই একমাত্র কৃত্য। রাজার ভৃত্য রাজভক্ত হইলেও তাহার মন থাকে নিজের স্ত্রী-পুত্রাদির উপর, তবে তাহার দ্বারা সে স্ত্রী-পুত্রের ভক্ত হয় না। কিন্তু ভগবানকে পাইতে হইলে ব্রজগোপীদের মত সমগ্র মনটি তাঁহাতে অর্পণ করিতে হইবে এবং সেই সঙ্গে ভগবানের ভক্ত হইতে হইবে। মনকে ভাগবত চৈতন্যের সহিত এক করিয়া সমস্ত হৃদয়াবেগকে একান্ত ঈশ্বর প্রেমে পরিণত করা আবশ্যক। জীবনের সকল কর্মকে ভগবানের উদ্দেশ্যে তাঁহার প্রীত্যর্থে করিয়া যজ্ঞরূপে পরিণত করিয়া কর্মফল তাঁহাকে সমর্পণ করিলে জীবের সমস্ত সত্তা ভগবদ্‌ভিমুখী হয়। ইহাই পার্থিব জীবন হইতে দিব্য জীবনে উঠিবার উপায়। নিজ হৃদয়ে মানসিক মূর্তির মানস পূজা এবং বাহ্যজগতে সকল প্রাণীর দেহকে ভগবানের মন্দির জ্ঞান এবং সকলের মধ্যেই তাঁহাকে দর্শন করিয়া বিনম্র মস্তকে প্রণত হওয়া উত্তম ভাগবতের লক্ষণ। বিবিধ ভক্তির অনুক্ষণ শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ ও আত্মসমর্পণ প্রভৃতি অঙ্গসমূহ ‘মদভক্তঃ’ ও ‘মাং নমস্কুরু’ এই পদসমূহে অন্তর্নিহিত আছে বুঝিতে হইবে। মনের তিনটি বৃত্তি—জ্ঞানার্জনী, কমার্জনী ও সুখার্জনী। জ্ঞানার্জনী বৃত্তির বিষয় কেবল ভগবান হইলে, কর্মার্জনী বৃত্তি কেবল ভগভবৎ কর্মে প্রযুক্ত হইলে ও সুখার্জনী বৃত্তি কেবল ভগবানকে লইয়াই আনন্দ করিতে চাহিলে বিশুদ্ধ ‘মন্মনা’ হওয়া যায়। তিনি যখন যেদিকে দৃষ্টি করেন কেবল ভগবান্‌঩কেই দেখেন। ‘‘স্থাবর জঙ্গম দেখে না দেখে তার মূর্তি, যাঁহা যাঁহা নেত্র পড়ে তাঁহা ইষ্টস্ফূর্তি’’—চৈঃ চঃ। ভাগবতে ব্রজগোপীর বিশেষণ ‘‘তন্মনাকান্তদালাপাঃ’’।। গীতার ভাষা ‘‘মচ্চিত্তা মদ্গত প্রাণাঃ’’। ‘মন্মনা’ প্রভৃতি শ্লোকটিতে জ্ঞানযোগ, ভক্তিযোগ, কর্মযোগ ও শরণাগতির—সহাবস্থান একই ব্যক্তিতে সূচিত হইতেছে। ঠিক এইরূপ কর্ম, ভক্তি, জ্ঞান ও যোগ এই চতুরঙ্গ যোগ উক্ত হইয়াছে গীতার একাদশ অধ্যায়ের শেষ শ্লোকে ‘‘মৎকর্মকৃৎ মৎপরমো মদ্‌ভক্ত ইত্যাদি। কেহ কেহ ‘মন্মনা ভব’ কথার অন্য অর্থ করেন। ভগবানের মন বুঝিয়া মনের সুখকর কর্ম করা (কর্ম), ভগবানের মনে মিশিয়া যাওয়া, তাঁহার মনের মত মন করা অর্থাৎ গুণাতীত হওয়া (জ্ঞান) এবং প্রেমের দ্বারা ভগবানের মনটিকে নিজের করা (ভক্তি) এই তিন প্রকারের অর্থ হয়।
জ্যোতির্ময় নন্দের ‘জ্যোতির্ময় রচনাঞ্জলি’ থেকে

14th     September,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ