বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

ভক্তি

প্রশ্ন হইতে পারে, সৎসঙ্গাদি ব্যতীত আপনা হইতেই যদি কাহারও চিত্তে কোনও সময় ভজনের প্রবৃত্তি উদিত হয়, তবে তাহাকে ভক্তিলতার বীজ বলা যাইতে পারে কিনা। উত্তর—আপনা আপনি উদ্ভূত ভজন প্রবৃত্তি যদি মহৎকৃপার আশ্রয় লাভ করিতে না পারে, তবে তাহাকে ভক্তিলতার বীজ বলা সঙ্গত হইবে না। কারণ ভজনাঙ্গের অনুষ্ঠান করিলেও তাহা হইতে প্রেমলাভের সম্ভাবনা দেখা যায় না। “মহৎকৃপা বিনা কোন কর্মে ভক্তি নয়। কৃষ্ণ ভক্তি দূরে রহু, সংসার নহে ক্ষয়।।”  একটি দৃষ্টান্ত দ্বারা ইহা বুঝিতে চেষ্টা করা যাক। ধান হইতেই ধানের গাছ হয়, সেই গাছে ধান হয়। ধানের মধ্যে যে শস্য—চাউল আছে, তাহার মধ্যেই অঙ্কুরের, গাছের এবং ফলরূপী ধানের উপাদান থাকে। কিন্তু তাহা বলিয়া আবরণশূন্য তুষহীন তণ্ডুল হইতে কখনও অঙ্কুর জন্মিবে না—শত জলসেচ দিলেও না। তণ্ডুলের আবরণ যে তুষ, তাহাই শীতেষ্ণাদি হইতে তণ্ডুলকে—তণ্ডুলের উৎপাদিকা শক্তিকে রক্ষা করে। কেবল তাহাই নহে, ঐ আবরণ তণ্ডুলকে উৎপাদিকা শক্তিও বোধহয় দান করিয়া থাকে। নচেৎ শীতোষ্ণাদি হইতে রক্ষার নিমিত্ত তণ্ডুলের অন্য আবরণ দিলে অঙ্কুরোদ্‌গম হইত। অঙ্কুরাদির উপাদান শস্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও যেমন আবরণের আশ্রয়ব্যতীত তাহা হইতে অঙ্কুরোদ্‌গম হইতে পারে না, তদ্রূপ ভজনপ্রবৃত্তি ক্রমশঃ কৃষ্ণ বাসনার অস্ফুট অবস্থা হইলেও মহৎকৃপার আশ্রয় ব্যতীত তাহা পরিস্ফুট হইতে পারে না, এবং শুদ্ধসত্বের সহিত তাদাত্ম্য প্রাপ্তির যোগ্যতা লাভ করিতে পারে না। মহৎকৃপার আশ্রয়হীনা স্বতঃ সমুদ্ভূত ভজন প্রবৃত্তির এত শক্তি থাকিতে পারে না, যদ্বারা তাহা ভগবানের মায়াশক্তির সহিত প্রতিযোগিতা করিয়া সফলতা লাভ করিতে পারে—মায়ার ইঙ্গিতে সমুদ্ভূত ভোগ বাসনাদিকে পরাজিত করিতে পারে, কিন্তু তাহার পশ্চাতে যদি পরমশক্তিশালী মহৎকৃপা—যে কৃপা অনন্তকোটি ঐশ্বর্যের অধিপতি স্বয়ং ভগবানকে পর্যন্ত বশীভূত করিয়া দিতে সমর্থ, সেই কৃপা যদি ভজন প্রবৃত্তির পশ্চাতে অবস্থিতি করে, তাহা হইলে বহিরঙ্গা মায়াশক্তি কখনও তাহার গতিরোধ করিতে সমর্থ হইবে না। তাই মহৎকৃপার আশ্রিতা ভজন প্রবৃত্তিকেই ভক্তিলতার বীজ বলা হইয়াছে। মহৎকৃপার আশ্রয়হীনা ভজন প্রবৃত্তি হইতে ভক্তির উন্মেষের সম্ভাবনা নাই বলিয়া তাহাকে ভক্তিলতার বীজ বলা যায় না। কেহ কেহ মনে করেন ‘ভক্তিলতার বীজ’ বলিতে রতিকে লক্ষ্য করা হইয়াছে, কিন্তু তাহা সঙ্গত বলিয়া মনে হয় না। তাহার হেতু এই—ভক্তিরসামৃতসিন্ধুয়াদি ভক্তিগ্রন্থ হইতে জানা যায় সাধনভক্তির অনুষ্ঠানের ফলেই রতি জন্মে—আগে সাধনভক্তি তারপর রতি। দুই হেতুতে রতির আবির্ভাব হয়—সাধনাভিনিবেশ এবং কৃষ্ণ কৃপা ও কৃষ্ণ ভক্তের কৃপা। কৃষ্ণ কৃপা ও কৃষ্ণ ভক্তের কৃপায় যে স্থলে রতির উদয় হয়, সে স্থলে সাধনের প্রয়োজন থাকে না, কৃষ্ণ কৃপায় বা কৃষ্ণ ভক্তের কৃপায় সহসা চিত্তে রতির আবির্ভাব হইয়া থাকে। কিন্তু রতির এইরূপ আবির্ভাব অতি বিরল।
ভক্তিবেদান্ত প্রভুপাদের ‘মহৎ কৃপা’ থেকে

7th     July,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ