আমরা লক্ষ্য করেছি যে, আগের থেকে অনেক বেশি মানুষ এখন পারমার্থিক জীবনের অন্বেষণ করছে। আপনি কি বলতে পারেন তার কারণটা কি? পারমার্থিক জীবনের বাসনা সকলেরই একটি স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা। আমরা চিন্ময় জীবাত্মা, তাই জড় পরিবেশে আমরা সুখী হতে পারি না। আপনি যদি একটি জলের মাছকে ডাঙায় তুলে আনেন, তা হলে কি সে সুখী হবে? তেমনই, পারমার্থিক চেতনা ব্যতীত আমরা কখনই সুখী হতে পারি না। আজ কত মানুষ বৈজ্ঞানিক প্রগতি এবং অর্থনৈতিক উন্নতির পিছনে ধাবিত হচ্ছে, কিন্তু তারা সুখী নয়, কারণ সেগুলি মানব-জীবনের চরম লক্ষ্য নয়। বহু অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েরা সেটা বুঝতে পারছে এবং তাই তারা বৈষয়িক জীবন বর্জন করে পারমার্থিক জীবনের অন্বেষণ করছে। প্রকৃতপক্ষে, এটিই হচ্ছে যথার্থ অনুসন্ধান। কৃষ্ণভাবনামৃত হচ্ছে জীবনের যথার্থ লক্ষ্য। যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষ কৃষ্ণভাবনার অমৃত গ্রহণ করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে সুখী হতে পারে না। সেটি বাস্তব সত্য। তাই, আমরা সকলকে আহ্বান জানাই এই মহান আন্দোলন সম্বন্ধে অধ্যয়ন করে সেই সম্বন্ধে অবগত হওয়ার জন্য। সত্যি কথা বলতে কি, যে ব্যাপারটি আমাকে বিচলিত করে তা হচ্ছে—কিছুদিন আগে একজন ভারতীয় যোগীর ইংল্যান্ডে আসার পর, যে ছিল এখানে প্রথম ‘গুরু’, হঠাৎ অসংখ্য গুরুর আমদানি হতে শুরু করেছে। মাঝে মাঝে আমার মনে হয় যে, তারা সকলেই খাঁটি নয়। যে সমস্ত মানুষ পারমার্থিক জীবন সম্বন্ধে আগ্রহী, তাদের কি সমাধান করে দেওয়া উচিত যে, তারা যেন যথার্থ শিক্ষালাভের জন্য যথার্থ গুরু যাচাই করে নেয়? হ্যাঁ। গুরুর সন্ধান করা খুবই ভাল, কিন্তু আপনি যদি একজন সস্তা গুরু চান, অথবা আপনি যদি প্রতারিত হতে চান, তা হলে আপনি অনেক প্রতারক গুরু পাবেন। কিন্তু আপনি যদি ঐকান্তিক হন, তা হলে আপনি ঐকান্তিক গুরু পাবেন। যেহেতু মানুষ সব কিছুই খুব সস্তায় পেতে চায়, তাই তারা প্রতারিত হচ্ছে। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের অবৈধ স্ত্রীসঙ্গ, মাংসাহার, জুয়া, পাশা ইত্যাদি খেলা এবং মাদকদ্রব্য বর্জন করতে নির্দেশ দিই। মানুষ মনে করে যে, সেটি ভীষণ কঠিন—অনর্থক ঝামেলা। কিন্তু কেউ এসে যদি বলে, “তোমরা যত সমস্ত অপকর্ম করে চলেছ সেগুলি সব করে যাও, কেবল আমার থেকে মন্ত্র নাও,” তা হলে মানুষ তাকে খুব পছন্দ করবে। আসল কথা হচ্ছে, মানুষ প্রতারিত হতে চায়, তাই প্রতারকেরা আসে। কেউই কষ্ট স্বীকার করতে চায় না। মানব-জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে কষ্ট স্বীকার করা—তপশ্চর্যা পালন, কিন্তু সেই তপশ্চর্যা পালনে কেউই প্রস্তুত নয়। তাই প্রতারকেরা এসে বলে, “তপশ্চর্যার প্রয়োজন নেই, তোমার যা ইচ্ছা তাই করে যাও। কেবল আমাকে কিছু টাকা দাও, আমি তোমাকে একটা মন্ত্র দেব, ছয় মাসের মধ্যে তুমি ভগবান হয়ে যাবে।” এই সব হচ্ছে। আপনি যদি এইভাবে প্রতারিত হতে চান, তা হলে প্রতারকেরা আসবেই।
স্বামী প্রভুপাদের ‘আত্মজ্ঞান লাভের পন্থা’ থেকে