বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

মন

মনই মানুষকে জ্ঞানী বা অজ্ঞানী করে, বদ্ধ বা মুক্ত করে। কেউ পবিত্র হয় তার মনের জন্য, দুষ্ট হয় মনের জন্য, পাপী হয় মনের জন্য আর কাউকে ধার্মিক করে সেই মনই। তাই যার মন সর্বদা ঈশ্বরে যুক্ত তার আর অন্য সাধনের দরকার নেই। ভারতবর্ষে বিশ্বাসের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে যারা রোগ ভালো ক’রে থাকে তারা তাদের রোগীদের এই কথাগুলি জোর দিয়ে বারবার উচ্চারণ করতে আদেশ করে,—“আমার শরীর নীরোগ, আমার শরীর নীরোগ”। রোগী সেইমতো বারবার কথাগুলো উচ্চারণ ক’রে মনের শক্তিতে রোগ তাড়িয়ে দেয়। তাই তোমরা যদি নিজেদের মনে মনে দুর্বল, পাপী ও গুণহীন ব’লে ভাবো তবে কালে সত্যিই তোমরা তা-ই হয়ে যাবে। তোমরা যে মহাশক্তির অধিকারী তা জানলে ও বিশ্বাস করলে তোমার ভেতর সেই শক্তি আসবে। অনেক লোক বিনয় ক’রে বলে,—“আমি অতি নগণ্য, আমি কীটাণুকীট”। নিজেকে সবসময় এইভাবে দীন ও কীট ব’লে ভাবতে ভাবতে তারা সত্যসত্যই সময়ে কীটের মতো দুর্বল হয়ে যায়। হতাশাকে কখনোই মনে ঢুকতে দিও না, নিরাশ হওয়া উন্নতির পথে কাঁটা। মানুষ নিজেকে যেমন ভাবতে শিখবে তেমনিই হবে। কল্পতরু গাছের ছায়ায় বসে একজন লোকের মনে রাজা হবার ইচ্ছে জাগলো আর সঙ্গে সঙ্গেই সে রাজা হয়ে গেল। পর মুহূর্তে একটি সুন্দরী রমণীর বাসনা এল তার মনে। দেখতে দেখতেই একটি সুন্দরী রমণী তার পাশে এসে গেল। তখন তার মনে চিন্তা হ’ল,—“একটা বাঘ যদি এসে পড়ে আমায় খেয়ে ফেলে তা’হলে কি হবে”? হায়! সঙ্গে সঙ্গেই একটা বাঘ এসে তাকে খেয়ে নিল। ঈশ্বর এই কল্পতরু গাছের মতো। তাঁর কাছে যদি কেউ নিজেকে নিরাশ্রয় ও হতভাগ্য ব’লে মনে করে, তবে সে সেইরকমই থাকে। কিন্তু যার বিশ্বাস আছে যে ঈশ্বর তার সকল ইচ্ছাই পূর্ণ করেন, সে সবকিছুই পায় তাঁর কাছ থেকে। যে নিজেকে সামান্য জীব ব’লে মনে করে সে জীবই থাকে, আর যে নিজেকে ঈশ্বরের সমান ব’লে ভাবতে শেখে তার ঈশ্বরত্বই লাভ হয়। যে যেমন ভাবে সে তেমন হয়। হাতিকে ছেড়ে দিলে গাছপালা উপড়ে দাপিয়ে বেড়ায়, কিন্তু মাহুত তার মাথায় ডাঙ্গস দিয়ে মারলে হাতি আবার শান্ত হয়। সেইরকম মানুষের চঞ্চল মন অলস-কল্পনায় দাপিয়ে বেড়ায়, কিন্তু বিবেক-রূপ ডাঙ্গস মারলে সঙ্গে সঙ্গে শান্ত হয়। ভীতু ঘোড়ার চোখে ঠুলি পড়িয়ে না দিলে ঘোড়াটি সোজাপথে ছুটতে পারে না। সেইরকম সংসারীদের বিক্ষিপ্ত মনে বিবেক ও বৈরাগ্যের ঠুলি পরিয়ে দিলে মন আর হোঁচট খাবে না বা কুপথে যাবে না। কাদাঘোলা জলে ফটকিরি ফেলে দিলে জল পরিষ্কার হয় এবং মাটি জলের নীচে থিতিয়ে পড়ে। বিবেক ও বৈরাগ্য, অর্থাৎ সদসৎ বিচার ও সংসারে অনাসক্তি, এই দু’টি মনকে শোধন করে। বিবেক-বৈরাগ্যের প্রভাবে মন আসক্তিহীন ও পবিত্র হয়। শুঁয়োপোকা নিজের বোনা গুটিতেই আবদ্ধ হয়ে থাকে। সংসারীরাও তেমনি বাসনা-কামনার জালে জড়িয়ে থাকে। কিন্তু শুঁয়োপোকা যখন সুন্দর প্রজাপতি হয়ে ওঠে, তখন গুটি কেটে বেরিয়ে স্বাধীন হয়ে যায়। সংসারীরাও সেইরকম বিবেক ও বৈরাগ্যের ডানা গজিয়ে মায়ার বন্ধন কেটে মুক্তি পেতে পারে। সচ্চিদানন্দ সাগরের গভীরে আমাদের ডুব দিতে হবে। সেখানে লোভ ও ক্রোধের যে দৈত্যরা বাস করে, তাদের ভয় কোরো না। বিবেক আর বৈরাগ্যের হলুদ গায়ে মাখানো থাকলে ভয়ঙ্কর কুমীরের দল কাছে ঘেঁষবে না, হলুদের গন্ধ কুমীর সইতে পারে না। সদসৎ বিচার দু’রকম—ভেঙে ভেঙে ও জুড়ে জুড়ে। 
স্বামী অভেদানন্দের ‘শ্রীরামকৃষ্ণদেবের আধ্যাত্মিক বাণী’ থেকে

22nd     May,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ