বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

অধ্যাত্ম সাধনা

অধ্যাত্ম সাধনা—সংগ্রাম ছাড়া আর কিছুই নয়। এ সংগ্রাম হচ্ছে এমন এক অবস্থা প্রাপ্তির জন্য, যেখানে জীবনের উত্থান পতন—আমাদের জীবনযাত্রা এবং কর্মকে ব্যাহত করতে অক্ষম, যে অবস্থায় কোন প্রাপ্তির ইচ্ছা থাকে না এবং বেদনাময় অভিজ্ঞতাগুলি আমাদের প্রশান্তি ও সাম্য বিচলিত করতে পারে না। তখন আমরা হয়ে যাই আনন্দময় এবং জগতের দুঃখরাশি আমাদের অভিভূত করতে পারে না। এভাবে আমাদের জীবনে আসে বিপ্লব। গীতায় শ্রীভগবান বলেছেন—“যস্মিন্‌ স্থিতো ন দুঃখেন গুরুণাপি বিচাল্যতে।” এই অবস্থা লাভ করার জন্য অবশ্যই প্রয়োজন—এমন সংগ্রাম, যা দৃঢ়সংকল্প ও নিরবচ্ছিন্ন উদ্দীপনার সঙ্গে, আমাদের চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সকল যন্ত্রণার কারণ হচ্ছে বাহ্য জগতের সঙ্গে আমাদের সংযোগ। আমাদের সম্পত্তি, আমাদের আত্মীয়বর্গ, আমাদের ধনদৌলত এবং বাহ্য বস্তু যা কিছু সবেতেই রয়েছে আমাদের মমত্ববুদ্ধি। বর্হিজগতে কিছু ঘটলে আমরা উদ্বিগ্ন হই এবং ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি। বর্হিজগতের সঙ্গে এই সম্পর্কের মূলে হচ্ছে “আমি” ও “আমার” ভাব, যা হচ্ছে সকল বন্ধনের এবং কষ্টের মূল। অতএব এই বন্ধন—বর্হিজগতের সঙ্গে সংযোগ আমাদের কাটাতে হবে। বর্হিজগতে আসক্ত হলে আমরা বদ্ধ হই, এবং অনাসক্ত হলে মুক্ত হই। অতএব আমাদের বন্ধন ও মুক্তি দুই-ই আমাদের মনের উপর নির্ভর করে। যদি মন আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা না করে তবে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। ‘গুরু কৃষ্ণ বৈষ্ণব তিনের দয়া হল, একের দয়া বিনে সব ছারে খারে গেল’ অর্থাৎ মনের দয়া না হলে—মনের সহযোগিতা ও সাহায্য না পেলে আমাদের সকল প্রয়াস ব্যর্থ হয়ে যায়। অতএব মূলতঃ মনের ভূমিকাই প্রধান। শ্রীভগবান ইন্দ্রিয়গুলি বর্হিমুখী করে সৃষ্টি করেছেন; কিন্তু যাঁরা মুমুক্ষু, ইন্দ্রিয়গুলি প্রত্যাহৃত করে মন সহ তাদের অন্তর্মুখী করবেন—সত্যোপলব্ধির জন্য। মন ও ইন্দ্রিয়গুলি সংযত করা আমাদের অবশ্যই কর্তব্য। বাহ্যজগৎ সম্বন্ধে অনাসক্তি আসবেই না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের সিদ্ধান্ত পাকা হবে যে বহির্জগৎ নশ্বর ও অনিত্য। যখন আমাদের এ বিষয়ে দৃঢ়নিশ্চয়তা আসবে তখন বাইরের জগতের প্রতি আমাদের আসক্তি চলে যাবে। এই কারণে আমাদের বিচার ও নিত্যানিত্য-বস্তু-বিবেক অভ্যাস করা উচিত। দুঃখের কারণ এবং সংসারের স্বরূপ—আমাদের সঠিক ভাবে জানা চাই। আমরা যদি এভাবে বিচারপূর্বক কোনটি নিত্য ও কোনটি অনিত্য বের করে নিয়ে অনিত্য বর্জনপূর্বক নিত্যবস্তুকে গ্রহণ করতে চেষ্টা করি, তবেই এই বহির্জগতের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার আশা করতে পারি। শুধু ইহলোক নয় পরলোকে ভোগাকাঙ্ক্ষাও ত্যাগ করতে হবে। সাধারণতঃ আমরা পুণ্যার্জনের আশায় ত্যাগ, দান, বা পরোপকারের মাধ্যমে সৎকর্ম করে থাকি। সৎ কর্মার্জিত পুণ্যফলে স্বর্গলাভ ও তদনুযায়ী ভোগ হতে পারে, কিন্তু শাস্ত্র বলেন—এই ভোগও অস্থায়ী। এর সীমিত রেখা অতিক্রান্ত হলে পুণ্য ক্ষীণ হয়, এই জগতে প্রত্যাবর্তন করে আবার নূতন করে সুরু করতে হয়। অতএব বিচারশীল পুরুষের নিকট স্বর্গও এক বন্ধন এবং আধ্যাত্মিক অনুভূতির প্রতিবন্ধক। অতএব স্বর্গ সুখ ভোগের আশাও বর্জন করতে হবে। তখনই আমাদের জীবনে আসবে ভগবান লাভের আকাঙ্ক্ষা।
স্বামী বীরেশ্বরানন্দজীর ‘এ যুগে ধর্ম কেন’ থেকে

17th     May,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ