বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

মাতাজী

মহারানি তপস্বিনী মাতাজী গঙ্গাবাঈ-এর একটিমাত্র ফটো এখন পাওয়া যায়। পদ্মাসনে বসেছেন, মাথায় জটা, ফুল-হাতা সাদা জামা, গলা পর্যন্ত ঢাকা, বোতাম লাগানো, গলায় একটি অক্ষমালা, জপের মুদ্রায় হাতগুলি ন্যস্ত। চওড়া কপালের মাঝখানে একটি তিলক, সুদূরে প্রসারিত উজ্জ্বল দুটি চোখ। তাঁর এক ছাত্রী, জীবনতারা দেবী পাঁচ-ছয় বছর তাঁর সঙ্গে কাটিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, তাঁর পোশাক অন্যান্য মহিলাদের মতন ছিল না। তাই তিনি স্ত্রীলোক না পুরুষ তা বোঝা মুশকিল ছিল। তিনি শান্তিপুরী ধুতি বা বেনারসী যাই পরুন, সেটা ধুতির মতো করে পরতেন, সামনে কোঁচা থাকত পা-অবধি। ধুতির ওপর থাকত ফুলহাতা শার্ট। মাথায় জরি লাগানো বা ফুলের মালা জড়ানো সিল্কের পাগড়ি, হাতির দাঁতের খড়ম থাকত পায়ে। তাঁর মুখমণ্ডল, হাত ও পা কেবল দেখতে পাওয়া যেত।
তিনি প্রতিদিন সকাল চারটায় উঠে স্নান এবং জপ-পূজা করতেন নটা পর্যন্ত। স্কুল প্রাঙ্গনের একধারে গোয়ালে একটি ষাঁড় ও পাঁচ-ছটি দুধেলা গোরু থাকত। তাদের প্রত্যেকের নাম দিয়েছিলেন মাতাজী। পূজা সেরে তিনি গোয়ালে গিয়ে তাদের খোঁজ নিতেন এবং কখনও নিজের হাতে খাওয়াতেন।
তাঁর পোষা একটি হরিণী ও একটি কাকাতুয়া ছিল। হরিণটী ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াত, সিঁড়িতে উঠত, নামত। পাখিটি বারান্দায় একটা খাঁচায় ঝোলানো থাকত। তিনি তার নাম দিয়েছিলেন ‘হারিত’। নাম ধরে ডাকলেই সে মিষ্টি সুরে মাথা নেড়ে জবাব দিত। একজন নেপালি মহিলা তাঁর দেখাশোনা করত। তাঁর খাবার তৈরী করা, তাঁকে খাওয়ানো, কাপড়কাচা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সব কাজই করত। মাতাজী অসুস্থ হয়ে পড়লে সে তাঁর সেবা করত। কোনও পুরুষকে তাঁর সেবা করতে দেওয়া হত না।
মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত গরমে মাতাজী স্কুল বিল্ডিং-এর সামনে চওড়া বারান্দায় মাদুর বিছিয়ে সন্ধ্যা থেকে রাত্রি আটটা-নটা পর্যন্ত বসে থাকতেন। একটি কুপি তাঁর পাশে জ্বলত। এইসময় অনেক ভক্ত তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসতেন, সঙ্গে জুঁই ফুলের মালা আনতেন। তিনি সেটা তাঁর মাথার পাগড়িতে জড়িয়ে নিতেন, বাচ্চারা থাকলে তাদেরও দিতেন। কেউ মিষ্টি আনলে তিনি তা সবার মাঝে বিলিয়ে দিতেন। তিনি কোনও ছাত্রীকে মূল দেবনাগরী অক্ষরে যোগবাশীষ্ঠ রামায়ণ পড়তে বলতেন। পড়া শেষে সেটা নিজে ব্যাখ্যা করে সমবেত শ্রোতাদের বুঝিয়ে দিতেন।
বাচ্চাদের সঙ্গে, তিনি হিন্দিতে কথা বলতেন তারা সেটা বুঝতেও পারত। ছাত্রীদের কাছে তিনি ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা আবার স্নেহশীলা জননী। জীবনতারা দেবীর স্মৃতিচারণ থেকে আমরা মাতাজীর গুণাবলি সম্পর্কে এইসব জানতে পেরেছি। জীবনচণ্ডী ও জীবনতারা ছিলেন দুই বোন—মহাকালী পাঠশালার কাছেই তাঁদের বাড়ি ছিল। বিখ্যাত পণ্ডিত ও ভাষাবিদ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ছিলেন এঁদের ভাই। এঁদের বাবা ছিলেন গোঁড়া হিন্দু। তপস্বিনী মাতাজীর প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা ও উচ্চ ধারণা ছিল। মহাকালী পাঠশালায় তিনি বড়ো মেয়েকে শিক্ষার জন্য পাঠিয়েছিলেন। মাত্র আট বছরের মেয়েটি সুন্দরভাবে কৃষ্ণকর্ণামৃতের একটি শ্লোকের ব্যাখ্যা করেছিল।
সারদা মঠ প্রকাশিত ‘তপস্বিনী মাতাজী গঙ্গাবাঈ’ থেকে

27th     December,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ